ঢাকা: রাজধানীর অভিজাত এলাকা খ্যাত গুলশানের একমাত্র বিনোদন কেন্দ্র ছিলো ওয়ান্ডারল্যান্ড। সেই স্থানে এখন গাছ-আগাছায় ভরা অরক্ষিত মাঠ।
রাজউক এর মালিকানাধীন এ পার্ক থেকে ২০১২ সালের ৭ মে হাইকোর্টের আদেশে ওয়ান্ডারল্যান্ডকে উচ্ছেদ করা হয়। নাম দেওয়া হয় রাজউক সেন্ট্রাল পার্ক। উচ্ছেদকালে রাজউক কর্তৃপক্ষ ঘোষণা দেয়, ওয়ান্ডারল্যান্ডের স্থানে আধুনিক পার্ক হবে। পার্কটি থাকবে সবার জন্য উন্মুক্ত।
কিন্তু উচ্ছেদের পর ৩ বছরের বেশী সময় পার হয়ে গেলেও এখনো গড়ে উঠেনি পার্ক। ওয়ান্ডারল্যান্ডের স্থাপনা উচ্ছেদের পর ভেতরের গাছ-আগাছায় ভরে গেছে পার্কের সীমানা প্রাচীর ও গ্রিল। অরক্ষিত পার্কে দুটি পকেট গেট দিয়ে সাধারণ মানুষ ভেতরে প্রবেশ করে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, পার্কের ভেতরে ছেলেরা ক্রিকেট খেলছে, কেউবা খেলছে ফুটবল।
পার্কের পাশের চা দোকানদার মো. মোস্তফা বেপারী (৫০) বাংলানিউজকে বলেন, ওহন এখানে কেউ আয়ে না, বিকাল অইলে কিছু পোলাপ্যান বল আইনা লাথি-লুথি মাইরা যায়গা। আমি সকাল থৈন রাত ১০টা পর্যন্ত এহানে থাহি, কারো ভেতরে হাঁটতে দেহি না।
তিনি বলেন, হুনছি কোন ক্ল্যাব য্যান এই পার্ক চালায়। ক্লাবের পোলারাই আসে যায়। বাইরের লোক খুব একটা দেখা যায় না।
তার কথার সূত্র ধরে একটু এগিয়ে সেন্ট্রাল পার্ক লাগোয়া গুলশান ইয়ুথ ক্লাব মাঠে দেখা হয় সিকিউরিটি মাসুদ রানার সঙ্গে। বাংলানিউজকে তিনি বলেন, ওয়ান্ডারল্যান্ড উচ্ছেদ করার পর ভেতরে জঙ্গলে ভরে গেছিল। আমাদের ক্লাব কর্তৃপক্ষ বেশ টাকা পয়সা খরচ করে পার্কটি পরিষ্কার করেছে। পার্কটির ভেতরে ক্লাবের ছেলেরা সপ্তাহে তিনদিন প্র্যাকটিস করে। অন্যদিন ফাঁকাই পড়ে থাকে।
পার্কটি সম্পর্কে রাজউক চেয়ারম্যান প্রকৌশলী জি এম জয়নাল আবেদীন ভূইয়া বাংলানিউজকে বলেন, ওয়ান্ডারল্যান্ড উচ্ছেদের পর আমরা স্থানটিকে গাড়ি পার্কিং এর জায়গা হিসেবে ব্যবহারের সুযোগ দিয়েছিলাম। পরবর্তীতে এলাকাবাসীর অভিযোগের প্রেক্ষিতে সেই সুবিধা বন্ধ করা হয়।
পার্কটি দেখভালের জন্য আপাতত কেউ নেই বলে জানান রাজউক চেয়ারম্যান।
