ঢাকা: বিদেশিদের প্রতি বাংলাদেশের উষ্ণ আতিথিয়েতার প্রশংসা করলেন ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত মার্শা ব্লুম বার্নিকাট।
একই সঙ্গে দুই বিদেশি হত্যার পর বিদেশি নাগরিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করায় বাংলাদেশ সরকারের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন তিনি।
সোমবার (১৯ অক্টোবর) সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে নারীর ক্ষমতায়ন ও জেন্ডার সমতা বিষয়ক এক আড্ডায় প্রশ্নোত্তরে এ মন্তব্য করেন মার্কিন রাষ্ট্রদূত।
তিনি বলেন, ‘দুই মর্মান্তিক হত্যাকাণ্ড আমাদের সবাইকে নাড়া দিয়েছে। বিদেশিদের প্রতি বাংলাদেশের উষ্ণ আতিথিয়েতাকে আমরা বেশ প্রশংসা করি।
আমাদের অনুরোধে যথেষ্ট আন্তরিকতার সঙ্গে সাড়া দিয়ে নিরাপত্তা নিশ্চিত করায় বাংলাদেশ সরকারের প্রতি আমরা কৃতজ্ঞ। ’
এছাড়া আইনের মাধ্যমে অধিকার প্রতিষ্ঠার পাশাপাশি সমাজের মানসিকতা পরিবর্তন নারীর ক্ষমতায়ন ও অগ্রগতির নেপথ্যের কারণ বলে মনে করেন এই মার্কিন নারী কূটনীতিক।
ফেসবুক কথোপকথনে বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রে নারীর ক্ষমতায়ন, তৈরি পোশাক শিল্পখাতে বাংলাদেশের উত্তরোত্তর এগিয়ে যাওয়ার কথা, জিএসপি ইস্যু, দুই বিদেশি হত্যা পরবর্তী নিরাপত্তা পরিস্থিতি, নারীর প্রতি যৌন হয়রানিসহ নানা বিষয়ে কথা বলেছেন বার্নিকাট। একইসঙ্গে নিজের অভিজ্ঞতার কথাও তুলে ধরেন তিনি।
জিএসপি প্রসঙ্গে মার্কিন দূত বলেন, জিএসপি রহিত করার পরও মার্কিন বাজারে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক রফতানি প্রতি বছর বাড়ছে। আর এই রফতানিতে এদেশের নারীরাও লাভবান হচ্ছেন।
‘বাংলাদেশের পোশাক শিল্পে নারীরাই চালিকা শক্তি। এখনও যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশি পোশাকের বড় বাজার। আর জিএসপির আওতায় কোনো দেশের পোশাক খাতই মার্কিন বাজারে সুবিধা পায়নি। জিএসপির আওতায় এক শতাংশেরও কম পণ্য মার্কিন বাজারে যাচ্ছে,’ বলেন তিনি।
বার্নিকাট বলেন, আমি বিশ্বাস করি, বাংলাদেশ জিএসপি ফিরে পেতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিচ্ছে।
নারীর ক্ষমতায়ন প্রসঙ্গে তার মায়ের সময়ের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, বাংলাদেশের নারীর ক্ষমতায়নের কথা ভাবতে গেলে আমার নিজের দেশের অভিজ্ঞতায় চলে যাই। চল্লিশের দশকে রেকর্ড সংখ্যক মার্কিন নারীর সঙ্গে আমার মাও কাজে যোগ দিয়েছিলেন। যেমনটা আজকের বাংলাদেশের নারীরা করছেন। যদিও আমার মা পরবর্তীতে পরিবারকে সময় দিতে চাকরি ছেড়ে দিয়েছিলেন। তিনি কর্মক্ষেত্রের অভিজ্ঞতার আলোকে আমার বোন ও আমাকে গড়ে তোলেন। একইসঙ্গে আমাদের ভালো মা, ভাল স্ত্রী হতেও শিখিয়েছেন তিনি।
যৌন হয়রানি বাংলাদেশের নারীদের এগিয়ে চলার পথে অন্তরায় এমন এক প্রশ্নের জবাবে বার্নিকাট বলেন, বাংলাদেশের নারীরা অনেক সমস্যা মোকাবেলা করছে। তবে এটিও সত্যি যে, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে অনেক উন্নতিও হয়েছে। ঘরে বাইরে নারীদের বলিষ্ঠ উপস্থিতি বাড়ছে দেখে আমার মন ভরে উঠে।
গণতান্ত্রিক সমাজে পারস্পরিক সহযোগিতা থাকতে হবে এমন মন্তব্য করে তিনি বলেন, জাতীয় উন্নয়নে নারীর ক্ষমতায়ন গুরুত্বপূর্ণ। এটি বিবেচনায় রেখে সরকারের পাশাপাশি সবাইকে নিজেদের ক্ষমতায়নে কাজ করে যেতে হবে।
যুক্তরাষ্ট্র নারীর ক্ষমতায়নের কথা বললেও এখনও সেদেশে প্রেসিডেন্ট পদে কোনো নারীকে দেখা যায়নি। এর মানে কী যুক্তরাষ্ট্র নারী প্রেসিডেন্ট দেখতে এখনও প্রস্তুত নয়? এমন এক প্রশ্নের জবাবে বার্নিকাট বলেন, অনেক বাংলাদেশি আমাকে এই প্রশ্নটি করেন। আমি শুধুই গর্বের সঙ্গে বলবো, মার্কিন ইতিহাসে প্রথমবারের মতো দুই বড় দলেরই প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হিসেবে নারীদের দেখা যাচ্ছে। আসুন, দেখি ২০১৬ সালের নভেম্বরে কী ঘটে?
বাংলাদেশ সময়: ০০৫৬ ঘণ্টা, অক্টোবর ২০, ২০১৫
জেপি/এমএ