ঢাকা, মঙ্গলবার, ২৮ মাঘ ১৪৩১, ১১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১১ শাবান ১৪৪৬

জাতীয়

ডুকরে কাঁদছে শান্তি কুঞ্জ...

মাহবুবুর রহমান মুন্না, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২৫১ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৭, ২০১৫
ডুকরে কাঁদছে শান্তি কুঞ্জ... ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

খুলনা: স্বজন ও প্রতিবেশীদের কান্নায় যেন প্রকৃতিও ডুকরে কেঁদে উঠছে। নিহতদের বাড়িতে ছুটে আসছেন চেনা-অচেনা শত শত মানুষ।

এমন মর্মান্তিক মৃত্যু কেউ মেনে নিতে পারছেন না। এ পরিস্থিতিতে কে দেবেন কাকে সান্তনা?

রোববার (২৭ সেপ্টেম্বর) সকালে খুলনা মহানগরীর জিন্নাহপাড়া হাজী আব্দুল মালেক স্কুল রোডের ৭১/৩ “শান্তি কুঞ্জে” একই পরিবারের ৬ জন নিহতের বাড়িতে সরেজমিনে গেলে এমন করুণ দৃশ্য দেখা যায়।

শনিবার (২৬ সেপ্টেম্বর) সকালে গোপালগঞ্জ সদরে মাইক্রোবাসের সঙ্গে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশার সংঘর্ষে একই পরিবারের ছয়জন ও অটোরিকশা চালকের মৃত্যু হয়। এতে আহত হয়েছেন আরও চারজন।

নিহতরা হলেন- শান্তি কুঞ্জের মালিক খোকন শিকদার (৪৫), তার মা কাতেবুন্নেসা (৭০), স্ত্রী চায়না বেগম (৩৫), মেয়ে চাঁদনী (৯), এ্যানি (১৬), ভাতিজা সাকিব সিকদার (২৮) ও অটোরিকশা চালক স্বপন সরদার (৩৫)।

নিহত খোকনের আরেক মেয়ে ইতি মণি (১৫) গুরুতর আহত অবস্থায় খুলনার গাজী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছে এবং বাকিদের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

নিহত খোকনের খালাতো ভাই নাজমুল রোববার (২৭ সেপ্টেম্বর) সকালে বিলাপ করে বাংলানিউজকে বলেন, খোকন সিকদার খুলনা থেকে মা, স্ত্রী-সন্তানসহ পরিবারের ৭ সদস্য নিয়ে ঈদের ছুটিতে গ্রামের বাড়ি গোপালগঞ্জের তেলিগাতি গ্রামে যাচ্ছিলেন। তারা খুলনা থেকে বাসে গোপালগঞ্জের বেদগ্রাম বাসস্ট্যান্ডে নামেন। সেখান থেকে একটি অটোরিকশা ভাড়া করে বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা হন।

পথে শিবপুরে বিপরীত দিক থেকে আসা জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের স্টিকার সম্বলিত একটি মাইক্রোবাসের সঙ্গে অটোরিকশাটির মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। এতে আমার খালাসহ ৬ জনের মৃত্যু হয় এবং খালাতো ভাইয়ের মেয়ে ইতি মণি (১৫) গুরুতর আহতাবস্থায় চিকিৎসাধীন আছে।
তিনি আরো জানান, তারা শুনেছেন মাইক্রোবাসটির চালক তার ছেলেকে ড্রাইভিং শিখাচ্ছিলেন।

নিহত খোকন শিকদারের ভাগ্নে রায়হান মুন্না বাকরুদ্ধ অবস্থায় বাংলানিউজকে বলেন, ছোটবেলায় মা মারা যাবার পর নানী, মামা-মামীর কাছে বড় হয়েছি। মায়ের সকল আবদার পূরণ করেছি তাদের কাছ থেকে। আজ তারা এভাবে চলে যাবে, ভাবতেও পারিনি। পরিবারের ৭ জনের মধ্যে ৬ জন মারা যাওয়ায় ও ১ জন আহত অবস্থায় থাকায় এ বাড়িতে এখন কান্নারও লোক নেই।

তিনি ঘাতক প্রাইভেট কার চালকের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করেন।

মুন্না বলেন, এক সাথে এত লাশ, এত শোক কিভাবে সইবো। কিভাবে দিবো মাটি। শান্তি কুঞ্জে এখন থাকার আর কেউ নেই।

তার আরেক মামা সৌদি প্রবাসী হাসান মৃত্যুর খবর শুনে দেশের আসার পর দাফন সম্পন্ন হবে বলে জানান তিনি। মরদেহগুলো এখন মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের হিমাগারে রয়েছে।

নিহত খোকন শিকদারের প্রবাসে থাকা ভাইয়ের স্ত্রী মমতাজ অনেকটা সজ্ঞাহীন অবস্থায় কান্না জড়িত কন্ঠে বলেন, আমাদের আর কেউ রইল না। মা মমতাজের কান্না দেখে অবুঝ শিশু তামিমও (৭) যেন বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েছে। বাড়িতে এতো মানুষ দেখে বার বার প্রশ্ন করছে। দাদি-চাচা-চাচীরা আসছে না কেনো? কিন্তু কেউই যেনো তার প্রশ্নের উত্তর দিতে পারছে না।

স্বজনহারা এসব মানুষের একটাই বিলাপ, আর কোন মায়ের বুক যেন এভাবে খালি না হয়।

বাংলাদেশ সময়ঃ ১২৫১ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৭, ২০১৫
এমআরএম/জেডএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।