ঢাকা: মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় কক্সবাজারের সালামত উল্লাহ খানসহ ১৯ জনের বিরুদ্ধে তদন্তের চূড়ান্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করেছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা। তাদের বিরুদ্ধে একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে হত্যা, ধর্ষণ, লুটপাট, অগ্নিসংযোগ, নির্যাতন, ধর্মান্তর ও দেশান্তরকরণের ১৩টি মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ আনা হয়েছে।
সালামত উল্লাহ খান (৭৭) ছাড়া এ মামলার অন্য আসামিরা হলেন, মৌলভি জকরিয়া শিকদার(৭৮), মো. রশিদ মিয়া বিএ (৮৩), অলি আহমদ (৫৮), মো. জালাল উদ্দিন (৬৩), মৌলভি নুরুল ইসলাম (৬১), মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম সাবুল (৬৩), মমতাজ আহম্মদ (৬০), হাবিবুর রহমান (৭০), মৌলভি আমজাদ আলী (৭০), মৌলভি আব্দুল মজিদ (৮৫), বাদশা মিয়া (৭৩), ওসমান গণি (৬১), আব্দুল শুক্কুর (৬৫), মৌলভি সামসুদ্দোহা (৮২), মো. জাকারিয়া (৫৮), মো. জিন্নাহ ওরফে জিন্নাত আলী(৫৮) মৌলভি জালাল (৭৫) ও আব্দুল আজিজ (৬৮)।
বৃহস্পতিবার (০৮ অক্টোবর) দুপুরে তদন্ত সংস্থার ধানমণ্ডি কার্যালয়ে সংস্থার প্রধান সমন্বয়ক আব্দুল হান্নান খান ও জ্যেষ্ঠ সমন্বয়ক সানাউল হক সংবাদ সম্মেলনে এ তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করেন।
আসামিদের বিরুদ্ধে আনা ১৩টি ঘটনায় ৯৪ জনকে হত্যা, অসংখ্য নারী ধর্ষণ ও নির্যাতন এবং ব্যাপক লুটপাট ও অগ্নিসংযোগের অভিযোগ রয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে আব্দুল হান্নান খান জানান, আসামিরা ১৯৭১ সালে মহান স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় মুসলিম লীগ ও নেজামে ইসলাম পার্টির সক্রিয় নেতাকর্মী ছিলেন। এর মধ্যে সালামত উল্লাহ খান মানবতাবিরোধী অপরাধের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। তার নেতৃত্বে স্বাধীনতাবিরোধী রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মী ও সমর্থক হিসেবে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর পক্ষে কাজ করেছিলেন অন্যরা।
আসামিরা পাকিস্তানি সেনাবাহিনীকে সব ধরনের মানবতাবিরোধী অপরাধ ও গণহত্যা সংঘটনে সার্বিক সহায়তা প্রদান এবং প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে নিজেরাও ওই সব অপরাধ করেছেন বলে তদন্ত প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।
আসামিদের মধ্যে ছয়জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে জানিয়ে তদন্ত সংস্থার সমন্বয়ক জানান, তারা হলেন সালামত উল্লাহ, রশিদ মিয়া, মৌলভি নুরুল ইসলাম, বাদশা মিয়া, ওসমান গণি ও মো. জিন্নাহ। এছাড়া মৌলভি শামসুদ্দোহা গ্রেফতারের পর কারাগারে মারা যান। বাকি ১২ আসামি পলাতক রয়েছে বলেও তিনি জানান।
ট্রাইব্যুনালে এ পর্যন্ত যতোগুলো মামলা এসেছে তার মধ্যে এটিতে আসামির সংখ্যা সবচেয়ে বেশি বলে জানান জ্যেষ্ঠ সমন্বয়ক সানাউল হক।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা (আইও) মো. নূরুল ইসলাম গত বছরের ১২ মে থেকে গত ৮ অক্টোবর পর্যন্ত তাদের অপরাধের তদন্ত শেষ করেন।
তদন্ত প্রতিবেদনে আসামিদের বিরুদ্ধে ১১১ পৃষ্ঠার মূল প্রতিবেদনের সঙ্গে সর্বমোট ১৩৭ পৃষ্ঠার দালিলিক প্রমাণপত্রসহ অন্যান্য নথিপত্র রয়েছে।
মামলায় তদন্তকালে ১২৬ জনের জবানবন্দি গ্রহণ করা হয়।
বৃহস্পতিবারের মধ্যেই তদন্তের চূড়ান্ত এ প্রতিবেদন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউশনে দাখিল করা হবে বলে জানান সানাউল হক। পরে এর ভিত্তিতে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ (ফরমাল চার্জ) তৈরি করে ট্রাইব্যুনালে দাখিল করবেন প্রসিকিউশন।
বাংলাদেশ সময়: ১৩৩৫ ঘণ্টা, অক্টোবর ০৮, ২০১৫
টিএইচ/এএসআর