তিনি বলেন, পাশেই গুলশান ইয়ুথ ক্লাব আমাদের জায়গা দখল করে নিয়েছে। শুনেছি চাঁদার বিনিময়ে ক্লাবের সদস্য করা হচ্ছে, তারাই আবার আমাদের পার্কের ভেতর বিনা অনুমতিতে প্রবেশ করে সৌন্দর্য নষ্ট করছে। তারা কিছু অবৈধ স্থাপনাও করেছে। অতিসত্ত্বর এসব স্থাপনা উচ্ছেদ করে পার্কটি সবার জন্য উন্মুক্ত করা হবে। আগামী তিন মাসের মধ্যেই পার্কের ভেতর গাছ ও বসার জায়গা ঠিকঠাক করা হয়েছে।
তিন বছরেও যেটা হয়নি তিন মাসে কিভাবে সেটা করবেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, কিছু তো সমস্যা আছেই। তবে পুরোপুরি না হলেও কিছু অংশ করে দিতে পারবো। ইয়ুথ ক্লাব নিয়ে একটু ঝামেলা আছে। এলাকার কিছু লোক এদের পেট্রোনাইজ করছে। এলাকাবাসীর সহযোগিতা পেলে আমরা দ্রুতই এটি উন্মুক্ত করতে পারবো।
বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) নগরায়ণ ও সুশাসন-সংক্রান্ত উপকমিটির যুগ্ম সম্পাদক স্থপতি ইকবাল হাবিব বাংলানিউজকে বলেন, ঢাকা শহরের উন্মুক্ত স্থানের যে তালিকা আছে তার মধ্যে রাজউক সেন্ট্রাল পার্ক রয়েছে। তাই কোনভাবেই যেন পার্কের ভেতর স্থাপনা করা না হয়। এটি উন্মুক্ত স্থান উন্মুক্তই রাখতে হব।
যেভাবে গড়ে উঠেছিলো ওয়ান্ডারল্যান্ড: রাজউক ও ডিসিসি সূত্র জানায়, ১৯৭২ সালে ঢাকা ইমপ্রুভমেন্ট ট্রাস্ট (ডিআইটি) উন্মুক্ত পার্ক করার জন্য ওই সময়কার গুলশান পৌরসভাকে সাত একর জায়গা দেয়। গড়ে উঠে গুলশান পার্ক। কিন্তু ১৯৯৩ সালে ডিসিসি ওয়ান্ডারল্যান্ড কর্তৃপক্ষের সঙ্গে তিন বছরের চুক্তি করে। আবাসিক এলাকায় গড়ে উঠে বাণিজ্যিক বিনোদন পার্ক। পরে ডিসিসি আর এর নবায়ন করেনি। কিন্তু বিনোদন পার্কটি চলতে থাকে।
রাজউক ওই জায়গার বিষয়ে হাইকোর্টে রিট আবেদন করে। হাইকোর্ট এর রায়ে বলা হয়, নিয়মতান্ত্রিকভাবে জায়গাটি বরাদ্দ দেওয়া হয়নি। তবে যেহেতু জায়গাটি শিশুদের বিনোদন কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে, তাই কোনো বাণিজ্যিক এলাকায় ওয়ান্ডারল্যান্ড কর্তৃপক্ষকে বিকল্প জায়গা দেওয়া যায়।
পরে রাজউক সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগকে জানায়, এত বড় আয়তনের বিকল্প কোনো জায়গা রাজউকের হাতে নেই। তার ভিত্তিতে গত ১৮ মার্চ আপিল বিভাগ রাজউকের পক্ষে রায় দেন। এরপর ২০১২ সালের ৭ মে রাজউক ওয়ান্ডারল্যান্ড উচ্ছেদ করে চারদিকে গ্রিল দিয়ে ঘিরে দেয় এবং গুলশান থানার বিপরীত পাশে রাজউক সেন্ট্রাল পার্কের সাইনবোর্ড বসিয়ে দেয়।
বাংলাদেশ সময়: ০৯১১ ঘণ্টা, অক্টোবর ০৮, ২০১৫
এসএম/জেডএম