ময়মনসিংহ: ময়মনসিংহে জঙ্গি সংগঠন ইসলামিক স্টেটের (আইএস) মোড়কে মূলত নিজেদের কর্মীদের গোপনে সংগঠিত করার বিশেষ পরিকল্পনা নিয়েছিল ছাত্র শিবির।
আর এ লক্ষ্যেই এক সময় জঙ্গিদের চারণভূমি হিসেবে পরিচিত ময়মনসিংহের উত্তর পয়েন্ট বেছে নিয়ে অস্থিরতা সৃষ্টির মাধ্যমে জঙ্গিবাদের অস্তিত্ব প্রমাণেরও ষড়যন্ত্র করছিল তারা।
একই সঙ্গে ভেস্তে যায় তাদের ‘টার্গেট ময়মনসিংহ’ মিশন। জেলা গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) সূত্র জানিয়েছে চাঞ্চল্যকর এসব তথ্য। দীর্ঘ পরিকল্পনা করেই শিবির সবে মাত্র ছক কষা শুরু করেছিল বলেও মনে করে গোয়েন্দা সূত্র।
এ প্রসঙ্গে ময়মনসিংহের জেলা পুলিশ সুপার (এসপি) মঈনুল হক বাংলানিউজকে বলেন, আইএসের নাম ব্যবহার করে দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করার অপচেষ্টা চালিয়েছিল শিবির। একই সঙ্গে তারা বিভ্রান্তি সৃষ্টিরও অপপ্রয়াস নিয়েছিল।
সূত্র জানায়, শিবিরের সমর্থন নিয়ে সংগঠনটির রাজনীতিতে সম্পৃক্ত উপজেলার আঠারবাড়ি উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্র মোল্লা ফয়সাল, মিজানুর রহমান ও বদিউল হাসান ময়মনসিংহের প্রত্যন্ত জনপদ ঈশ্বরগঞ্জ থেকেই দীর্ঘ মেয়াদী পরিকল্পনা নিয়ে এগুতে থাকে। এ লক্ষ্যেই তারা আন্তর্জাতিক জঙ্গি সংগঠন আইএস এর লিফলেট ছেপেছিল।
তাদের এ লিফলেট কাণ্ডের নেপথ্যে রয়েছে গভীর চক্রান্ত। আর ময়মনসিংহের উত্তরের প্রত্যন্ত জনপদ ঈশ্বরগঞ্জকে টার্গেট করার পেছনেও রয়েছে বিশেষ কারণ। নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন জেএমবি’র উৎসভূমি বলে কথিত ময়মনসিংহে জঙ্গিদের অতীত অবস্থান ও তৎপরতার বিষয়টি মাথায় রেখে আইএসের নাম ভাঙিয়ে জনমনে আতঙ্ক তৈরি করতেই তারা কোমর বেঁধে মাঠে নেমেছিল বলে মনে করে জেলা গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)।
সূত্রমতে, গত বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের সময়ে ময়মনসিংহে জঙ্গি সংগঠন জেএমবির ব্যাপক উত্থান ঘটে। ময়মনসিংহের চারটি সিনেমা হলে বোমা হামলা থেকে শুরু করে নেত্রকোণার উদীচীতে আত্মঘাতী বোমা হামলা, দেশের ৬৩ টি জেলায় একযোগে সিরিজ বোমা হামলার ঘটনার মাধ্যমে ওই সময় জঙ্গিরা নিজেদের শক্তিমত্তার জানান দেয়।
একই সূত্র জানায়, নেত্রকোণার কেন্দুয়া উপজেলার এক পাশে ঈশ্বরগঞ্জ। তার পাশেই কিশোরগঞ্জের তাড়াইল ও হোসেনপুর উপজেলা। আবার ঈশ্বরগঞ্জ লাগুয়া ময়মনসিংহের গৌরীপুর উপজেলা। মুক্তাগাছা, মধুপুর, ঘাটাইল, ফুলবাড়িয়া উপজেলার বাইরে গৌরীপুর ও ঈশ্বরগঞ্জেও এক সময় জঙ্গিদের বিচরণের কথা সবারই জানা।
গৌরীপুরের প্রত্যন্ত এলাকা থেকে গিয়ে নেত্রকোণার উদীচীতে বোমা হামলার মিশন পরিচালনা করেছিল জঙ্গিরা। ফলে ভৌগলিকভাবে ময়মনসিংহ, নেত্রকোণা ও কিশোরগঞ্জ এ ৩ জেলার সীমান্তবর্তী ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলাকেই বেছে নিয়েছিল এ চক্রটি।
বিভিন্ন সূত্র জানায়, মানবতা বিরোধী অপরাধের বিচার কার্যক্রম শুরু হবার পর থেকেই সারা দেশের মতোই ময়মনসিংহে নড়বড়ে হয়ে পড়ে জামায়াত-শিবিরের সাংগঠনিক ভিত। নতুন করে ডানা ঝাপটা দিতেই বিভিন্ন কৌশলে কর্মীদের সংগঠিত করে নয়া ছদ্মবেশে মাঠে নামাতে পারে তারা, এমন আশঙ্কা গোয়েন্দা সূত্রের।
জেলা গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আইএস কর্মী সন্দেহে আটক ৩ জনের মধ্যে নাটের গুরু মোল্লা ফয়সাল এবং তার দুই সহযোগী মিজানুর রহমান ও বদিউল হাসান নিজেদের শিবিরের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত বলে দাবি করে।
বিশেষ করে নানা নেত্রকোণার কেন্দুয়া উপজেলা জামায়াতের আমির শামসুদ্দিনের রাজনীতি শৈশব থেকেই তথাকথিত ইসলামী আন্দোলনের দিকে ধাবিত করে মোল্লা ফয়সালকে, এমনটি জানায় গোয়েন্দা সূত্র।
এসব বিষয়ে ময়মনসিংহ জেলা গোয়েন্দা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ইমারত হোসেন গাজী বাংলানিউজকে বলেন, আটককৃত ৩ জন শিবিরের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত বলে আমাদের কাছে স্বীকার করেছে। দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করতে ও জঙ্গিবাদের অস্তিত্ব প্রমাণ করতেই শিবিরের সমর্থন নিয়ে তারা মিশন বাস্তবায়নের পথে এগিয়ে যাচ্ছিল।
কিন্তু আমাদের সময়োপযোগী পদক্ষেপের মাধ্যমে তাদের গ্রেফতার করা সম্ভব হয়েছে। এসব ঘটনা শিবিরের একটি চালবাজি বলেও মনে করেন তিনি।
ইতোমধ্যে আদালত গ্রেফতারকৃত ৩ জনের ৫ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছে। তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে, জানান ওসি ইমারত হোসেন।
বাংলাদেশ সময়: ২১৫৮ ঘণ্টা, অক্টোবর ৫, ২০১৫
জেডএম/