ঢাকা: মেডিকেল ও ডেন্টাল কলেজে পুন:পরীক্ষার দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কোনো আলোচনায় যেতে রাজি নন স্বাস্থ্যমন্ত্রী মো. নাসিম।
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেছেন, তাদের সঙ্গে আলোচনার প্রশ্নই আসে না।
রোববার (০৪ অক্টোবর) দুপুরে মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় করছিলেন তিনি।
প্রশ্ন ফাঁস হয়নি, গুজব
প্রশ্নপত্র ফাঁসের অভিযোগকে ‘গুজব’ অভিহিত করে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, মেডিকেল কলেজের ভর্তি পরীক্ষা প্রতিবারই নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তায় অনুষ্ঠিত হয়। এবারও তাই হয়েছে। এবার যেখানে প্রশ্ন ছাপা হয়েছে, সেখানে আমি নিজেই গিয়েছি। ফাঁসের কোনো সুযোগই সেখানে নেই। তাই যারা অভিযোগ করছেন, তা ঠিক নয়, গুজব।
মতবিনিময় সভায় প্রধানমন্ত্রীর তথ্য উপদেষ্টা ইকবাল সোবহান চৌধুরী, স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী ডা. জাহিদ মালেক, সচিব সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম, স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক ডা. দ্বীন মোহাম্মদ নুরুল হক, প্রধানমন্ত্রীর সাবেক প্রেস সচিব আবুল কালাম আজাদ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
যোগ্যরাই চান্স পেয়েছে
এমবিবিএস/ বিডিএস ভর্তি পরীক্ষা-২০১৫’র প্রশ্নপত্র ফাঁসের অভিযোগের জবাবে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের বক্তব্য তুলে ধরে মহাপরিচালক ডা. দ্বীন মোহাম্মদ নুরুল হক বলেন, যোগ্যরা চান্স পেয়েছে।
তিনি জানান, এবার (২০১৫-২০১৬ শিক্ষাবর্ষে) এমবিবিএস/ বিডিএস ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণদের মধ্যে ৯৮.৭৯ শতাংশ ছাত্র-ছাত্রীর মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় মোট জিপিএ নম্বর ৯.৫ এর ওপরে রয়েছে।
তিনি বলেন, ভর্তি পরীক্ষা শেষ হওয়ার মূহূর্ত পর্যন্ত কোনো মহল থেকে প্রশ্নপত্র ফাঁসের কোনো অভিযোগ উত্থাপিত হয়নি। এমনকি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা কেন্দ্র পরিদর্শনের সময় স্বাস্থ্যমন্ত্রী যখন বিভিন্ন প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সদস্য ও অভিভাবকদের সঙ্গে কথা বলেন তখনও কেউ প্রশ্নপত্র ফাঁসের বিষয়ে তার কাছে কোনো অভিযোগ তোলেন নাই। সারা দেশের ২৩টি ভর্তি পরীক্ষা কেন্দ্রে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত পরির্দশকদের কাছেও কেউ প্রশ্নপত্র ফাঁসের কোনো অভিযোগ করেন নাই। প্রশ্ন ফাঁসের অভিযোগ উত্থাপন ও ভর্তি পরীক্ষা বাতিল চেয়ে দাখিলকৃত রিট আবেদনটি হাইকোর্টের খারিজ করা ও পরবর্তীতে আপিল বিভাগের খারিজ আদেশ বহাল রাখার মাধ্যমে এ বিষয়টি ইতোমধ্যেই মীমাংসিত।
নুরুল হক বলেন, ভর্তি পরীক্ষা স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষ করতে সব ধরনের সতর্কতা যথাযথভাবে অবলম্বন করেছিল মন্ত্রণালয় ও অধিদফতর।
