ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৩ মাঘ ১৪৩১, ০৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৬ শাবান ১৪৪৬

জাতীয়

সাঁকো দিয়ে ঝুঁকিপূর্ণ পারাপার

নুর আলম, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১৫৬ ঘণ্টা, অক্টোবর ১০, ২০১৫
সাঁকো দিয়ে ঝুঁকিপূর্ণ পারাপার ছবি : বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

নীলফামারী: জেলা সদরের চাপড়া সরমজামী ইউনিয়নে যাদুরহাটের পাশে বেড়াডাঙ্গা গ্রামে চাড়ালকাটা নদী। এই নদীর ওপর সেতুর অভাবে বছরের পর বছর বাঁশের সাঁকো দিয়েই চলছে পথচারীদের ঝুঁকিপূর্ণ পারাপার।



নিজেদের প্রয়োজনে এলাকাবাসীই উদ্যোগী হয়ে সাঁকোটি বানিয়েছেন। নদীটির ওপর একটি স্থায়ী সেতু নির্মাণের দাবি তাদের দীর্ঘদিনের। কিন্তু কে শোনে কার কথা?

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বেড়াডাঙ্গা গ্রামকে চাড়ালকাটা নদী দুই ভাগে ভাগ করেছে। সেখানে নদীর ওপর করা হয়েছে প্রায় দুইশ মিটার দৈর্ঘ্যের বাঁশের সাঁকো। ওই সাঁকো দিয়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে দিনের পর দিন চলাচল করছেন এলাকাবাসীসহ দূর-দূরান্তের পথচারী ও শিক্ষার্থীরা।

স্থনীয় কৃষক মেহেরাজ আলী প্রামাণিক (৫০) বাংলানিউজকে বলেন, এই পথে নীলফামারী জেলা সদরের দূরত্ব ১২ কিলোমিটার, আর কিশোরগঞ্জ উপজেলা সদরের দূরত্ব ৭ কিলোমিটার। সে কারণে এ গ্রামের মানুষ কিশোরগঞ্জ উপজেলার সঙ্গে যোগাযোগ বেশি রাখে।

নদীর ওই পাড়ে গাংবের ও বড়–য়া গ্রামের ছেলেমেয়েরা যাদুরহাট ও নীলফামারী শহরের স্কুল-কলেজে লেখাপড়া করে। কয়েক বছর আগে ছেলেমেয়েরা সাঁতরে নদী পার হয়ে স্কুল-কলেজে যেতো। বর্ষার মৌসুমে তাদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যাওয়া প্রায় বন্ধই থাকতো।

যাদুরহাটের ব্যবসায়ী হাসান আলী বাংলানিউজকে বলেন, অনেক জায়গায় ধরণা দিয়ে সেতু না হওয়ায় এলাকাবাসী একটি সমিতি করে নিজেদের মধ্যে চাঁদা তুলে প্রায় ৭ বছর আগে একটি বাঁশের সাঁকো তৈরি করেন। কিন্তু বর্ষার সময় সেই সাঁকোর অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখা কঠিন হয়ে যায়।

তিনি বলেন, প্রতি বছর গ্রামবাসী নিজেদের মধ্যে চাঁদা তুলে সাঁকো তৈরি বা সংস্কারের কাজ করে থাকে। জেলা পরিষদ, উপজেলা প্রশাসন ও স্থানীয় এমপি’র সহযোগিতায় রড সিমেন্ট দিয়ে কিছু খুঁটি তৈরি করার ফলে এখন বছরে অন্তত দুইবার চাটাই ও কিছু বাঁশের খুঁটি লাগালেই সাঁকো ব্যবহার করা যায়।

সাঁকোর এক প্রান্তে একটি টং পেতে বসে টাকা নিচ্ছেন স্থানীয় বাসিন্দা আনারুল ইসলাম (৪০)। এক টাকা, দুই টাকা যে যা দিচ্ছেন তাই নিচ্ছেন তিনি।

বাংলানিউজকে তিনি বলেন, এলাকাবাসীর প্রয়োজনে আমরা প্রায় সাত বছর আগে গাংবের বড়–য়া একতা সমিতি নামে ৯২ সদস্যের একটি সমিতি গঠন করি। আমি ওই সমিতির সদস্য। আমরা প্রথমে প্রত্যেকে নয়শ’ টাকা করে দিয়ে সাঁকোটি নির্মাণ করি।

আনারুল বলেন, এখন প্রতিবছর সাঁকো সংস্কারে লাখ টাকার মতো খরচ হয়। এ বছর খরচ হয়েছে এক লাখ ৩০ হাজার টাকা। গ্রামবাসী  সাঁকো পারাপারে এক দুই টাকা করে দেয়। এ টাকায় আমি প্রতিদিন দুইশ’ টাকা পারিশ্রমিক পাই, আর বাকি টাকা সাঁকো মেরামতের কাজে ব্যয় হয়।

যাদুরহাট স্কুল অ্যান্ড কলেজের দশম শ্রেণির ছাত্রী গাংবের  গ্রামের রেশমা আক্তার বাংলানিউজকে বলেন, সাঁকো পার হয়ে মাত্র এক কিলোমিটার দূরে আমাদের স্কুল। সাড়ে তিন কিলোমিটার দূরে সেতু নির্মাণ করা হলেও এখানে একটি সাঁকো লাগবে। তা না হলে আমরা পার হবো কীভাবে?

চাপড়া সরমজামী  ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আসাদুল জামান চৌধুরী বাংলানিউজকে বলেন, এলাকাবাসীর  দীর্ঘদিনের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে সাঁকোটির প্রায় সাড়ে তিন কিলোমিটার উত্তর-পূর্বে একটি সেতু নির্মাণে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগ জরিপ কাজ শুরু করেছে। এর আগে সেতুটি করার ব্যাপারে আমি স্থানীয় সংসদ সদস্য সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূরের সঙ্গে কথাও বলেছি। তিনি সেতুটি নির্মাণের আশ্বাস দিয়েছিলেন।

এ বিষয়ে নীলফামারী সদর উপজেলা প্রকৌশলী মতিয়ার রহমান বাংলানিউজকে বলেন, ওই  সাঁকো থেকে প্রায় সাড়ে তিন কিলোমিটার দূরে কিশোরগঞ্জ উপজেলার বেলতলী মৌলভীর হাট এলাকায় নদীটির ওপর ১৮০ মিটার একটি পিসি গার্ডার সেতু নির্মাণ করার জন্য নকশার কাজ চলছে।   চলতি অর্থবছরে দরপত্র প্রক্রিয়া শেষে সেতুটির কাজ শুরু করা যাবে।

সেতুটি করতে ছয় থেকে সাত কোটি টাকা খরচ হবে বলেও জানান তিনি।

বাংলাদেশ সময়: ১১৫৪ ঘণ্টা, অক্টোবর ৮, ২০১৫
টিআই/জেডএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।