ঢাকা: ধর্ষিতার দায়িত্ব প্রশাসনকে নিতে এবং তার কাছে প্রকাশ্যে ক্ষমা চাইতে জেলা প্রশাসন ও পুলিশের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন বাংলাদেশ শিশু একাডেমির সভাপতি সেলিনা হোসেন।
‘জাতীয় কন্যাশিশু দিবস-২০১৫’ উদযাপন অনুষ্ঠানে এ আহ্বান জানান তিনি।
বৃহস্পতিবার (০৮ অক্টোবর) দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবের ভিআইপি লাউঞ্জে অনুষ্ঠানটির আয়োজন করে বাংলাদেশ জাতীয় মহিলা আইনজীবী সমিতি।
এবার দিবসটির প্রতিপাদ্য ‘কন্যাশিশুর নিরাপদ পরিবেশ, সমৃদ্ধ করবে আগামীর বাংলাদেশ’।
সেলিনা হোসেন বলেন, যে মেয়েটি ধর্ষণের শিকার, তার দায়িত্ব প্রশাসনের। তাকে নিয়ে জেলা প্রশাসন সভা করে সবার সামনে ক্ষমা চাইবে। পুলিশ প্রশাসনও তাই করবে। পরিবারকে বলবে, ‘তার (ধর্ষিতা) কোনো দোষ ছিল না। তাকে শিক্ষিত করুন। ’ পরিবার থেকে বৈষম্যের শিকার যেন না হয় মেয়েটি। এ বৈষম্যটি সবসময় অভাব বা টাকার জন্য হয় না।
জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের অনারারি মেম্বর সেলিনা হোসেন বলেন, আজ যারা পাচারের শিকার, তাদের আইনজীবী সমিতি নিয়ে এসে পরিচর্যা করে। পরিচর্যার বিষয়টি এখানে মূল বিষয়।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে জাতিসংঘে যাওয়া কিশোরীর উদাহরণ টেনে তিনি বলেন, তাকে বিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেছিল তার পরিবার। সে কাজ করে হলেও পড়ালেখা চালিয়ে নেওয়ার সংকল্প করে। ‘সেভ দ্যা চিলড্রেন’র প্রতিযোগিতায় প্রথম হয়ে সে জাতিসংঘেও পৌঁছে গেছে। ভাষণ দিয়েছে বাল্যবিবাহ নিয়ে।
‘কিশোরী মণি বেগম হয়তো সবাই হবে না, সবার মেধা সমান নয়। কিন্তু শিক্ষা, স্বাস্থ্য তোমার অধিকার। সম্মান, গুণ ও মূল্যায়নের অধিকার তোমার’- বলেন তিনি।
মালালা ইউসুফজাইর উদাহরণ টেনে বলেন, নোবেল পেয়েছে। প্রতিবাদ শিখতে হবে। সে যে কাজ করেছে, গুলিবিদ্ধ হয়েছে, বিশ্ববাসী তার দিকে হাত বাড়িয়েছে। পুরস্কারের টাকা প্যালেস্টাইনের শিশুদের দিয়েছে।
সেলিনা বলেন, সরকার যে উপবৃত্তির ব্যবস্থা করেছে, সব সুযোগ নিতে হবে। এ টাকা যেন অন্য কারও হাতে না যায়, দুর্নীতিবাজদের হাতে না যায়, স্কুল কমিটি যেন সে টাকা মেরে না দেয়, সে বিষয়ে সচেতন হতে হবে।
তিনি বলেন, পুলিশ প্রশাসনকে বলেছি, বাল্যবিবাহ ঠেকাতে হবে। পুলিশ কর্মকর্তা আমাকে বলেন, মেয়ের মা-বাবা জিপে মেয়েকে তুলে দিয়ে বলেছে, আপনারাই তাকে বিয়ে দেবেন। কিন্তু এটি কোনো উত্তর হতে পারে না। দায়িত্ব নিতে হবে।
সংগঠনের নির্বাহী পরিচালক অ্যাডভোকেট সালমা আলীর অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করেন।
এতে প্রধান অতিথি ছিলেন সেলিনা হোসেন ও বিশেষ অতিথি ছিলেন সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব রোকেয়া প্রাচী। আয়োজক সংগঠনের সদস্যরা ছাড়াও কন্যাশিশুদের সংগঠন প্রভাতী মুভমেন্ট’র সদস্যরা।
এদিকে নিজেদের জন্য আলাদা শিশু অধিদপ্তর চায় কন্যাশিশুরা। মেয়েদের বিয়ের বয়স কমপক্ষে ১৮ বছর করা, কন্যাশিশুর অধিকার নিশ্চিতে ন্যায়পাল নিয়োগ, শিশু হত্যা ও নির্যাতনের মামলাগুলো দ্রুত বিচার ও শাস্তি নিশ্চিত, বাল্যবিবাহ নিরোধ আইন অতি দ্রুত চূড়ান্ত ও কার্যকরের দাবি তুলে ধরা হয় অনুষ্ঠানে।
সারাদেশের কন্যাশিশুদের পক্ষ থেকে প্রভাতী মুভমেন্টের সদস্যরা সরকার, সুশীল সমাজ ও নীতি নির্ধারণী পর্যায় বরাবর এসব দাবি তুলে ধরে।
সারাদেশে কন্যাশিশুদের প্রতি নানা নির্যাতনের ঘটনার তথ্যচিত্র অনুষ্ঠানে প্রদর্শন করা হয়। ধর্ষণ, ধর্ষণের পর খুন, পাচার, নির্যাতনসহ বিভিন্ন রোমহর্ষক ঘটনার বিবরণ তুলে ধরা হয় এখানে।
স্বাগত বক্তব্যে সালমা আলী বলেন, শুধু ঢাকাতেই গত সেপ্টেম্বরে ওসিসিতে মামলা হয়েছে ৪১টি। এর মধ্যে ধর্ষণের ঘটনা বেশি। যৌন নির্যাতনের ঘটনাগুলো মামলা পর্যন্ত অনেক সময়ই আসে না। এগুলো আপস করে ফেলা হয় অনেক ক্ষেত্রে। এভাবে অপরাধ আরও বেড়ে যায়।
রোকেয়া প্রাচী বলেন, কান্না নয়, যুদ্ধ করে অধিকার আদায় করতে হবে। সুযোগ নয়, অধিকার পেতে হবে। রাষ্ট্রকেই অধিকার দিতে হবে।
বাংলাদেশ সময়: ১৩৫৫ ঘণ্টা, অক্টোবর ০৮, ২০১৫
এসকেএস/এএ
** আলাদা শিশুঅধিদপ্তরের দাবি কন্যাশিশুদের