ঢাকা, শনিবার, ২৪ মাঘ ১৪৩১, ০৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৮ শাবান ১৪৪৬

জাতীয়

এসডিজিতে বাংলাদেশের ৫ চ্যালেঞ্জ

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫১৫ ঘণ্টা, অক্টোবর ৫, ২০১৫
এসডিজিতে বাংলাদেশের ৫ চ্যালেঞ্জ ছবি : দীপু মালাকার / বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

ঢাকা: টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অর্জনে বাংলাদেশেকে ৫টি চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে হবে বলে জানিয়েছে বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগ (সিপিডি)।
 
চ্যালেঞ্জগুলোর মধ্যে রয়েছে- চলমান অর্থনৈতিক পরিকল্পনা নীতির সঙ্গে কীভাবে যুক্ত হবে, কী প্রাতিষ্ঠানিক ব্যবস্থাপনার অধীনে পরিকল্পনা বাস্তবায়ন হবে, কী ধরনের আর্থিক ও সম্পদের প্রবাহ থাকবে, পরিসংখ্যান কীভাবে বাস্তবায়ন হবে এবং জবাবদিহিতার কাঠামো ও সবার অংশগ্রহণ কীভাবে নিশ্চিত হবে?
 
আর এসব চ্যালেঞ্জ বাস্তবায়নে কর্মসংস্থান সৃষ্টি, সুশাসন প্রতিষ্ঠা, অর্থায়নের ব্যবস্থা, বেসরকারি বিনিয়োগ বৃদ্ধি, রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা, গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা এবং কর্মসূচি বাস্তবায়নে সবার অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় বলে মনে করছে সিপিডি।


 
সোমবার (০৫ অক্টোবর) রাজধানীর ব্র্যাক ইন সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে সিপিডির পক্ষে থেকে এসব তথ্য তুলে ধরেন সিপিডির সম্মানিত ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য। এসডিজি বাস্তবায়নে বাংলাদেশের চ্যালেঞ্জ প্রসঙ্গে সংবাদ সম্মেলনটির আয়োজন করা হয়।
 
এসডিজির বিষয়ে দেবপ্রিয় জানান, ১৭টি অভীষ্ট ও ১৬৯টি লক্ষ্য নিয়ে এসডিজির গাইড লাইন তৈরি করা হয়েছে। এতে একটি আন্তর্জাতিক ঐক্যমতের প্রকাশ ঘটেছে। এই ঐক্যমতে পৃথিবীর সব মানুষের উন্নতর জীবন-যাপনের আকাঙ্ক্ষার প্রকাশ পেয়েছে। একই সঙ্গে সব দেশের সব মানুষের উন্নত জীবন যাপনের বিষয়টি স্বীকার করে নেওয়া হয়েছে।
 
দেবপ্রিয় বলেন, এসডিজি বাস্তবায়ন শুরু করতে হবে সহস্রাব্দের উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার (এমডিজি) অসম্পূর্ণ থাকা কাজগুলো থেকে। এগুলোর মধ্যে সবার উপরে রয়েছে কর্মসংস্থান। ২০১৫ সালের মধ্যে আমাদের কর্মসংস্থান ১০০ শতাংশ হওয়া কথা। সেখানে হয়েছে ৫৭ শতাংশ। যা ১৯৯১ সালে ছিলো ৬৮ শতাংশ। অর্থাৎ কর্মসংস্থানের ক্ষত্রে আমরা এগুনো তো দূরের কথা উল্টো পিছিয়ে গেছি। সুতরাং বেকারত্ব হ্রাস, অর্থের সংস্থান ও কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা আগামীতে খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
 
কর্মসংস্থানের মতোই বনাঞ্চল শোচনীয় পর্যায়ে রয়েছে উল্লেখ করে দেবপ্রিয় বলেন, পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় বনায়ন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বর্তমানে বাংলাদেশে যে পরিমাণ বনাঞ্চল থাকার কথা গত ১৫ বছরে তা আশঙ্কাজনক হারে কমে গেছে। এটি অত্যন্ত শোচনীয় পর্যায়ে রয়েছে। ১৯৯১ সালে বাংলাদেশে বনাঞ্চল ছিলো ১১ দশমিক ৫ শতাংশ। তা ২০১৪ সালে কমে দাঁড়িয়েছে ১১ দশমিক ১ শতাংশে।
 
সুশাসনের বিষয়ে দেবপ্রিয় বলেন, এসডিজির এজেন্ডায় সুশাসন অন্তর্ভুক্ত করা একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ। কিন্তু আমাদের উন্নয়ন পরিকল্পনার মধ্যে এখনো এটি এসেছে বলে মনে হচ্ছে না।
 
