ঢাকা, শনিবার, ২৫ মাঘ ১৪৩১, ০৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৮ শাবান ১৪৪৬

জাতীয়

জমির অভাবে হচ্ছে না কক্সবাজার ফায়ার স্টেশন

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৯৩৫ ঘণ্টা, অক্টোবর ৩, ২০১৫
জমির অভাবে হচ্ছে না কক্সবাজার ফায়ার স্টেশন

কক্সবাজার: দরকার মাত্র দুই একর জমি। যেখানে হবে আধুনিক প্রযুক্তি ও সুবিধা সম্বলিত ফায়ার সার্ভিস স্টেশন।

থাকবে অগ্নিনির্বাপণ ও উদ্ধারকাজের সর্বোত্তম সুবিধা।

কিন্তু গত পাঁচ বছর ধরে নতুন করে ফায়ার স্টেশন করার মতো কোনো জায়গাই খুঁজে পাচ্ছে না কক্সবাজার জেলা প্রশাসন।

পাঁচ বছর ধরে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের পক্ষ থেকে কক্সবাজার জেলা প্রশাসন বরাবর কয়েকবার আবেদন করা হয়েছে। প্রতিবারেই জবাব মিলেছে, কক্সবাজারে খাস জমি নেই।

কক্সবাজার ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের উপ সহকারী পরিচালক আব্দুল মজিদ  বাংলানিউজকে জানান, স্বাধীনতা লাভের আগে ১৯৬৪ সালে নির্মিত হয় কক্সবাজার ফায়ার সার্ভিসের বর্তমান স্টেশনটি।

কিন্তু বর্তমানে ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে ভবনটি। নানা স্থানে দেখা দিয়েছে ফাটল। পলেস্তারা খসে পড়েছে ছাদের বিভিন্ন জায়গায়। রয়েছে লোকবল ও প্রয়োজনীয় সরঞ্জামের সংকট। ফলে দ্বিতীয় ক্যাটাগরির এই স্টেশনের মাধ্যমে পর্যটন শহরকে সেবা দেওয়া সম্ভব নয়।

বিষয়টি উপলদ্ধি করে পাঁচ বছর আগে থেকেই নতুন করে বড় পরিসরে ফায়ার সার্ভিস স্টেশন তৈরির উদ্যোগ নেওয়া হয়। কিন্তু এজন্য প্রয়োজনীয় দুই একর জমির ব্যবস্থা করা যায়নি গত পাঁচ বছরেও।

এখনো জমির জন্য নানাভাবে চেষ্টা করা হচ্ছে। জমি বরাদ্দ পেলেই দ্রুত গতিতে আধুনিক ফায়ার স্টেশনের নির্মাণকাজ শুরু হবে বলে জানান তিনি।

কক্সবাজার সাংবাদিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক জাহেদ সরওয়ার সোহেল বাংলানিউজকে জানান, বিগত ১০ বছরে সমুদ্রে গোসল করতে নেমে প্রাণহাণি ঘটেছে শতাধিক লোকের। আর গত পাঁচ বছরে পাহাড় ধসে মৃত্যুর সংখ্যাও অর্ধশতাধিক।

এছাড়া প্রায়ই অগ্নিকাণ্ডসহ নানা দুর্ঘটনা ঘটছে। এতে বছর বছর প্রাণহানি ও শত কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হচ্ছে। কাজেই এখানে আধুনিক ফায়ার স্টেশন নির্মিত হলে মানুষ আরো ভালো সেবা পাবেন ও দুর্ঘটনার ক্ষয়ক্ষতি কমে আসবে বলে তিনি মনে করেন।

এ বিষয়ে সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) এর কক্সবাজার জেলা কমিটির সভাপতি প্রফেসর আব্দুল বারী জানান, পর্যটন শহর কক্সবাজারে নাগরিক সুবিধার অনেক কিছুই নেই। এরমধ্যে আধুনিক ফায়ার স্টেশন অন্যতম। এখানে আধুনিক ফায়ার সার্ভিস স্টেশন নির্মাণ করাটা জরুরি।

কক্সবাজার দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক অজিত দাশ বলেন, পর্যটন এ শহরে রয়েছে চার শতাধিক হোটেল-মোটেল। ভবন রয়েছে ছয় শতাধিক। নির্মিত হচ্ছে আর্ন্তজাতিক বিমানবন্দর ও স্টেডিয়াম। গড়ে উঠছে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান। সবকিছু মিলিয়ে এই শহরের দুর্ঘটনা ও ক্ষয়ক্ষতি কমাতে দরকার আধুনিক ফায়ার স্টেশন।

