ঢাকা, মঙ্গলবার, ২৮ মাঘ ১৪৩১, ১১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১১ শাবান ১৪৪৬

জাতীয়

মহাজনের চাপে নিষিদ্ধ সময়েও ইলিশ শিকার

সাজ্জাদুর রহমান, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫০৪ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৭, ২০১৫
মহাজনের চাপে নিষিদ্ধ সময়েও ইলিশ শিকার ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

লক্ষ্মীপুর: প্রজনন মৌসুমে ইলিশ শিকার, ক্রয়-বিক্রয়, সংরক্ষণ, পরিবহন, বাজারজাতকরণ ও মজুদ নিষিদ্ধ। তবুও অসাধু দাদন ব্যবসায়ীদের চাপে বাধ্য হয়ে লক্ষ্মীপুরের মেঘনায় মাছ শিকারে যাচ্ছে জেলেরা।

 
 
স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাসহ স্থানীয় সংবাদকর্মীরা বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। সরেজমিনেও এ তথ্যের সত্যতা পাওয়া গেছে।
 
অনুসন্ধানে জানা যায়, রামগতি ও কমলনগরে দাদন ব্যবসায়ী ও মহাজনদের চাপে পড়ে জেলেরা ইলিশ শিকারে নদীতে যাচ্ছে। শিকার হওয়া ডিমওয়ালা ইলিশ ঘাটে না এনে গোপনে বিক্রি করা হচ্ছে। অসাধু ব্যবসায়ী ও কিছু স্থানীয় লোকজন সস্তায় ইলিশ কিনে লবণ দিয়ে তা সংরক্ষণ করছে।
  
নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন স্থানীয় বাসিন্দা জানান, চিহ্নিত দাদন ব্যবসায়ীরা জেলেদের জোর করে মাছ শিকারে বাধ্য করছে। যে কারণে নদীতে মা ইলিশ নিধন হয়। এ পরিস্থিতিতে দাদন ব্যবসায়ী- মহাজনদের নিয়ন্ত্রণ করা না গেলে মা ইলিশ রক্ষা করা যাবে না। এতে ইলিশ রক্ষা অভিযান বিফলে যাওয়ার আশঙ্কা করছেন তারা।
 
কমলনগরের ফলকন লুধুয়া ও জগবন্ধু এলাকার জেলেরা জানান, এবার নদীতে ইলিশ ধরা পড়েনি। যে কারণে ঋণের বোঝা মাথার ওপরে। এর সঙ্গে রয়েছে মহাজনদের চাপ। উপায় না পেয়ে নদীতে মাছ শিকারে যেতে হচ্ছে।
 
কমলনগরের ফলকন ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান আশরাফ উদ্দিন বাংলানিউজকে জানান, দরিদ্র জেলেরা দাদন ব্যবসায়ী-মহাজনদের কাছে জিম্মি। এ কারণে তারা আইন ভেঙে মাছ ধরতে নদীতে যাচ্ছে। মা ইলিশ রক্ষার অভিযানের প্রথম দিন থেকেই কিছু জেলে বাধ্য হয়ে মাছ ধরছে।
  
ভ্রাম্যমাণ আদালতের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও সহকারী কমিশনার (ভূমি) রবিউল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, শনিবার (২৬ সেপ্টেম্বর) রাতে নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে জেলেরা রামগতির মেঘনায় মা ইলিশ শিকার করছিলেন। এ সময় আট জেলেকে আটক করে প্রত্যেককে এক বছর করে কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। ঘটনাস্থল থেকে জব্দ করা জাল আগুনে পুড়িয়ে ধ্বংস করা হয়েছে।
 
কমলনগর কোস্টগার্ড ক্যাম্পের কন্টিনজেন্ট কমান্ডার নয়ন বড়ুয়া বলেন, শুক্রবার রাতে চুরি করে ইলিশ ধরার সময় ২ হাজার বর্গমিটার কারেন্ট জাল জব্দ করা হয়। জেলেরা পালিয়ে যাওয়ায় তাদের আটক করা সম্ভব হয়নি। পরে, জাল পুড়িয়ে ফেলা হয়।  
 
তিনি আরো বলেন, অবিরাম কাজ করছি। মা ইলিশ রক্ষায় আমাদের চেষ্টা অব্যাহত থাকবে।
 
জেলা মৎস্য কর্মকর্তা এস এম মহিব উল্লাহ বাংলানিউজকে বলেন, ইলিশের প্রজনন সময়ে মাছ আহরণ, পরিবহন, মজুদ, বাজারজাতকরণ ও ক্রয়-বিক্রয় নিষিদ্ধ করা হয়েছে। নিষেধাজ্ঞা অমান্য করলে কমপক্ষে এক বছর থেকে সর্বোচ্চ দুই বছরের সশ্রম কারাদণ্ড, পাঁচ হাজার টাকা পর্যন্ত জরিমানা অথবা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত করার বিধান রয়েছে।
 
মৎস্য সম্পদ উন্নয়ন ও সংরক্ষণ বিষয়ক জেলা টাস্কফোর্স কমিটির সভাপতি ও জেলা প্রশাসক জিল্লুর রহমান চৌধুরী বলেন, নিষিদ্ধ সময়ে আইন ভঙ্গ করার চেষ্টা করলে তা কঠোরভাবে মোকাবেলা করা হবে। এ ব্যাপারে কোনো ধরনের তদবির শোনা হবে না। জাতীয় সম্পদ ইলিশ রক্ষায় সবার সহযোগিতা চান জেলা প্রশাসক।
 
২৫ সেপ্টেম্বর থেকে ০৯ অক্টোবর ১৫ দিন ইলিশের প্রজনন মৌসুম। এ সময় প্রতিবছর লক্ষ্মীপুরের রামগতি থেকে চাঁদপুরের ষাটনল পর্যন্ত মেঘনা নদীর প্রায় একশ’ কিলোমিটার এলাকায় মাছধরা নিষিদ্ধ থাকে। ডিমওয়ালা ইলিশ সংরক্ষণের লক্ষ্যে সরকার এ নিষেধাজ্ঞা জারি করে। এ সময় ইলিশ ক্রয়-বিক্রয়, সংরক্ষণ, পরিবহন, বাজারজাতকরণ ও মজুদ নিষিদ্ধ।  
 
বাংলাদেশ সময়: ১৫০৪ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৭, ২০১৫   
এমজেড/জেডএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।