রাজনৈতিক ঐক্য ও স্থিতিশীলতা থাকলে বাংলাদেশের জন্য উন্নয়ন পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা সহজ হবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, অনেক দেশের আগে বাংলাদেশ সহস্রাব্দের লক্ষ্যমাত্রার মতো সমধর্মী কর্মসূচি বাস্তবায়ন শুরু করে ১৯৯০ সাল থেকে। ১৯৯০ সাল হলো বাংলাদেশের গণতন্ত্রের নতুন দশক। সে দিক থেকে বাংলাদেশের গণতন্ত্র ও উন্নয়ন হাত ধরাধরি করে চলেছে। কিন্তু রাজনৈতিক অনৈক্য বাংলাদেশের উন্নয়নকে আরও জোরালোভাবে কাজে লাগাতে বাধাগ্রস্ত করেছে।
 
দেবপ্রিয় বলেন, এসডিজি বাস্তবায়নে ২০৩০ সাল পর্যন্ত বিশ্বে প্রতিবছর ৫ থেকে ৭ ট্রিলিয়ন ডলার অতিরিক্ত বিনিয়োগের প্রয়োজন হবে। এরমধ্যে প্রতিবছর ২.৫ ট্রিলিয়ন ডলার ঘাটতি থেকে যাবে। এই ঘাটতি কোথা থেকে আসবে তার কোনো দিক নির্দেশনা পরিকল্পনায় দেওয়া হয়নি। বলা হচ্ছে অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে অর্থায়নের বেশির ভাগ আসবে।
 
তিনি বলেন, জিডিপিতে অভ্যন্তরীণ সম্পদের উৎস ১২ দশমিক ১ শতাংশ। এরমধ্যে ১ দশমিক ২ শতাংশ অর্থ অবৈধভাবে দেশের বাইরে পাচার হয়ে যাচ্ছে। তাই প্রথম কাজ হলো অবৈধভাবে দেশের বাইরে অর্থপাচার আটকানো। দেশের ভেতর থেকে সম্পদ তুললে, সেই সম্পদ বিদেশে পাচার হলে, দুর্নীতি হলে, তছরুপ হলে সেক্ষেত্রে মানুষের অনীহা বাড়বে। তাই সঠিকভাবে দেশের ভেতর থেকে সম্পদ তুলতে হবে এবং সঠিকভাবে তার ব্যবহার করতে হবে।
 
বৈদেশিক বিনিয়োগের বিষয়ে সিপিডির সম্মানিত ফেলো ড. দেবপ্রিয় বলেন, বাংলাদেশ এখন দুই শতাংশের নিচে বৈদেশিক সহায়তা পাচ্ছে। অথচ ২০ বিলিয়ন ডলারের মতো বৈদেশিক সাহায্য অব্যবহৃত রয়েছে। বৈদেশিক সাহায্যের সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে। স্বল্প সুদে বৈদেশিক সাহায্য থাকলে তা ব্যবহার না করে, উচ্চমূল্যে ব্যাংক থেকে টাকা তুললে তা অর্থনৈতিক কোনো যুক্তিতে টিকে না।
 
তিনি বলেন, আগামী দিনের পরিকল্পনা বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে অর্থায়নের বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। সেক্ষেত্রে মূল ভূমিকা পালন করবে অভ্যন্তরীণ সম্পদ। এজন্য কর আহরণের পরিমাণ যেমন বাড়াতে হবে, তেমনি তার সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে। একই সঙ্গে দেশ থেকে অর্থপাচার বন্ধ করতে হবে। বৈদেশিক বিনিয়োগ বাড়াতে হবে। বেসরকারি বিনিয়োগ বাড়াতে হবে এবং রেমিটেন্স আয়কে ধরে রাখতে হবে।
 
আর এসব পরিকল্পনা বাস্তবায়নে নেতৃত্ব দিতে হবে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়কে। রাজনৈতিক ও কারিগরি নেতৃত্ব প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় না দিলে পরিকল্পনাগুলো বাস্তবায়ন করা কঠিন হবে বলেও মন্তব্য করেন ড. দেবপ্রিয়।
 
তিনি আরও বলেন, এসডিজির কর্মসূচি তৈরিতে যেমন সবাই অংশগ্রহণ করেছে, তেমনি বাস্তবায়নে সবার অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে। এক্ষেত্রে সরকারের উদ্যোগে সরকার ও সরকারের বাইরে যারা রয়েছে তাদের নিয়ে একটি ফোরাম গঠন করা যেতে পারে। সেই ফোরাম একপেশে না হয়ে অংশগ্রহণমূলক হতে হবে।
 
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন সিপিডির নির্বাহী পরিচালক মোস্তাফিজুর রহমান, অতিরিক্তি গবেষণা পরিচালক ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম, গবেষণা পরিচালক তৌফিক ইসলাম খান প্রমুখ।
 
বাংলাদেশ সময়: ১৫১৫ ঘণ্টা, অক্টোবর ০৫, ২০১৫
এএসএস/এমজেএফ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।