ঢাকা, শুক্রবার, ২৪ মাঘ ১৪৩১, ০৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৭ শাবান ১৪৪৬

জাতীয়

নিয়োগ জালিয়াতি

৪ উপ-সচিবসহ ৫৩ জনের বিরুদ্ধে দুদকের মামলা

আদিত্য আরাফাত, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫২৮ ঘণ্টা, অক্টোবর ৭, ২০১৫
৪ উপ-সচিবসহ ৫৩ জনের বিরুদ্ধে দুদকের মামলা

ঢাকা: খাদ্য পরিদর্শক পদে মেধাবীদের বঞ্চিত করে অযোগ্যদের নিয়োগ দেওয়ার অভিযোগে চার উপ-সচিবসহ মোট ৫৩ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
 
মামলায় অভিযোগ করা হয়েছে, খাদ্য অধিদফতরের  এ পদের প্রার্থীদের প্রাপ্ত নম্বরকে পরিবর্তন করে অযোগ্যদের উত্তীর্ণ দেখিয়ে খাদ্য পরিদর্শক পদে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।


 
বুধবার (০৭ অক্টোবর) বেলা সোয়া ৩টায় রাজধানীর শাহবাগ থানায় এ মামলা দায়ের করেন দুদকের উপ-পরিচালক ও  অনুসন্ধানকারী কর্মকর্তা মোহাম্মদ মনিরুল হক। মামলা দায়েরের পর দুদক ও থানা সূত্র বাংলানিউজকে নিশ্চিত করেছে।
খাদ্য পরিদর্শক পদে নিয়োগ জালিয়াতির অভিযোগে যাদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে তাদের মধ্যে রয়েছেন, বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের উপ-সচিব (খাদ্য ও দুর্যোগ মন্ত্রণালয়ের সাবেক উপ-সচিব) নাসিমা বেগম, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের উপ-সচিব (জনপ্রশাসনের সাবেক সিনিয়র সহকারী সচিব) রোকেয়া খাতুন, সরকারি কর্মকমিশনের উপ-সচিব (কর্মকমিশনের সাবেক উপ-পরিচালক) মো. মাহবুবুর রহমান ফারুকী, জনপ্রশাসনের উপ-সচিব (সংস্থাপন মন্ত্রণালয়ের সাবেক উপ-পরিচালক) ইফতেখার আহমেদ এবং খাদ্য অধিদফতরের বর্তমান পরিচালক (সংগ্রহ) ইলাহী দাদ খান (খাদ্য অধিদফতরের সাবেক পরিচালক)। এ পাঁচজন বাছাই কমিটির সদস্য ছিলেন।
 
এছাড়া জালিয়াতির সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে আইটি সার্ভিস প্রোভাইডার প্রতিষ্ঠান ডেভেলপমেন্টের ৪ কর্মকর্তা মো. আইউব আলী, আসাদুর রহমান, আরিফ হোসেন এবং আবুল কাশেমের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়। এজাহারে অভিযোগ করা হয়, এ চারজন পরীক্ষার্থীদের স্বার্থ রক্ষা করতে আইনগতভাবে বাধ্য থাকলেও পরীক্ষায় ফলাফল প্রকাশের সময় যোগ্য প্রার্থীদের বঞ্চিত করে কম্পিউটার সফটওয়ারে পরিবর্তন এনে অযোগ্যদের অধিক নম্বর দেখান।
 
গত বছরের ৫ মে মোট ৩২৮ জনকে খাদ্য অধিদফতরে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। দুদকের অনুসন্ধানে উঠে এসেছে, তাদের মধ্যে ৪৪ জনের নম্বর বাড়িয়ে উত্তীর্ণ দেখানো হয়েছে। তারা বর্তমানে দেশের বিভিন্ন জেলায় খাদ্য পরিদর্শক পদে কর্মরত রয়েছেন। দুদকের মামলায় ওই ৪৪ জনও আসামি হয়েছেন।
 