এরপর তিনি এ ভর্তি পরীক্ষার ফলাফল বিশ্লেষণ তুলে ধরেন, ২০১৫-২০১৬ সালে সরকারি মেডিকেল ও ডেন্টাল কলেজে ভর্তিযোগ্য ছাত্র-ছাত্রীর সংখ্যা ৩৬৯৪ জন, কোটায় ভর্তি যোগ্য সংখ্যা ১১১ জন (পার্বত্য জেলা- উপজাতি ও অ-উপজাতি, উপজাতি- অন্যান্য জেলা, মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের সদস্য), মেধা ও জেলা কোটা ৩৫৮৩ জন।
৩৫৮৩ জন ছাত্র-ছাত্রীর মধ্যে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় যারা সর্বোচ্চ জিপিএ নম্বর- ১০.০০ পেয়েছে তাদের মধ্যে ৩০৭৩ জন (৮৫.৭৬ শতাংশ) এমবিবিএস ও বিডিএস ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছে, ৯.৫ থেকে ১০.০০ এর মধ্যে উত্তীর্ণ ছাত্র-ছাত্রীর সংখ্যা ৪৬৭ জন (১৩.০৩ শতাংশ) জন, ৯.৪ থেকে ৯.৫ এর মধ্যে উত্তীর্ণ ছাত্র-ছাত্রীর সংখ্যা ২১ জন (০.৫৯ শতাংশ), ৯.৩ থেকে ৯.৪ এর মধ্যে উত্তীর্ণ ছাত্র-ছাত্রীর সংখ্যা ১০ জন (০.২৮ শতাংশ), ৯.২ থেকে ৯.৩ এর মধ্যে উত্তীর্ণ ছাত্র-ছাত্রীর সংখ্যা ৭ শতাংশ (০.১৯ শতাংশ) জন এবং ৯.০৮ থেকে ৯.২ এর মধ্যে উত্তীর্ণ ছাত্র-ছাত্রীর সংখ্যা ৫ জন (০.১৩ শতাংশ)।
তিনি বলেন, ফলাফল বিশ্লেষণে দেখা যায়, কোটা ছাড়া কোনো ছাত্র/ ছাত্রী জিপিএ মোট নম্বর ৯.০৮ এর কমে ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়নি। মোটামুটিভাবে বলা যায়, জিপিএ মোট নম্বর ৯.৫ বা তার বেশি পেয়ে ছাত্র-ছাত্রীরা মেডিকেল ও ডেন্টাল কলেজে ভর্তির সুযোগ পেয়েছে। সুতরাং প্রশ্নপত্র ফাঁস হয়েছে এবং সুবিধা নিয়ে ভর্তির সুযোগ পেয়েছে, এ অভিযোগ সঠিক নয়।
দ্বীন মোহাম্মদ নুরুল হক বলেন, ঢাকা মেডিকেল কলেজে এমবিবিএস কোর্সে ভর্তির জন্য নির্বাচিত ছাত্র-ছাত্রীদের তথ্য বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, ভর্তি পরীক্ষার জন্য নির্ধারিত ২৩টি কেন্দ্রের প্রায় প্রতিটি কেন্দ্র থেকেই ছাত্র-ছাত্রীরা এ কলেজে ভর্তির যোগ্যতা অর্জন করেছে। রংপুর, বরিশাল, সিলেট ও চট্টগ্রামে প্রশ্নপত্র ফাঁসের ব্যাপারে অভিযোগ উত্থাপিত হলেও উল্লেখিত ৪টি কেন্দ্র থেকে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক পরীক্ষার্থী ঢাকা মেডিকেল কলেজের জন্য নির্বাচিত হতে পারে নাই।
‘একই অবস্থা স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল ও শহীদ সোহরাওয়াদী মেডিকেল কলেজে নির্বাচিত পরীক্ষার্থীর বেলায়ও পরিলক্ষিত হয়। ২৩টি পরীক্ষা কেন্দ্রের সবক’টি থেকেই কম-বেশি পরীক্ষার্থী বিভিন্ন মেডিকেল কলেজে ভর্তির যোগ্যতা অর্জন করেছে’- বলেন তিনি।
তিনি বলেন, যারা চান্স পায়নি তাদের মধ্যে প্রতি ১০ জনে একজনকে প্রাইভেটে পড়তে দেখি। প্রাইভেটে বেশি পয়সা লাগে বলে সবাই যায় না। এবার ৫০ শতাংশ আসন উন্মুক্ত করা হয়েছে বিদেশিদের জন্য।
এটি লিকপ্রুফ প্রসেস
নুরুল হক বলেন, এবার প্রশ্ন সহজ হতে পারে হয়তো। ৯৪.৭৫ নম্বর উঠেছে এবার। .০০০০১ শতাংশও সম্ভাবনা নাই প্রশ্নপত্র ফাঁসের।
প্রশ্নপত্র প্রণয়ন ও পরীক্ষা পদ্ধতি সম্পর্কে ধারণা দিয়ে মহাপরিচালক বলেন, ২৩টি কেন্দ্রের ৪৪টি স্থানে ১২৪৩টি কক্ষে পরীক্ষা হয়েছে। প্রতিটি স্তরে নিশ্ছিদ্র ব্যবস্থা থাকে। এটি লিকপ্রুফ একটি প্রসেস।
কোনো প্রমাণ নেই
