ঢাকা: বাঙালি হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের বৃহৎ ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজায় মঙ্গলবার মহাসপ্তমী। এদিন সকালে কলাবউকে স্নান করিয়ে শুরু হয় মহাসপ্তমী।
ঢাক-ঢোল বাজিয়ে ও উলুধ্বনি দিয়ে মা দুর্গার ষোড়শ উপচারে সপরিবারে পূজা দিলেন ভক্তরা। পূজায় শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখতে রাজধানীসহ সারা দেশের গুরুত্বপূর্ণ পূজামণ্ডপগুলোকে চার স্তরের নিরাপত্তা কার্যকর করা হয়েছে।
মঙ্গলবার (২০ অক্টোবর) প্রাতে দেবীর নবপত্রিকা প্রবেশ স্থাপন ও সপ্তম্যাদি কল্পারম্ভ এবং অপরাহ্নে মহাসপ্তমী বিহিত পূজা। এছাড়া অন্যান্য আচার অনুষ্ঠানের মধ্যে রয়েছে দুস্থদের মাঝে খাবার বিতরণ এবং সন্ধ্যায় আরতি প্রতিযোগিতা।
মহাসপ্তমীর দিন সকালে ত্রিনয়নী দেবী দুর্গার চক্ষুও দান করা হয়। এদিন ভক্তরা মা দুর্গাকে পুষ্প, নৈবেদ্য, আসন, বস্ত্র, চন্দন, ধূপ ও দীপ দিয়ে পূজা করেন। মহাসপ্তমী উপলক্ষে সন্ধ্যায় বিভিন্ন পূজামণ্ডপে হবে ধর্মীয় ভক্তিমূলক গান, রামায়ণ পালা ও আরতি প্রতিযোগিতা।
সকালে রাজধানীর আর কে মিশন রোডের রামকৃষ্ণ মিশন ও মঠ ঘুরে দেখা গেল ভক্তরা হাজির হয়েছেন মাদুর্গাকে পূজা দিতে। অনেকে এসেছেন সপরিবারে।
মিশনের মৃদুল মহারাজ বাংলানিউজকে জানালেন, এখানে মঙ্গলবার সকাল সাতটা পনের মিনিটে সপ্তমী পূজা শুরু হয়েছে। পূজা শেষে সকাল সাড়ে ১০টায় ভক্তরা মা’কে ফুল, বেলপাতা দিয়ে অঞ্জলী দিয়েছেন। অঞ্জলী দিয়ে মা’কে প্রণাম শেষে ভক্তরা প্রসাদ গ্রহণ করছেন।
বারডেম হাসপাতালের ফিন্যান্স ডাইরেক্টর বিশ্বজিৎ বাবু বাংলানিউজকে জানান, কাজের চাপে পরিবারকে সময় দিতে পারি না। আর ঢাকা শহরের যে অবস্থা। যানজটের কারণে কোথাও বের হতে ইচ্ছে করে না। পনের মিনিটের পথ পাড়ি দিতে লাগে একঘণ্টা। বেড়াতে বেড়িয়ে বিরক্তি বাড়িয়ে কি লাভ? কিন্তু পূজা বলে কথা। বউ-সন্তানের কথা তো চিন্তা করতে হবে। তাই মা’কে দেখা, প্রণাম করা এবং ঘোরা-ফেরা। অর্থাৎ রথ দেখা ও কলা বেচা একই সঙ্গে।
বেলা গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে মণ্ডপে মণ্ডপে বাড়ছে দর্শনার্থীদের আনাগোণা। রোববার দেবী দুর্গার বোধন, আমন্ত্রণ ও অধিবাসের মধ্য দিয়ে শুরু হয় এই শারদীয় দুর্গোৎসবের আনুষ্ঠানিকতা।
বুধবার (২১ অক্টোবর) মহাষ্টমী। সকালে পূজা, সন্ধিপূজা ও মধ্যাহ্নে মহাপ্রসাদ বিতরণ। মহাষ্টমীতে সবচেয়ে বড় আকর্ষণ সকাল ১০টায় কুমারী পূজা। এক বালিকাকে দেবীর আসনে বসিয়ে মাতৃজ্ঞানে পূজা দেওয়া হবে।
বৃহস্পতিবার (২২ অক্টোবর) মহানবমী এবং বিজয়া দশমী। তবে শুক্রবার (২৩ অক্টোবর) বিজয়া শোভাযাত্রার মধ্য দিয়ে প্রতিমা বিসর্জন হবে। পাঁচ দিনব্যাপী এই বর্ণিল উৎসব শেষ হবে শুক্রবার।
সার্বিক দিক বিবেচনায় রেখে শুক্রবার সন্ধ্যার মধ্যে প্রতিমা বিসর্জনের জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বলে বাংলানিউজকে জানান, বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি কাজল দেবনাথ।
এবার সারা দেশে ২৯ হাজার ৭৪টি মণ্ডপে দুর্গাপূজা হচ্ছে। গত বছর এই সংখ্যা ছিল ২৭ হাজার ৮৫৮। ঢাকায় ২২৩টি মণ্ডপে দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। গত বছর এই সংখ্যা ছিল ২১৬টি।
তিথি মোতাবেক সোমবার (১২ অক্টোবর) মহালয়ার মধ্য দিয়ে শুরু হয়েছে এই বসুন্ধরায় দেবী আগমনের বার্তা। মহালয়ায় পিতৃপক্ষ থেকে দেবীপক্ষের দিকে যাত্রা শুরু।
পূজা নির্ঘণ্ট করতে ঢাকা মহানগরের ২২২টি পূজামণ্ডপ ঘিরে চার স্তরের নিরাপত্তা রয়েছে। প্রথম স্তরে প্রতিটি মণ্ডপকে ঘিরে আয়োজকদের নিজস্ব স্বেচ্ছাসেবক বাহিনী ও পুলিশ। দ্বিতীয় স্তরে সিসি ক্যামেরা, আর্চওয়ে, মেটাল ডিটেক্টর, স্টিল ক্যামেরা ও মুভি ক্যামেরা নিয়ে বিশেষ টিম।
তৃতীয় স্তরে গোয়েন্দা পুলিশ সোয়াত, র্যাব। চতুর্থ স্তরে টহল পুলিশ, গোয়েন্দা পুলিশ, ডগ স্কোয়াড, সোয়াত, বোমা ডিসপোজাল ইউনিট।
প্রতিবারের মতো বুধবার এবারও ঢাকার রামকৃষ্ণ মিশন ও মঠে কুমারী পূজা দেখতে মানুষের ঢল নামবে। সন্ধ্যায় ধর্মীয় ভক্তিমূলক গান, আরতির পর রাতে সন্ধি ও কালীপূজা অনুষ্ঠিত হবে।
এবার তিথির কারণে বেশ কিছুটা তারতম্য এসেছে। সে কারণে বৃহস্পতিবার (২২ অক্টোবর) একইদিন পড়েছে মহানবমী এবং বিজয়া দশমী। পূজার নির্ঘণ্টে একই দিনে নবমী ও দশমী পূজা হলেও উৎসব ছাড়তে নারাজ আয়োজকরা।
বাংলাদেশ সময়: ১৫২৫ ঘণ্টা, অক্টোবর ২০, ২০১৫
এসএস/এমজেএফ/