ঢাকা, শুক্রবার, ২৪ মাঘ ১৪৩১, ০৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৭ শাবান ১৪৪৬

জাতীয়

মমেক হাসপাতাল

অ্যাম্বুলেন্স চালকদের ‘ধর্মঘটে’ রোগীদের দুর্ভোগ

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০৪৬ ঘণ্টা, অক্টোবর ৭, ২০১৫
অ্যাম্বুলেন্স চালকদের ‘ধর্মঘটে’ রোগীদের দুর্ভোগ ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

ময়মনসিংহ: ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ (মমেক) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন এক রোগী। তার স্বজনরা হাসপাতালের গেটে বেসরকারি অ্যাম্বুলেন্স ভাড়া করতে এলেন।

কিন্তু তাদের সাফ ‘না’ করে দিলেন অ্যাম্বুলেন্স চালকরা।

শঙ্কা ও ক্ষোভ নিয়ে হাসপাতালের জরুরি বিভাগে ছুটলেন ওই রোগীর স্বজনরা। জরুরি বিভাগের করণিক চাঁন মিয়া যেতে বললেন সরকারি অ্যাম্বুলেন্স চালকদের কক্ষে।

কিন্তু সেখানে থাকা একজন জানালেন, সহসাই তাদের অ্যাম্বুলেন্স সেবা দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। ঘটনাটি বুধবার (০৭ অক্টোবর) বিকেল সোয়া ৫ টার।

শুধু ওই রোগীর স্বজনরাই নন, আরও অনেকেই রোগীকে ঢাকায় কিংবা নিজ নিজ এলাকায় নিয়ে যেতে চড়া মূল্য হাঁকছেন অ্যাম্বুলেন্স চালকরা। অনেক সময় উচ্চ মূল্য দিয়েও অ্যাম্বুলেন্স পরিষেবা পাচ্ছেন না রোগী কিংবা তাদের স্বজনরা। আর এ নিয়ে চরমে পৌঁছেছে দুর্ভোগ।

সরেজমিনে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বুধবার বিকেল ৪টার দিকে তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে জেলা পুলিশের বিশেষ শাখার (এসবি) কনস্টেবল আনিসের সঙ্গে কথা কাটাকাটির জের ধরে তার সঙ্গে হাতাহাতির ঘটনা ঘটে এক অ্যাম্বুলেন্স চালকের। এ সময় তাকে মারপিট করেন বেশ কয়েকজন অ্যাম্বুলেন্স চালক।

হাসপাতালের ক্যাম্প পুলিশ খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে অ্যাম্বুলেন্স চালক হাসু (২৭) ও জালালসহ (৩০) ৩ জনকে আটক করে। এ ঘটনার প্রতিবাদে বিকেলে প্রায় আধা ঘণ্টা শহরের চরপাড়া-মাসকান্দা সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করে প্রাইভেট অ্যাম্বুলেন্স চালকরা।

পরে কোতয়ালি মডেল থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে অ্যাম্বুলেন্স চালকদের সঙ্গে কথা বলে পরিস্থিতি শান্ত করে। কিন্তু প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী আটক ৩ চালককে না ছাড়ায় বেঁকে বসে তারা।

আটক চালকদের মুক্তি না হওয়া পর্যন্ত রোগী বা মরদেহ আনা নেওয়ার কাজ থেকে বিরত থাকার ঘোষণা দেন তারা। এ ঘটনায় হাসপাতালের মূল গেটে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়।

শহরের চরপাড়া প্রাইভেট অ্যাম্বুলেন্স স্ট্যান্ড কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক উজ্জ্বল মিয়া বলেন, ‘পুলিশ আমগরে বাইল দিয়া অবরোধ তুইল্ল্যা নিছে। আমগর ৩ জনরে ফেরত না দিলে লাশ বা রোগী কোনডাই আমরা নিমু না। ’

এ সময় তার সঙ্গে ‘হ, হ’ কন্ঠে সুর মেলান আরও প্রায় অর্ধ শতাধিক অ্যাম্বুলেন্স চালক। কিন্তু এতে রোগীদের ভোগান্তি হচ্ছে কিনা এ প্রশ্ন করতেই তিনি বলেন, ‘এ ভোগান্তি দেহার দায়িত্ব আমগর না। মারপিট দু’পক্ষই করছে। আমরা শুধু এর দায় নিমু কেন?’

ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সামনিই প্রাইভেট অ্যাম্বুলেন্সের স্ট্যান্ড। এ স্ট্যান্ডে সব সময়ই প্রায় শতাধিক প্রাইভেট অ্যাম্বুলেন্স থাকে। মোটা অংকের টাকা না দিলে তারা বিভিন্ন সময়ে রোগী নিতে চায় না, এমন অভিযোগও বিস্তর।
 
কিন্তু এখন খোদ রোগীদের জিম্মি করে তাদের দাবি আদায়ের এমন বাহানার কারণ সম্পর্কে খোঁজ নিয়ে জানা গেলো সংশ্লিষ্ট হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের অসহায়ত্ব।

এ হাসপাতালের জরুরি বিভাগের খানিকটা দূরেই সরকারি অ্যাম্বুলেন্স চালকদের কক্ষে গিয়ে আলাপ হয় সরকারি অ্যাম্বুলেন্স চালক হাশেম উদ্দিনের সঙ্গে।

তিনি জানান, প্রায় ১ হাজার ৩০০ শয্যা বিশিষ্ট এ হাসপাতালে ধারণ ক্ষমতার প্রায় তিনগুণ রোগী ভর্তি থাকে। অথচ এখানে অ্যাম্বুলেন্স স্বল্পতা চরমে উঠেছে। মোট ৪ টি অ্যাম্বুলেন্স থাকলেও গত ৫ থেকে ৬ বছর যাবত দু’টি অ্যাম্বুলেন্সই নষ্ট হয়ে গ্যারেজে পড়ে রয়েছে। সচল দু’টির মধ্যে একটি অ্যাম্বুলেন্স ভিআইপি রোগীদের বহনের জন্য ব্যবহৃত হয়। বাদ বাবি অ্যাম্বুলেন্সও কোনো রকমে চলে।

এ বিষয়ে ঘটনাস্থলে থাকা কোতয়ালি মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কামরুল ইসলাম জানান, আটক তিন চালককে ছেড়ে দেওয়া হলে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়।

বাংলাদেশ সময়: ২০৪৬ ঘণ্টা, অক্টোবর ০৭, ২০১৫
এমএ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।