ময়মনসিংহ: সোমবার (০৫ অক্টোবর) বিকেল সোয়া ৫টা। ময়মনসিংহ শহরের সানকিপাড়া কাঠের গোলা এলাকা।
হঠাৎ বেপরোয়া গতিতে বিপরীত দিক থেকে আসা বালু বোঝাই একটি যন্ত্রদানবের (ট্রাক) চাকায় পিষ্ট হলো কিশোর। ছোপ ছোপ রক্তে ভিজে উঠলো সড়কপথ। পরিচয় ও সংজ্ঞাহীন এ কিশোরের মৃত্যু নিশ্চিত ভেবে রাস্তায় নেমে এলো স্থানীয় জনতা।
মুহূর্তেই সানকিপাড়া হেলথ অফিসারের গলি টু সানকিপাড়া শেষ মোড় এলাকায় ভয়াবহ জনজট। বেগতিক পরিস্থিতি বুঝে আরো বেপরোয়া হয়ে উঠলেন চালক। সম্ভাব্য বিপদ আঁচ করতে পেরে খেই হারিয়ে গতি বাড়িয়ে সবকিছু যেন লন্ডভন্ড করে দিয়ে এগিয়ে যাচ্ছেন।
কিন্তু নাছোড়বান্দা স্থানীয় একদল তরুণ। তারা দৌড়ে ছুটে চলেছেন ট্রাকের পেছনে। তাদের চিৎকার-চেচাঁমেচিতে অবশেষে সেনবাড়ি এলাকায় আটক হলো ট্রাক। কিন্তু চোখের পলকে পালিয়ে গেলেন ধুরন্ধর চালক! আর পালাতে গিয়ে ধরা পড়লেন আরেক হেলপার আক্তার হোসেন (২৫)।
ব্যাস, শুরু হয়ে গেলো পাবলিক অ্যাকশন। এক কান দু’কান করে খবর গেলো পুলিশের কাছে। ক্ষুব্ধ জনতার রোষ থেকে প্রথমে ট্রাকের হেলপার এছহাককে বাঁচাতে মরিয়া হয়ে উঠলেন কোতোয়ালী মডেল থানা পুলিশের কনস্টেবল মেজবাহ’র নেতৃত্বে ক’জন পুলিশ সদস্য। কোনোমতে এ হেলপারকে রক্ষা করে নিয়ে তুললেন পুলিশের গাড়িতে।
এরপর পাবলিকের গণধোলাইয়ের মুখে পড়া আরেক হেলপার আক্তার হোসেনকে পাজাকালো করে তোলা হলো পুলিশের ভ্যানে। কিন্তু ততক্ষণে কপাল ফেটে রক্ত ঝরছে পুলিশ কনস্টেবল মেজবাহ’র। সড়ক দুর্ঘটনার শিকার অজ্ঞাত পরিচয় ওই কিশোরকে ফেলে রেখেই চম্পট দিলো পুলিশ।
পুরো ঘটনার সময় নিধিরাম সর্দারের ভূমিকায় দেখা গেলো সংশ্লিষ্ট মডেল থানার উপ-পরিদর্শক (এস.আই) হাবিবুর রহমানকে। এ প্রতিনিধি ঘটনাস্থলে তাকে বিভিন্ন বিষয় জিজ্ঞাসা করলেও তিনি নিরুত্তর থাকেন। এক পর্যায়ে বলেই ফেলেন, পরিস্থিতি গরম, কথা বলবেন না।
পুলিশ চলে যাওয়ার মিনিট পাঁচেক পরে এলো নতুন খবর। অজ্ঞাত পরিচয় ওই কিশোর মারা যায়নি। ‘জ্ঞান আছে, জ্ঞান আছে’ বলে আবারো শুরু হলো হই-হুল্লোড়। আনন্দ-উল্লাসে ফেটে পড়লেন অনেকেই। স্থানীয়রা একটি ব্যাটারিচালিত অটো রিকশায় চেপে ওই কিশোরকে নিয়ে ছুটলো ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে।
এ কিশোরকে বাঁচাতে প্রাণান্তকর প্রচেষ্টা চালালেন চিকিৎসকরা। কিন্তু সন্ধ্যা ৭টার দিকে দু:সংবাদ। না ফেরার দেশেই চলে গেছে সেই কিশোর। সড়কপথে বেপরোয়া যন্ত্রদানবের কারণে মৃত্যুর মিছিলে যোগ হলো এ কিশোরের নাম। হতভাগ্য ওই কিশোরের নাম-পরিচয় এখনো জানা যায়নি।
এমন লঙ্কাকাণ্ডের বিষয়ে জানতে চাইলে কোতোয়ালি মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কামরুল ইসলাম বলেন, পাবলিকের হাতে ধরা পড়া দুজনেই ট্রাকের হেলপার। চালক পালিয়ে গেছেন বলে শুনেছি। আর অজ্ঞাত পরিচয় সাইকেল আরোহী ওই কিশোর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছে।
বাংলাদেশ সময়: ২১৪৯ ঘণ্টা, অক্টোবর ৫, ২০১৫
জেডএম