খুলনা: নদীমাতৃক বাংলাদেশের ইতিহাস, ঐতিহ্য, সংস্কৃতি, আনন্দ আয়োজন, উৎসব ও খেলাধুলা সবকিছুতেই নদী ও নৌকার সরব আনাগোনা। হাজার বছরের ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির সংস্করণ নৌকাবাইচ।
বিলুপ্ত প্রায় এ ঐতিহ্যকে ধরে রাখতে দেশের বৃহত্তম মোবাইল অপারেটর কোম্পানি গ্রামীণফোনের সহায়তায় শনিবার (১০ অক্টোবর) খুলনার রূপসা নদীতে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে দশম নৌকাবাইচ প্রতিযোগিতা।
দুপুর ২টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত রূপসা নদীর ১নং কাস্টম ঘাট থেকে খান জাহান আলী তথা রূপসা সেতু পর্যন্ত এ প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হবে। সবার জন্য উন্মুক্ত থাকবে এই নৌকাবাইচ।
এ উপলক্ষে শনিবার (১০ অক্টোবর) সকাল ১১টায় বর্ণাঢ্য র্যালি বের করে গ্রামীণফোন ও খুলনা নগর সামাজিক ও সাংস্কৃতিক কেন্দ্র।
গ্রামীণফোনের কর্মকর্তা-কর্মী, নগর সামাজিক ও সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের সদস্যসহ খুলনার সর্বস্তরের মানুষ অংশ নেন। র্যালিটি শহরের ময়লাপোতা মোড় থেকে শুরু হয়ে খুলনা শহরের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে।
এ সময় র্যালির শোভা বর্ধনে প্রতীকী নৌকা নিয়ে মাঝি-মাল্লারা এ র্যালিতে অংশ নেন।
আয়োজক সূত্রে জানা যায়, গ্রামীণফোণ নৌকাবাইচ প্রতিযোগিতা চলাকালীন সেলফি কনটেস্ট রেখে দর্শনার্থীদের জন্য বাড়তি উৎসাহের আয়োজন রেখেছে। পছন্দের সেলফি তুলে NSSK.KHULNA ফেসবুক পেজে রোববার রাত ১১টার মধ্যে আপলোড করে দিতে হবে। নৌকাবাইচকে উপজীব্য ধরে যেকোন স্থান থেকে তোলা সেলফি এ প্রতিযোগিতার জন্য বিবেচিত হবে। সেরা ১০টি সেলফি আপলোডকারীকে পুরস্কৃত করা হবে।
এবারের প্রতিযোগিতায় ৬৫ হাত থেকে ৯৬ হাত দৈর্ঘ্যের বড় নৌকা গ্রুপে অংশ নিচ্ছে ১৮টি নৌকা। ছোট নৌকা গ্রুপে অংশ নিচ্ছে ৮টি নৌকা যার দৈর্ঘ্য ৩৯ থেকে ৫০ হাত।
এসব নৌকা আসছে সাতক্ষীরা, তালা, পাইকগাছা, কয়রা, ডুমুরিয়া, তেরখাদা, নড়াইল, কালিয়া, মাগুরা, গোপালগঞ্জ, মাদারীপুর ও খুলনা থেকে।
বিজয়ী বড় গ্রুপে চ্যাম্পিয়ন দলকে ১ লাখ, প্রথম রানার আপ ৬০ হাজার ও দ্বিতীয় রানার আপ ৩০ হাজার টাকা এবং ছোট গ্রুপে চ্যাম্পিয়ন ৫০ হাজার, প্রথম রানার আপ ৩০ হাজার ও দ্বিতীয় রানার আপকে ২০ হাজার টাকা পুরস্কার দেওয়া হবে।
সন্ধ্যা ৭টায় রূপসা সেতু চত্বরের পশ্চিম পাড়ে পুরস্কার বিতরণী ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান রয়েছে। অনুষ্ঠানে দেশের প্রখ্যাত সংগীত শিল্পী আঁখি আলমগীরসহ স্থানীয় জনপ্রিয় শিল্পীরা অংশ নেবেন।
আয়োজনের প্রধান সমন্বয়কারী খুলনা জেলা প্রশাসক মো. মোস্তফা কামাল।
উদ্বোধনী ও পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি থাকবেন এসএম মোস্তফা রশিদী সুজা এমপি। বিশেষ অতিথি থাকবেন মো. মিজানুর রহমান মিজান এমপি, খুলনা সিটি মেয়র মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান মনি, বিভাগীয় কমিশনার মো. আবদুস সামাদ, ডিআইজি এস.এম মনির-উজ-জামান বিপিএম, জেলা পরিষদ প্রশাসক শেখ হারুনুর রশীদ, জেলা প্রশাসক মো. মোস্তফা কামাল, পুলিশ সুপার মো. হাবিবুর রহমান, বিপিএম, গ্রামীণফোনের হেড অফ রিজিওনাল সেলস-খুলনা এস.এম সাজ্জাদ হোসেন ও বৃহত্তর খুলনা উন্নয়ন সংগ্রাম সমন্বয় কমিটির সভাপতি শেখ আশরাফ-উজ-জামান।
নগর সামাজিক ও সংস্কৃতিক কেন্দ্রের সভাপতি মোল্লা মারুফ রশীদ বাংলানিউজকে জানান, গ্রামীণফোনের সহায়তায় ১০ম নৌকাবাইচ প্রতিযোগিতার সকল প্রস্তুতি সপন্ন করা হয়েছে। নদীর দু’পাড়ে লাখো মানুষের স্বতঃস্ফূর্ত উপস্থিতি প্রতিযোগীদের উৎসাহীত করবে। নগর জীবনের ব্যস্ততা, কোলাহল, ক্লেদ, পঙ্কিলতা, নানা টানাপোড়েন ভুলে ক্ষণিকের উৎসবের আমেজে মাতবে খুলনাবাসী।
তিনি জানান, নৌকা বাইচ শুরু হওয়ার আগে দুই প্রান্তে কার্গো, বার্জসহ অন্যান্য জলযান চলাচল বন্ধ থাকবে। নৌকাবাইচ চলাকালীন ব্রিজের উপরে মহিলা ও শিশু দর্শনার্থী ছাড়া পুরুষ উঠতে পারবেন না।
সেতুর পশ্চিম প্রান্তে কোনো গাড়ি পার্কিং করা যাবে না। দুর্ঘটনা এড়াতে নদীর দুই পাড়ের পল্টুনে কোনো দর্শক না ওঠে সেদিকে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।
এ ছাড়া নৌকাবাইচ চলাকালে রূপসা সেতুতে যানজট এড়ানোর লক্ষ্যে গল্লামারী-বটিয়াঘাটা রোড হতে রূপসা সেতু পর্যন্ত এবং রূপসা ফেরীঘাট হতে রূপসা সেতু পর্যন্ত ট্রাফিক পুলিশ মোতায়েন ও যান চলাচল নিয়ন্ত্রণ করা হবে।
বাংলাদেশ সময়: ১১২৫ ঘণ্টা, অক্টোবর ১০, ২০১৫
এমআরএম/বিএস
** রূপসা পাড় মাতাবে গ্রামীণফোনের নৌকাবাইচ