যোগাযোগ করা হলে কক্সবাজার সদর উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) মাজাহারুল ইসলাম জানান, কক্সবাজারে খাস জমি নেই। যা ছিল সবই বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এখনো জমি বরাদ্দের জন্য ৯২টি আবেদন ভূমি অফিসে জমা রয়েছে। তারপরও ফায়ার সার্ভিসের জমির জন্য চেষ্টা চলছে।

তবে কক্সবাজার পৌরসভার ৪নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর সিরাজুল হকের দাবি, কক্সবাজার শহরে প্রায় কয়েক হাজার একর খাস জমি রয়েছে। এছাড়াও রয়েছে গণপূর্ত বিভাগের জমি। জেলা প্রশাসন চাইলেই সেখান থেকে দুই একর জমি বরাদ্দ ফায়ার সার্ভিসের জন্য বরাদ্দ দিতে পারে।

কাউন্সিলর সিরাজুল হকের সঙ্গে সহমত পোষণ করে সেভ দ্য নেচার অব বাংলাদেশের পরিচালক মোয়াজ্জেম হোসাইন জানান, শহরের বাঁকখালী নদীর তীরে জেগে উঠা চর বেদখল হয়ে যাচ্ছে। সেখান থেকে দুই একর জমি ফায়ার সার্ভিসকে দিলে উপকৃত হবে কক্সবাজারবাসী।

জানতে চাইলে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের চট্টগ্রাম বিভাগের উপ পরিচালক সমরেন্দ্র নাথ বিশ্বাস জানান, তাদের পক্ষ থেকে বারবার জমি বরাদ্দ পাওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে। কিন্তু বরাদ্দ পাওয়া যাচ্ছে না।

এ বিষয়ে কক্সবাজারের রেভিনিউ ডেপুটি কালেকক্টর (ভারপ্রাপ্ত) এম এম মাহামুদুর রহমান জানান, ফায়ার সার্ভিসের জমির জন্য জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সর্ব্বোচ চেষ্টা করা হয়েছে। কিন্তু উপযুক্ত জমির খোঁজ পাওয়া যায়নি।

এদিকে, দীর্ঘদিনেও জমি না পাওয়াকে জেলা প্রশাসনের গাফিলতি মনে করছেন ফায়ার সার্ভিসের প্রধান।

এ ব্যাপারে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের মহাপরিচালক বিগ্রেডিয়ার জেনারেল আলী আহমদ খান বলেন, জেলা প্রশাসনের সদিচ্ছার অভাবেই পাঁচ বছর ধরে থমকে রয়েছে আধুনিক ফায়ার স্টেশনের নির্মাণকাজ। কক্সবাজারে সবাই জমি বরাদ্দ পায়। কিন্তু ফায়ার সার্ভিসের জন্য দুই একর জমি মেলে না। এটি বিশ্বাস করতে হচ্ছে।

তিনি জানান, ২০১৪ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি থেকে জমি বরাদ্দ পাওয়ার জন্য ফায়ার সার্ভিসের মহাপরিচালকের অধিদপ্তর থেকে যোগাযোগ করা হচ্ছে। কিন্তু এক টুকরা জমি বরাদ্দ দেওয়া হচ্ছে না। এ পর্যন্ত কমপক্ষে কক্সবাজার জেলা প্রশাসক বরাবর ২০ বার আবেদন করা হয়েছে। কিন্তু কাজ হচ্ছে না।
 
এসব বিষয়ে জানতে চাইলে কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মো. আলী হোসেন বলেন, জমি চাইলেই বরাদ্দ মেলেনা। যে প্রতিষ্ঠানের জমি দরকার সে প্রতিষ্ঠান খোঁজখবর নিয়ে জমি বাছাই করে যথাযথ উপায়ে জেলা প্রশাসন বরাবর আবেদন করবে। কিন্তু ‍তা করেনি ফায়ার সার্ভিস কর্তৃপক্ষ। তারপরও জেলা প্রশাসন সর্ব্বোচ চেষ্টা করছে এই সেবা সংস্থাটিকে দুই একর জমি বরাদ্দ দিতে।

বাংলাদেশ সময়: ঘণ্টা, অক্টোবর ০২, ২০১৫
এসআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।