স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, প্রশ্নপত্র ফাঁস নিয়ে এতদিন পরে কথা বলছি, কারণ আমি নিজে অনুসন্ধান করেছি। হাইকোর্টে যারা অভিযোগ করেছেন, সেটিও কোর্ট খারিজ করেছেন। অভিযোগকারীরই কোনো খোঁজ নেই। ড. মুহম্মদ জাফর ইকবালসহ সম্মানিত ব্যক্তিরা আমাদের জিজ্ঞাসা করতে পারতেন। তারা তা করেননি।
পত্রিকার খবর থেকে কয়েকটি পড়েন মন্ত্রী। বলেন, সবাই শোনা কথায় অভিযোগ করছেন। চিলে কান নেওয়ার মতো অবস্থা। কোনো প্রমাণ নেই ফাঁসের। সবাই কয়েকদিন ধরে হাওয়ার ওপরে কথা বলছেন। অমুকের মুখে শুনেছি ধরনের কথা।
শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা প্রসঙ্গে প্রশ্নের জবাবে নাসিম বলেন, শিক্ষার্থীরা যেখানে বসতে চায়, কথা বলতে চায়- দিতে বলেছি। এরপর আর কোনো ঝামেলা হয়নি তাদের সঙ্গে।
প্রশ্নের জবাবে দ্বীন মোহাম্মদ বলেন, আমাদের কাছে ১০/১২টি সেটের প্রশ্নপত্র থাকে। পরীক্ষার পরে কেউ সেটি ফাঁস করলে, সেটি ফাঁস বলা যাবে না। পরেরদিন অনলাইনে দিয়েও একদিন আগের তারিখ দেওয়া হয়েছে কি-না দেখতে হবে।
প্রশ্নপত্র ফাঁসের তদন্তে কোন আইটি ফার্মের সহযোগিতা নিয়েছেন কি-না- সে প্রশ্নের জবাব দেননি উপস্থিত কেউই।
দ্বীন মোহাম্মদ নুরুল হক বলেন, আগের রাত ১২টা থেকে প্রশ্নপত্র পাওয়া গেছে- এটি সত্যি নয়। পরীক্ষার কিছুক্ষণ আগে কোনো শিক্ষক যদি প্রশ্ন কাউকে দিয়ে দেন, সেটিকে প্রশ্নপত্র ফাঁস বলা যাবে না।
কোচিং বন্ধে আইন
এক প্রশ্নের জবাবে ‘মেডিকেল কোচিং আলাদা হয় বলে জানা নেই’ বলেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘মেডিকেল কোচিং সেন্টার কি আলাদা আছে? আমিতো জানি যে, এমনিতে কোচিং সেন্টারের ব্যবসা হয়, সেখানে মেডিকেল কোচিং করা হয়। মেডিকেলের আলাদা কোচিং যদি সত্যিই সত্যিই থাকে, তাহলে এটা আইন করে বন্ধ করে দেওয়ার ব্যবস্থা হবে। সাংবাদিকরা আমাদের পাশে থাকবেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে পরীক্ষা
অন্য একটি প্রশ্নের জবাবে নাসিম বলেন, মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে সব মেডিকেল কলেজকে নিয়ে যাওয়ার ও পরীক্ষাগুলো নেওয়ার বিষয়টি চিন্তা করছি আমরা।
কালক্ষেপণ প্রয়োজনীয় কাগজের অভাবে
মন্ত্রীর উদ্দেশ্যে অপর একটি প্রশ্নের জবাবে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা বলেন, এইচএসসি’র ফল প্রকাশের পর পরই মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষা না নেওয়ার কারণ হল, প্রয়োজনীয় কাগজপত্র তুলতে কিছুটা সময় দেওয়া হয় শিক্ষার্থীদের। ট্রান্সক্রিপ্ট ও প্রভিশনাল সার্টিফিকেট পেতে কিছুটা সময় লেগে যায়।
ধুমপায়ী-মাদকসেবীরা বাদ পড়বে
ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীরা ধুমপায়ী বা মাদকসেবী বলে জানা গেলে তারা ভবিষ্যতে ভর্তি হতে পারবে না বলে ঘোষণা দেন মন্ত্রী।
বাংলাদেশ সময়: ১৮৪৮ ঘণ্টা, অক্টোবর ০৪, ২০১৫
এসকেএস/এএসআর
** ‘মেডিকেল কোচিং বন্ধে আইন হবে’
** ‘প্রশ্নফাঁসের অভিযোগ সত্যি নয়, গুজব’
** মেডিকেলে পুন:পরীক্ষার দাবিতে শাহবাগে শিক্ষার্থীদের অবস্থান