ঢাকা, শনিবার, ২৫ মাঘ ১৪৩১, ০৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৮ শাবান ১৪৪৬

জাতীয়

মানবতাবিরোধী অপরাধ

কিশোরগঞ্জের পাঁচজনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের আদেশ ১২ অক্টোবর

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩০৭ ঘণ্টা, অক্টোবর ৪, ২০১৫
কিশোরগঞ্জের পাঁচজনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের আদেশ ১২ অক্টোবর

ঢাকা: একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় কিশোরগঞ্জের করিমগঞ্জের পাঁচজনের বিরুদ্ধে অভিযোগ (চার্জ) গঠনের বিষয়ে আদেশের দিন আগামী ১২ আক্টোবর নির্ধারণ করেছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১।
 
রোববার (০৪ অক্টোবর) অভিযোগ গঠনের শুনানি শেষে চেয়ারম্যান বিচারপতি মোহাম্মাদ আনোয়ার উল হকের নেতৃত্বে তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল এ দিন ধার্য করেন।


 
একই মামলার ওই পাঁচ আসামির মধ্যে গ্রেফতার হয়েছেন অ্যাডভোকেট শামসুদ্দিন আহমেদ। পলাতক চারজন হচ্ছেন শামসুদ্দিনের সহোদর সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত ক্যাপ্টেন মো. নাসিরউদ্দিন আহমেদ এবং রাজাকার কমান্ডার গাজী আব্দুল মান্নান, হাফিজ উদ্দিন ও আজহারুল ইসলাম।

আসামি অ্যাডভোকেট শামসুদ্দিন আহমেদকে ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হয়। আইনজীবী এম আতিকুর রহমান তার পক্ষে আইনি লড়াইয়ে অসম্মতি জানালে আব্দুশ শুকুর খানকে রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী হিসেবে নিয়োগ দেন ট্রাইব্যুনাল। আব্দুশ শুকুর খান এ মামলায় পলাতক অপর চার আসামিরও রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী হিসেবে কাজ করছেন।  
 
নিয়োগ পেয়ে আব্দুশ শুকুর খান ট্রাইব্যুনালের কাছে আসামি শামসুদ্দিনকে অভিযোগ থেকে অব্যাহতি দেওয়ার আবেদন জানান।

তিনি বলেন, প্রসিকিউশনের আনা সাতটি অভিযোগের মধ্যে একটি অভিযোগে বলা হয়েছে, অভিযুক্ত শামসুদ্দিন ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধকালে জনৈক পরেশকে গুলি করে হত্যা করেন। কিন্তু প্রসিকিউশনের নথি অনুযায়ী আসামি শামসুদ্দিনের স্কুল সনদে তার জন্ম সাল ১৯৫৬ সালের ১২ জুলাই উল্লেখ রয়েছে। আবার জাতীয় পরিচয়পত্র অনুযায়ী তার জন্ম ১৯৫৮ সালের ১ ডিসেম্বর।
 
শুনানিতে শুকুর দাবি করেন, জাতীয় পরিচয়পত্রে উল্লেখিত জন্ম সালই তার মক্কেলের প্রকৃত জন্ম সাল। সে অনুযায়ী ১৯৭১ সালে আসামি শামসুদ্দিনের বয়স হয় ১২ বছর ৯ মাস। এ বয়সে কাউকে গুলি করে হত্যা করা অসম্ভব বলে দাবি করেন তিনি।
 
এ সময় প্রসিকিউটর সুলতান মাহমুদ সীমন ট্রাইব্যুনালের সামনে আসামি শামসুদ্দিনের স্কুল সনদপত্র তুলে বলেন, ১৯৭১ সালে এর চেয়েও কম বয়সে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছেন অনেকে। ফলে ওই বয়সে কাউকে গুলি করে হত্যা করা অস্বাভাবিক না।
  
এর আগে গত ২১ সেপ্টেম্বর রাষ্ট্রপক্ষে অভিযোগ গঠনের পক্ষে শুনানি করেন প্রসিকিউটর সুলতান মাহমুদ সীমন।

গত ১৩ মে পাঁচজনের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ (ফরমাল চার্জ) আমলে নেন ট্রাইব্যুনাল। তাদের বিরুদ্ধে হত্যা, গণহত্যা, আটক, লুণ্ঠন, নির্যাতনের সাতটি মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ আনা হয়েছে আনুষ্ঠানিক অভিযোগে।

তারা একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধকালে কিশোরগঞ্জ জেলার করিমগঞ্জ থানার বিদ্যানগর, আয়লা, ফতেরগুপ বিল, পীরাতন বিল ও আশেপাশের বিস্তীর্ণ অঞ্চলে এসব মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করেন বলে অভিযোগ করা হয়েছে।

তাদের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দেবেন রাষ্ট্রপক্ষের মোট ৪০ জন সাক্ষী।

গত ১৫ এপ্রিল এ মামলায় তদন্তের চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন প্রসিকিউটর সুলতান মাহমুদ সীমন। ১৩ এপ্রিল এ প্রতিবেদন প্রসিকিউশনে জমা দেন তদন্ত সংস্থা।

কিশোরগঞ্জের করিমগঞ্জ থানার করিমগঞ্জ মধ্যপাড়া (দুলিপাড়া) গ্রামের মো. নাসিরউদ্দিন ও মো. শামসুদ্দিনের বাবার নাম মৃত আব্দুর রাজ্জাক মুন্সি ও মায়ের নাম মৃত লুৎফুন্নাহার লতা। এ দু’জনের মধ্যে বড় ভাই নাসিরউদ্দিন সেনাবাহিনীর ইস্টবেঙ্গল রেজিমেন্টের ক্যাপ্টেন ছিলেন। তিনি ১৯৯৪ সালের ৫ জুলাই তিনি সেনাবাহিনীর কমিশন লাভ করেন। ২০০২ সালের ১৩ জানুয়ারি তিনি অকালীন বাধ্যতামূলক অবসরে যান। অন্যদিকে ছোট ভাই শামসুদ্দিন কিশোরগঞ্জে আইন পেশায় নিয়োজিত ছিলেন।

এ মামলার তদন্ত শুরু হয় গত বছরের ৬ জুন। তদন্ত কর্মকর্তা আতাউর রহমান গত বছরের ২৬ নভেম্বর নাসিরউদ্দিন-শামসুদ্দিনের বিরুদ্ধে তদন্তের চূড়ান্ত প্রতিবেদন দিলেও আরও অধিক তদন্তের জন্য ফেরত পাঠান প্রসিকিউশন। তাদের বিরুদ্ধে ১২ জনকে হত্যা, গণহত্যা, আটক, নির্যাতন ও লুণ্ঠনের ৫টি মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ আনা হয়েছিল সে সময়।

পুনর্তদন্ত শেষ করে গত ১৩ এপ্রিল তদন্তের চূড়ান্ত প্রতিবেদন প্রসিকিউশনের কাছে জমা দেন তদন্ত সংস্থা। এর ভিত্তিতে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ তৈরি করে ট্রাইব্যুনালে দাখিল করেন তদন্ত সংস্থা।

পুনর্তদন্তে আরও নতুন নতুন অভিযোগ পাওয়া যাওয়ায় অন্য তিনজনকে এ মামলার আসামি এবং অভিযোগ বাড়িয়ে সাতটি করা হয়েছে।

বাংলাদেশ সময়: ১৩০৭ ঘণ্টা, অক্টোবর ০৪, ২০১৫
এমএইচপি/এএসআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।