দাসিয়ারছড়া, কুড়িগ্রাম থেকে: অধুনালুপ্ত ছিটমহলবাসীদের নব প্রস্ফূটিত ফুলের সঙ্গে তুলনা করে তাদের সার্বিক উন্নয়নে যা যা প্রয়োজন তার সব করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
বৃহস্পতিবার (১৫ অক্টোবর) কুড়িগ্রামের বিলুপ্ত ছিটমহল দাসিয়ারছড়ার কালিরহাট বাজার সংলগ্ন প্রস্তাবিত গার্লস হাইস্কুল মাঠে সুধী সমাবেশে তিনি এ প্রতিশ্রুতি দেন।
বিলুপ্ত ছিটমহলগুলোর ব্যাপক উন্নয়নে সরকারের আন্তরিকতার কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, এসব এলাকা আর অন্ধকারে থাকবে না। আলোকিত হবে।
সেখানকার নতুন নাগরিকদের উদ্দেশ্যে শেখ হাসিনা বলেন, আপনাদের দুঃখের রজনী শেষ হয়েছে। নতুন সূর্যের আলোয় আলোকিত হয়ে আলোর পথে যাত্রা শুরু হয়েছে। এ যাত্রা অব্যহত থাকবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, অনেক সময় চলে গেছে। এই দীর্ঘ সময় পিছনে পড়ে থাকার বঞ্চনা কিভাবে কাটিয়ে ওঠা যায়, সে ব্যাপারে সরকার আন্তরিক। আপনারা শুধু আমাদের সহযোগিতা করবেন, দোয়া করবেন। আমরা দায়িত্ব নিয়ে বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মকাণ্ড হাতে নিয়েছি।
তাদের শিক্ষা, চিকিৎসা, বাসস্থান, কর্মসংস্থানের পাশাপাশি এসব এলাকায় বিদ্যুতায়ন, অবকাঠামো উন্নয়ন, ইন্টারনেট সেবা প্রদানসহ বিভিন্ন নাগরিক সুবিধা দিতে সরকারের পরিকল্পনার কথাও তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী।
সাবেক ছিটমহলগুলোকে নব প্রস্ফূটিত ফুল হিসেবে আখ্যা দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আপনারা এখন বাংলাদেশের সন্তান, নাগরিক। বাংলাদেশেরই আপনজন। এখানকার প্রতিটি মানুষ রাষ্ট্রের একেকজন নাগরিক।
আপনারা ভুলেও এখন আর নিজেদেরকে ছিটের বাসিন্দা বা ছিটি মনে করবেন না, বলবেন না।
দাসিয়ারছড়ার মানুষদের উদ্দেশ্যে শেখ হাসিনা বলেন, দাসিয়ারছড়ার মানুষগুলো ফুলবাড়ির একগুচ্ছ প্রস্ফূটিত ফুলের বাগান। এখানকার বাসিন্দারা একেকটি ফুল।
১৪ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন এবং ৭৫ শতাংশ মানুষকে বিদ্যুৎ সুবিধা দেওয়ার কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সেদিন বেশি দূরে নয়, আমরা প্রতিটি ঘরে ঘরে আলো জ্বালাতে পারবো। শুধু বিদ্যুতের আলো নয়, শিক্ষার আলো জ্বালবো। স্বাস্থ্য সেবা দেবো।
প্রধানমন্ত্রী তার বক্তব্যে দেশের বিভিন্ন এলাকায় সদ্য বিলুপ্ত ছিটমহলবাসীর কল্যাণে সরকারের নেওয়া বিভিন্ন পদক্ষেপের কথাও উল্লেখ করেন।
প্রধানমন্ত্রী অনুষ্ঠানের শুরুতে বিদ্যুৎ সংযোগ প্রদান কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন। পরে তিনি ইডকলের প্রোগ্রামের অধীনে সোলার হোম সিস্টেম বিতরণ করেন।
প্রধানমন্ত্রী দাসিয়ারছড়ার ৬৪৩টি বিদ্যুৎ সংযোগ উদ্বোধন ছাড়াও আরো কয়েকটি জেলার বিলুপ্ত ছিটমহলের বাসিন্দাদের জন্য বিদ্যুৎ সংযোগ উদ্বোধন করেন। সব মিলিয়ে তিনি আড়াই হাজারের মতো বিদ্যুৎ সংযোগের উদ্বোধন করেন।
কুড়িগ্রাম জেলা প্রশাসক খান মো. নুরুল আমিনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে জ্বালানি ও বিদ্যুৎ উপদেষ্টা তৌফিক-ই এলাহিসহ স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতারা বক্তব্য রাখেন।
দাসিয়ারছড়ার বাসিন্দাদের পক্ষ থেকে বক্তব্য রাখেন হৈমন্তি শুক্লা।
সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন ডেপুটি স্পিকার ফজলে রাব্বি মিয়া, সব্যসাচী লেখক সৈয়দ শামসুল হক, আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ডা. দীপু মনি, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু, আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক খালিদ মাহমুদ চৌধরী প্রমুখ।
এর আগে প্রধানমন্ত্রী সকালে হেলিকপ্টারে ঢাকা থেকে ফুলবাড়ি আসেন। বেলা সাড়ে ১০টার পর ফুলবাড়ি হেলিপ্যাডে অবতরণ করেন তিনি। পরে সেখান থেকে ১৯ কিলোমিটার সড়ক পথে দাসিয়ারছড়া যান। বেলা ১১ টা ১ মিনিটে তিনি অনুষ্ঠানস্থলে পৌঁছান।
বিকেলে প্রধানমন্ত্রী কুড়িগ্রাম সরকারি কলেজ মাঠে আওয়ামী লীগ আয়োজিত এক জনসভায় অংশগ্রহণ করবেন। সেখানে তিনি ৩১টি উন্নয়ন কাজের উদ্বোধন ও ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করবেন।
প্রধানমন্ত্রীর আগমন উপলক্ষে দাসিয়ারছড়াসহ পুরো কুড়িগ্রাম জেলায় উৎসবমুখর পরিবেশ বিরাজ করছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৩৩১ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৫, ২০১৫
এমইউএম/জেডএস/এএসআর
** আপনারা এখন নাগরিক, একেকজন একেকটি ফুল
** বিদ্যুতের আলোয় আলোকিত হলো নীলফামারীর বিলুপ্ত ৪ ছিটমহল
** দাসিয়ারছড়ায় প্রধানমন্ত্রী