ফেনী: মেয়েকে মেডিকেলে পড়াবেন। সে অনেক বড় ডাক্তার হবে।
একাদশ শ্রেণিতে পড়ুয়া মেয়ে নুসরাতকে নিয়ে এমনই স্বপ্ন দেখতেন ফেনী পাইলট ও খাগড়াছড়ি বালিকা উচ্চ বিধ্যালয়ের সাবেক সহকারী শিক্ষক আবুল কাশেম।
কিন্তু আবুল কাশেমের স্বপ্নরা থাকলেও নেই তিনি নিজেই। সৌদি আরবের মিনায় পদদলিত হওয়ার ঘটনায় ৪ দিন নিখোঁজ থাকার পর তার মৃত্যুর সংবাদ নিশ্চিত করা হয়।
এদিকে, তার তিন সন্তান ও স্ত্রীর একটাই চাওয়া একটিবারের জন্য হলেও তারা আবুল কাশেমের মুখটা দেখতে চান।
আবুল কাশেম ফেনীর দাগনভূঁঞা এলাকার রাজাপুর ইউনিয়নের ভবানীপুর গ্রামের বাসিন্দা। শহরের ডাক্তার পাড়ার ভাড়া বাসায় এক মেয়ে, দুই ছেলে ও স্ত্রীকে নিয়ে থাকতেন তিনি।
![](files/September2015/September28/kasam2_841965554.jpg)
এবার ফেনীর আল-ফালাহ ট্রাভেলসের মাধ্যমে হজ করতে যান। মিনার ঘটনায় নিখোঁজ থাকার পর রোববার (২৭ সেপ্টেম্বর) রাতে তার মৃত্যুর বিষয়টি পরিবারকে জানায় আল-ফালাহ ট্রাভেলসের মুয়াল্লিম আবদুল কাদের।
সোমবার (২৮ সেপ্টেম্বর) সরেজমিনে ফেনী শহরের আবুল কাশেমের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, শোকে পাথর হয়ে গেছেন স্ত্রী ও সন্তানেরা।
বড় মেয়ে নুসরাত কান্নাজড়িত কণ্ঠে বাংলানিউজকে জানায়, বাবা বলতেন, ‘ভালো করে পড়, তুই আমার অবলম্বন, আমার সংসার যে তোকেই দেখতে হবে। ভাইদের পড়াশোনা করিয়ে মানুষ করবি তুই। সে জন্য তোকে মেডিকেলে পড়তে হবে, অনেক বড় ডাক্তার হবি। ’
দশম শ্রেণিতে পড়ুয়া ছেলে তানিম বলে, ‘বাবা আমাদের নিয়ে অনেক স্বপ্ন দেখতেন। আজ বাবা নেই। আমাদের ছেড়ে চলে গেছে না ফেরার দেশে। ’
কান্নামিশ্রিত কণ্ঠে তানিমের প্রশ্ন, আমাদের স্বপ্নগুলো পূরণ করবে কে?
পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ুয়া ছোট ছেলে ফাহিম বাবার শোকে নির্বাক। তার কেবল একটাই চাওয়া, একবার বাবাকে দেখতে চায় সে।
আবুল কাশেমের স্ত্রী হাসিনা আক্তার জানান, ঘটনার আগের দিনও স্বামীর সঙ্গে তার কথা হয়। তার আয়েই চলতো সংসার ও সন্তানদের পড়াশোনা। কিন্তু এ ঘটনায় এখন তারা দিশেহারা।
এদিকে, হজ করতে যাওয়া ফেনীর আরেক বাসিন্দা নুরুল হুদা দুলালের এখনো কোনো খোঁজ মেলেনি।
এ নিয়ে চরম উৎকণ্ঠায় রয়েছে তার পরিবার। বাবার চিন্তায় অস্থির শহরের খাজুরিয়া এলাকার নীরব, বিবিড় ও নিতুল।
অপরদিকে, মিনায় পদদলিত হয়ে মারা যাওয়া সোনাগাজীর তাহেরা বেগমের বাড়িতেও চলছে শোকের মাতম।
তাহেরা বেগমের ছোট ছেলে সাইফুদ্দিন আহমেদ সুমন বাংলানিউজকে জানান, ওই ঘটনায় তার মা ও মামা
নুর নবী মিন্টুর মৃত্যু হয়েছে। মা ও মামাকে হারিয়ে পুরো পরিবার শোকাহত।
সৌদি আরব থেকে তার মেঝোভাই ইমাম উদ্দিন ফোনে মা ও মামার মৃত্যুর খবর তাদের জানান। গত ১ সেপ্টেম্বর তারা হজ করতে সৌদি আরব যান।
পদদলিত হয়ে ফেনীর নিহত যারা
মিনায় শয়তান স্তম্ভে পাথর নিক্ষেপের সময় হুড়োহুড়িতে ফেনীর মোট ৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। তারা হলেন, সোনাগাজী উপজেলার বগাদানা ইউনিয়নের কলিম উদ্দিন মুন্সি বাড়ীর নুর নবী মিন্টু (৬৯), তার বোন একই উপজেলার উপজেলার মতিগঞ্জ ইউনিয়নের শুলাখালি গ্রামের তাহেরা বেগম (৭৩), পৌরসভার সুজাপুর গ্রামের বেলায়েত হোসেনের স্ত্রী নুর জাহান, পরশুরাম উপজেলার চিথলিয়া ইউনিয়নের পাগলিরকুল গ্রামের খালেদা আক্তার, ফেনী সদরের বালুয়া চৌমুহনী এলাকার জয়নব বিবি (৩৪), দাগনভূঁঞা উপজেলার ভবানিপুর গ্রামের সাদু মিয়ার ছেলে আবুল কাশেম
ফেনীর আহত যারা
মিনার ঘটনায় ফেনীর আহতদের মধ্যে রয়েছেন, সোনাগাজী পৌরসভার সুজাপুর গ্রামের বেলায়েত হোসেন ও একই গ্রামের আমিনুল হকের স্ত্রী ছকিনা খাতুন। তাদের মুমূর্ষু অবস্থায় বাদশা ফাহাদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।
এছাড়া পরশুরাম উপজেলার চিথলিয়া ইউনিয়নের পাগলিরকুল গ্রামের বাসিন্দা ফেনী সেটেলমেন্ট অফিসের কর্মচারী জয়লাল আবেদীন (৫০) গুরুতর আহত হয়ে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
ফেনীর নিখোঁজ যারা
সোনাগাজী পৌরসভার চরগনেশ গ্রামের মৃত শেখ এজহারুল হকের স্ত্রী বিবি ফাতেমা (৬৫), শুয়াখালী এলাকার আমিনুল ইসলাম ও ফেনী সদর উপজেলার লেমুয়া ইউনিয়ানের মরহুম ওবাদুল হকের ছেলে জসিম উদ্দিন।
বাংলাদেশ সময়: ১৭১৮ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৮, ২০১৫
এসআর
** ফেনীর নিখোঁজ আবুল কাশেমের মৃত্যু নিশ্চিত