গোপালগঞ্জ: গুড়া দুধ চুরি করে খাওয়ার অপবাদ দিয়ে নির্মম নির্যাতন চালানো হয়েছে লিয়া (১০) নামে এক শিশু গৃহকর্মীর উপর। তার শরীরের বিভিন্ন স্থানে গরম খুন্তির ছ্যাকা দিয়েছেন গৃহকর্ত্রী।
সম্প্রতি ঢাকার খিলগাঁওয়ে গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার বড়ফা গ্রামের রহমান মিনার মেয়ের উপর এ নির্যাতন করা হয়।
শুক্রবার (১৬ অক্টোবর) শিশুটিকে তার পরিবার গোপালগঞ্জ ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করে।
এদিকে, কিছু নগদ টাকার বিনিময়ে ঘটনাটি ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করছেন গ্রামের প্রভাবশালীরা।
৩ বোন ও ১ ভাইয়ের মধ্যে সবার বড় লিয়া। ৬ মাস আগে একই গ্রামের গ্রাম ডাক্তার শাহাবুদ্দিন শিশুটিকে ঢাকার খিলগাঁওয়ের গোড়ান এলাকায় তার মেয়ে তিম্মীর বাসার কাজের জন্য দিয়ে আসেন।
শিশু লিয়া জানায়, কাজে কোনো ভুল হলেই তাকেই মারধর করা হতো। ঠিক মতো খেতে দেওয়া হতো না। কোরবানি ঈদের পরদিন গৃহকর্ত্রী তিম্মীর বড় মেয়ে ছোট মেয়ের গুড়া দুধ খেয়ে ফেলে। কিন্তু গৃহকর্তা নজরুল ইসলাম ও তার স্ত্রী চুরির অপবাদ দিয়ে লিয়ার শরীরের বিভিন্ন স্থানে খুন্তির ছ্যাকা দেয়। পরে বেলন দিয়ে পিটিয়ে ৪টা দাঁত ভেঙে দেয়।
তখন তার চিৎকার শুনে শাহনাজ নামে প্রতিবেশী খিলগাঁও থানায় খবর দিলে পুলিশ এসে তাকে উদ্ধার করে এবং নজরুল ও তিম্মীকে থানায় নিয়ে যায়। পরে তাদের ছেড়ে দেয় পুলিশ।
শিশুটি আরো জানান, এরপর তাকে গৃহকর্তা নজরুল ইসলাম বাড়িতে এনে নামমাত্র চিকিৎসা দেন। গত ১৪ অক্টোবর রাতে তাকে নজরুল ইসলাম গোপালগঞ্জে শ্বশুরবাড়িতে এনে রেখে যান। পরে তার মা এসে তাকে বাড়িতে নিয়ে যায়।
রোববার (১৮ অক্টোবর) হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, শিশুটির শরীরে আঘাতের চিহ্ন স্পষ্ট। মুখ, হাতসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে ঘাঁ। কিছু ক্ষত প্রায় শুকিয়ে গেছে।
শিশু লিয়ার মা মর্জিনা বেগম বলেন, গ্রামের মাতবররা বিষয়টি ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করছেন। আমাদের টাকা দিয়ে মুখ বন্ধ করতে চাইছে। আমরা এখন ভয়ে আছি। আমরা টাকা চাইনা, এর উপযুক্ত বিচার চাই।
লিয়ার বাবা রহমান মিনা বলেন, শনিবার রাতে সাবেক চেয়ারম্যান মজিবর রহমান মিনাসহ গ্রামের প্রভাবশালীরা মাতবর ফারুক মিনার বাড়িতে সালিশ ডাকেন। সেখানে ১ লাখ ১০ হাজার টাকা দিয়ে মীমাংসার চাপ দেন তারা।
বিষয়টিকে ন্যাক্কারজনক উল্লেখ করে স্থানীয় জালালাবাদ ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান মিনা বলেন, এ ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের শাস্তি হওয়া দরকার। তবে মেয়েটির আর্থিক লাভের জন্য সালিশ করেছি।
গৃহকর্ত্রী তিম্মীর বাবা শাহাবুদ্দিন মিনা বলেন, আমার জামাই লিয়াকে বাড়িতে দিয়ে চলে গেছেন। তবে কি হয়েছে তা আমার পক্ষে বলা সম্ভব নয়। আমি এর নিন্দা জানাই।
এ ব্যাপারে অভিযুক্ত নজরুল ইসলাম ও তার স্ত্রীর তিম্মীর সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করে তাদের মোবাইল ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে গোপালগঞ্জ সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সেলিম রেজা বাংলানিউজকে জানান, ঘটনাটি যেহেতু ঢাকায় তাই সঠিক বিচার পেতে হলে সেখানেই অভিযোগ দিতে হবে। শিশুটির পরিবারকে সে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ২০৫৯ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৮, ২০১৫
এসআর