লক্ষ্মীপুর: ইলিশের প্রজনন মৌসুম শেষ। আরোপিত সরকারি নিষেধাজ্ঞা উঠে গেছে শুক্রবার রাত ১২টায়।
মেঘনায় এখন শুরু হয়েছে ইলিশ ধরার উৎসব। তাই জেলে পল্লীতে বইছে আনন্দের জোয়ার, জেলেদের মুখে ফুটছে হাসি।
শনিবার (১০ অক্টোবর) ভোরে লক্ষ্মীপুর সদর, রামগতি, কমলনগর ও রায়পুর উপজেলার মেঘনাপাড়ে খোঁজ-খবর নিয়ে এমনটাই জানা গেছে।
স্থানীয় জেলেরা জানান, নিষেধাজ্ঞা থাকায় ১৫দিন তারা মাছ শিকার থেকে বিরত ছিলেন। শুধু মাছ ধরাই একমাত্র পেশা হওয়ায় এ দিনগুলোতে অলস সময় পার করতে হয়েছে তাদের। ধার-দেনা করে সংসার চলেছে। ফের মাছ ধরা শুরু হয়েছে; আশা করি প্রচুর ইলিশ ধরা পড়বে।
কমলনগরের চর ফলকন ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান এএনএম আশরাফ উদ্দিন বলেন, নিষেধাজ্ঞা শুক্রবার (৯ অক্টোবর) রাত ১২টা পর্যন্ত ছিলো। কিন্তু কিছু জেলেরা শুক্রবার সন্ধ্যা থেকে মাছ ধরতে শুরু করে। রাতে মাছঘাট ও স্থানীয় হাট বাজারে ইলিশ বিক্রি হতে দেখা গেছে।
এছাড়াও ঋণগ্রস্ত জেলেরা মহাজনের চাপে পড়ে প্রজনন মৌসুমেও চুরি করে মা ইলিশ শিকার করেছেন।
রায়পুর উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা বেলায়েত হোসেন বাংলানিউজকে জানান, মা ইলিশ রক্ষায় সরকারি আইন বাস্তবায়নে মৎস্য বিভাগের পাশাপাশি প্রশাসনের ব্যাপক ভূমিকা ছিলো। ইউনিয়ন পরিষদ, পুলিশ ও কোস্টগার্ড অভিযানে অংশ নেয়। এ সময় বরফ কলের বিদ্যুৎ সংযোগও বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে। বিভিন্ন এলাকায় সচেতনতা বিষয়ক সভা-সভাবেশ করা হয়েছে। এতে করে স্থানীয়দের জেলেদের মধ্যে সচেতনতা এসেছে। যে কারণে বিগত বছরগুলোর চেয়ে এবার ইলিশ রক্ষার অভিযান অনেক বেশি সফল।
কমলনগর উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা ইব্রাহিম হামিদ শাহিন বলেন, ডিমওয়ালা ইলিশ সংরক্ষণের লক্ষ্যে সরকার ১৫দিনের জন্য মাছ ধরার ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করে। এসময় ইলিশ ক্রয়-বিক্রয়, সংরক্ষণ পরিবহন বাজারজাতকরণ ও মজুত নিষিদ্ধ ছিলো। শুক্রবার রাত ১২টায় আরোপিত সরকারি নিষেধাজ্ঞা উঠে গেছে।
জেলা মৎস্য কর্মকর্তা এসএম মহিব উল্যাহ বলেন, নিষিদ্ধ সময়ে মা ইলিশ ধরার দায়ে জেলায় শতাধিক জেলের জেল-জরিমানা দিয়েছে ভ্রাম্যমাণ আদালত। ডুবিয়ে দেওয়া হয়েছে বেশ কয়েকটি নৌকা। পুড়িয়ে ধ্বংস করা হয়েছে কয়েক লাখ মিটার জাল। জব্দকরা ইলিশ বিতরণ করা হয়েছে এতিমখানায় ও গরীবদের মাঝে। নিষেধাজ্ঞা শেষে জেলেরা ফের নদীতে মাছ শিকারে নেমেছে। আশা করি তাদের জালে প্রচুর ইলিশ ধরা পড়বে।
২৫ সেপ্টেম্বর থেকে ০৯ অক্টোবর পর্যন্ত ইলিশের প্রজনন মৌসুম। এ সময় লক্ষ্মীপুরের রামগতি থেকে চাঁদপুরের ষাটনল পর্যন্ত মেঘনা নদীর প্রায় একশ কিলোমিটার এলাকায় মাছধরায় নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়। পরিবহন, মজুদ, বাজারজাতকরণ ও ক্রয়-বিক্রয় ছিলো নিষিদ্ধ। নিষেধাজ্ঞা অমান্য করায় জেলেদের কমপক্ষে ১ বছর থেকে সর্বোচ্চ ২ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড, ৫ হাজার টাকা পর্যন্ত জরিমানা এবং উভয় দণ্ডে দণ্ডিত করা হয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ১০৩৮ ঘণ্টা, অক্টোবর ১০, ২০১৫
এসএইচ