ঢাকা, শনিবার, ২৫ মাঘ ১৪৩১, ০৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৮ শাবান ১৪৪৬

জাতীয়

‘বাবু জিজ্ঞেস করবে, ৮টার ট্রেন ক’টায় ছাড়ে’

রহমত উল্যাহ, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৬৪৭ ঘণ্টা, অক্টোবর ৪, ২০১৫
‘বাবু জিজ্ঞেস করবে, ৮টার ট্রেন ক’টায় ছাড়ে’ ছবি: দেলোয়ার হোসেন বাদল / বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

ঢাকা: ‘রাত আটটার ট্রেন, দুইটাতেও আসেনি। সন্ধ্যা সাতটা থেকে বসে আছি।

আমরা কষ্ট সইতে পারি, বাবু তো পারবে না। কষ্টের জন্য বাবু বড় হয়ে হয়তো জিজ্ঞেস করবে, ‘৮টার ট্রেন ক’টায় ছাড়ে মা!’

শনিবার (৩ অক্টোবর) রাত ২টায় রাজধানীর বিমানবন্দর রেলওয়ে স্টেশনে দিনাজপুরগামী দ্রুতযান এক্সপ্রেসের জন্য অপেক্ষারত যাত্রী আকলিমা অনেকটা কষ্ট লুকিয়ে রসিকতার ছলে এসব কথা বলেন।

আকলিমার স্বামী সুরুজ আলী উত্তরার একটি কারখানায় কাজ করেন। ঈদে বাচ্চাকে নিয়ে বাড়ি ফিরতে কষ্ট হবে বিধায় যাননি। ঈদের এক সপ্তাহ পর এসেও ভোগান্তির যেন শেষ নেই।

সাথে শ্বাশুড়ি কমলা বেগম, দু’ননদ ও তাদের দু’ শিশু সন্তান। দিনাজপুরগামী দ্রুতযান এক্সপ্রেস কমলাপুর রেল স্টেশন থেকে ৭ টা ৪০ মিনিটে ছেড়ে বিমানবন্দর স্টেশনে ৮ টায় আসার কথা। কিন্তু রাত ২টা পেরিয়ে গেলেও তার দেখা নেই। তাই আকলিমার মতো শত শত মানুষ গভীর রাত পর্যন্ত স্টেশনে অপেক্ষা করছেন। সবার একটাই ক্ষোভ, ঈদের এতদিন পরও কেন শিডিউল বিপর্যয়!

আকলিমা বলেন, ‘সন্ধ্যা ৬টায় বাসা থেকে রওয়ানা হয়ে ৭টায় স্টেশনে। কাউন্টার থেকে টিকেট দেয়ার সময় বলা হয়েছে ৮টায় আসবে। এখন রাত ২টা, কোন খবর নেই। স্টেশনের আবহাওয়া ভালো না। তাই বাবু অসুস্থ হয়ে পড়ছে। আমরা তো সারাজীবন ট্রেনে ভোগান্তি পার করেছি, আমাদের বাচ্চারাও এ ভোগান্তি থেকে রক্ষা পাবে না‘, প্রশ্ন আকলিমার।

শ্বাশুড়ি কমলা বেগম অস্বস্তিতে পড়েছেন ৩ নাতি-নাতনি নিয়ে। শিশুদের অবস্থা দেখে অনেকটা অসহায়ত্ব কণ্ঠে বললেন, ‘কার কাছে যাব, কাকে জিজ্ঞেস করব কখন ট্রেন আসবে। ’

তিনি বলেন, ‘কাউন্টার বন্ধ করে লোকজন চলে গেছে। ঈদের এক সপ্তাহ পরও ভোগান্তি, ট্রেন সময় মতো আসছে না, এটা কি মন্ত্রী দেখে না। মন্ত্রী ঘুমায়, আমরা ভোগান্তি পোহাই। ’

আবদুল্লাহপুর থেকে দিনাজপুর যেতে একইভাবে সন্ধ্যায় সুজন এসেছেন মা, বড় বোন ও ভাগনিকে নিয়ে। ট্রেন না আসায় ঘুমিয়ে পড়েছেন মা, বোন ও ভাগনি। আর পাহারা দিচ্ছেন সুজন।

ঈদে ভোগান্তির ভয়ে যাইনি। মা ও ভাগনি অসুস্থ। রাত ৮ টায় ট্রেন আসার কথা, ২টায় আসেনি। সাধারণ মানুষের ভোগান্তি শেষ হবে কবে, প্রশ্ন সুজনের।

আকলিমা আর সুজনের মতো দিনাজপুরগামী অনেক যাত্রী সন্ধ্যা থেকে অপেক্ষা করলেও ট্রেন আসেনি। কখন আসবে, আসবে কিনা তারও কোন ঠিক নেই।

ঈদের প্রায় এক সপ্তাহ পরও ঘরমুখো যাত্রীর সংখ্যা ছিল বেশি। তবে সময় মত ট্রেন না আসায় ঈদের চেয়ে আরও বেশি ভোগান্তির মুখে পড়েছেন যাত্রীরা।

অপরদিকে; ঢাকামুখী যাত্রীরাও ৫-৬ ঘণ্টা বিলম্বে ট্রেন ছাড়াসহ লোকাল ট্রেনের চেয়েও ধীর গতিতে ট্রেন এসেছে বলে অভিযোগ করেছেন।

পাবনা থেকে ঈদ স্পেশাল-৩ ট্রেনে রাত দুইটায় বিমানবন্দর স্টেশনে ২ বোন ও ভাগনিকে নিয়ে পৌঁছান মো. সফিকুল ইসলাম। বিকেল সোয়া ৩ টায় ট্রেন ছাড়ার কথা থাকলেও ছেড়েছে ৬টায়।

সফিকুল বলেন, রাত দুইটায় স্টেশনে। পথে লোকাল ট্রেনকেও সাইট দিয়েছে। নামে স্পেশাল হলেও টোকাই, ছিনতাইকারী আর মাদকসেবীদের আড্ডাখানা।

খুলনা থেকে ঈদ স্পেশাল ট্রেনে বোন ও মামাকে নিয়ে এসেছেন পিয়াল। সকাল সাড়ে ১০টার ট্রেন ছেড়েছে দুপুর ১টায়। পৌঁছেছে রাত ২টায়।

পিয়াল বলেন, ট্রেনে সিট খালি থাকলেও লোকাল ট্রেনও এত ধীর গতিতে চলে না। ট্রেনের মধ্যে দুর্গন্ধ, ময়লা, ছারপোকা, টোকাই আর মাদকসেবী। যাত্রীরা অতিষ্ঠ।

বাংলাদেশ সময়: ০৬৪৬ ঘণ্টা, অক্টোবর ৪, ২০১৫
আরইউ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।