দুদকের মামলায় যে ৪৪ খাদ্য পরিদর্শক আসামি হয়েছেন তারা হলেন, ঢাকা জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের দফতরে সংযুক্তিতে থাকা শরীয়তপুর সদর উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক কার্যালয়ের মুহাম্মদ তাজুল ইসলাম, সিলেটের কোম্পানিগঞ্জের মো. জহিরুল ইসলাম, সিলেট সদরের আবু জাকির মোহাম্মদ রিজওয়ানুর রহমান, গাজীপুরে সংযুক্তিতে থাকা ফরিদপুরের বোয়ালমারীর আসমা রহমান, ঢাকা খাদ্য অধিদফতরের হিসাব ও অর্থ বিভাগে সংযুক্তিতে থাকা মানিকগঞ্জের হরিরামপুরের আসমা ইসলাম, সিলেটের বিয়ানীবাজারের জাহানারা জলি, শেরপুরের নয়াবিলি টিপিসি’র অলিউর রহমান, তেজগাঁও সিএসডিতে সংযুক্তিতে থাকা জামালপুর সদরের সানজিদা সুলতানা, কিশোরগঞ্জ এলএসডি’র উম্মে হানি, রংপুরের মিঠাপুকুরের মোহাম্মদ মোহাইমিনুল ইসলাম ভুঞা, নীলফামারী জলঢাকার জেসমিন আক্তার, নীলফামারীর সৈয়দপুরের মো. রায়হান কবির, রংপুর এলএসডি’র শরিফুল ইসলাম, সাতক্ষীরার দেবহাটার বিল্লাল হোসেন, বাগেরহাটের মংলার মো. আবুল হাশেম, আবুল কাশেম (চাকরি হলেও যোগদান করেননি), পটুয়াখালীর ইসরাত জাহান মনা, বরগুনার আরিফা সুলতানা এবং সুনামগঞ্জের দিরাই উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের কার্যালয়ের আশীষ কুমার রায়।
 
খাদ্য অধিদফতরের ১০ শ্রেণির এক হাজার ৫৫২ পদে লোক নিয়োগের জন্য ২০১০ সালে বিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়। এতে মোট আবেদন করেন তিন লাখ ৮৭ হাজার ৪৩৭ জন। ২০১১ সালে লিখিত পরীক্ষা হয়। লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন ১৫ হাজার ২৩০ জন। ২০১৩ সালে মৌখিক পরীক্ষা শুরু হয় এবং গত ৫ এপ্রিল এ নিয়োগ কার্যক্রম শেষ হয়। চূড়ান্ত ফলাফলে উত্তীর্ণ হন এক হাজার ১৭৫ জন। তাদের ৩২৮ জনকে খাদ্য পরিদর্শক পদে নিয়োগ দেওয়া হয়।

শুরু থেকেই এ নিয়োগে অনিয়মের অভিযোগ ওঠে। ওই সময় মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে ছিলেন তখনকার খাদ্যমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক।
 
দুদক খাদ্য পরিদর্শক পদে নিয়োগ দুর্নীতির অনুসন্ধান করে ৪৪ জনের জালিয়াতির দালিলিক তথ্য পায়।
 
মামলার এজাহারে অভিযোগ করা হয়, আসামিরা পরস্পরের যোগসাজশে এ জালিয়াতি করেছেন। গোপন আঁতাতের মাধ্যমে এ নিয়োগে দুর্নীতি হয়েছে বলেও অভিযোগ করা হয়েছে।
 
এজাহারে আরও বলা হয়েছে, খাদ্য পরিদর্শক পদে লিখিত পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বাছাই কমিটির ৫ জন এবং আইটি সার্ভিস প্রোভাইডার প্রতিষ্ঠান ডেভেলপমেন্ট প্লানার্স অ্যান্ড কনসালট্যান্স (ডিপিসি) এর ৪ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী পরীক্ষার্থীদের স্বার্থ রক্ষা করতে আইনিভাবে বাধ্য থাকলেও তারা পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশে যোগ্য প্রার্থীদের বঞ্চিত করেছেন। প্রাপ্ত নম্বরকে পরিবর্তন করে অযোগ্য ও দুর্বল প্রার্থীদের তারা উত্তীর্ণ দেখিয়েছেন। পরীক্ষার খাতা ওএমআর শিটের ফলাফল পরিবর্তন করেছেন।
 
বাংলাদেশ সময়: ১৫২৯ ঘণ্টা, অক্টোবর ০৭, ২০১৫/ আপডেট ১৭১৮ ঘণ্টা
এডিএ/এএসআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।