ঢাকা, রবিবার, ১৯ মাঘ ১৪৩১, ০২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০২ শাবান ১৪৪৬

জাতীয়

বিচার বিভাগের পৃথকীকরণ: আকাশে ঘুড়ি, হাতে নাটাই

বাংলানিউজ টিম | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫১২ ঘণ্টা, অক্টোবর ৩১, ২০১৫
বিচার বিভাগের পৃথকীকরণ: আকাশে ঘুড়ি, হাতে নাটাই ছবি: সোহাগ শেখ- বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

ঢাকা: বিচার বিভাগ পৃথকীকরণের আট বছর পূর্তির মুক্ত আলোচনা সভায় অংশ নিয়ে বিচারপতি, আইনজীবী এবং সংবিধান বিশেষজ্ঞরা দ্বৈত ব্যবস্থার সমালোচনা করেছেন।
 
তারা বলছেন, বিচার বিভাগ পৃথক করা হলেও প্রয়োজনীয় অবকাঠামো এবং লোকবল সঙ্কটসহ নির্বাহী বিভাগের ইচ্ছার ওপর অনেক কিছুই নির্ভর করছে।


 
নির্বাহী বিভাগ থেকে বিচার বিভাগ পৃথকীকরণের আট বছর পূর্তি উপলক্ষে শনিবার (৩১ অক্টোবর) জাতীয় প্রেসক্লাব মিলনায়তনে এ মুক্ত আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।
 
সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ব্যারিস্টার মইনুল হোসেন সভায় বলেন, একমাত্র গণতন্ত্রকে রক্ষা করে বিচার বিভাগের স্বাধীনতা রক্ষা করতে পারবো। গণতন্ত্র রক্ষা না করা হলে বিচার বিভাগের স্বাধীনতা, আইনের শাসন রক্ষা হয় না।
 
তিনি বলেন, দলীয় রাজনীতির কারণে গণতন্ত্র অসহায় হয়ে গেছে। দলীয়করণ করে বিচারকদের নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে। গণতন্ত্র রক্ষার জন্য সাংবাদিক-আইনজীবীদের দলীয় হলে হবে না।
 
বিচার বিভাগ পৃথকীকরণ নিয়ে মানবাধিকার কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান বিচারপতি আমিরুল কবীর চৌধুরী বলেন, আকাশে ঘুড়ি উড়িয়ে দিয়ে নাটাই হাতে রেখে দেবো তা হতে পারে না।
 
বাহাত্তরের সংবিধানে ফিরে যেতে হলে পুরোপুরি ফিরে যেতে হবে উল্লেখ করে সাবেক মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সচিব আলী ইমাম মজুমদার বলেন, বিচারক স্বাধীন থাকুন, স্বাধীনভাবে কাজ করুন। অন্যের ওপর নির্ভরশীল হলে ন্যায়বিচার নাও হতে পারে।
 
বিচার বিভাগ পৃথক হলেও দ্বৈত শাসনের গ্যাঁড়াকলে পড়ে অনেকে সমস্যায় পড়েছেন বলে মন্তব্য করেন বার কাউন্সিলের সহ সভাপতি অ্যাডভোকেট আবদুল বাসেত মজুমদার। বিচার বিভাগ সম্পূর্ণ স্বাধীন মন্তব্য করে তিনি বলেন, মানুষের সত্যিকারের বিচার পেতে হলে বিচারক ও আইনজীবী সবারই দায়িত্ব আছে। বিচার বিভাগের পৃথককীকরণের পথ অনেক বাকি আছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
 
রুলস অব ল’ না থাকলে, লাখ লাখ মামলা জমে থাকলে, বদলিনির্ভর হলে বিচার বিভাগকে স্বাধীন হিসাবে দেখা যাবে না বলে মন্তব্য করেন সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি জয়নুল আবেদীন। তিনি বলেন, মাজদার হোসেন মামলার মূল স্পিরিট বছরের পর বছর বাস্তবায়িত হয়নি। বিচারকরা প্রকৃতপক্ষে স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারছেন কি-না, তা দেখতে হবে। দ্বৈত শাসন জুডিশিয়ারিতে থাকতে পারে না। সমস্ত হায়ার জুডিশিয়ারি নির্বাহীদের হাতে। সংসদের হাতে অভিশংসন হয়। সর্বোচ্চ আদালত সংসদের দিকে তাকিয়ে থাকলে স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারবেন না।
 
সুপ্রীম কোর্টের সাবেক রেজিস্ট্রার ইকতেদার আহমেদ বলেন, অনেক মামলায় আইন মন্ত্রণালয়ের মতামতে জামিন ও রিমান্ড হয়। সম্মানিত ব্যক্তিদের হাতজোড় করিয়ে রাখা সংবিধানের পরিপন্থি বলেও মন্তব্য করেন তিনি।  
 
হিউম্যানিটি ফাউন্ডেশনের আয়োজনে সভায় ‘বিচার বিভাগ পৃথকীকরণের আরো অনেক পথ বাকি’ শীর্ষক মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সংবিধান ও আইন বিশ্লেষক মিজানুর রহমান খান।
 
প্রবন্ধে তিনি বলেন, মাসদার হোসেন মামলার মাধ্যমে অধ:স্তন আদালতে যে দ্বৈত শাসন বা ‘ডায়ারকি’ ব্যবস্থাকে মেনে নেওয়া হয়েছে তা সংবিধানের মৌলিক কাঠামোকে গুরুতরভাবে আঘাত করেছে।
 
বিচার বিভাগ পৃথকীকরণের আট বছরেও বিচার প্রশাসনের লোকবল ও বিচারক সংকট, মামলার ভার ইত্যাদি বিষয়ে তিনি প্রবন্ধে তুলে ধরেন।
 
তিনি বলেন, দ্বৈত ব্যবস্থা বিচার বিভাগের স্বাধীনতার জন্য প্রধান বাধা।
 
সভা সঞ্চালনায় ছিলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ।
 
হিউম্যানিটি ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান এআই মাহবুব উদ্দিন আহমেদের সভাপতিত্বে নির্বাহী পরিচালক শফিকুর রহমান সভায় উপস্থিত ছিলেন।
 
** গণতন্ত্র রক্ষা করেই বিচার বিভাগের স্বাধীনতা সম্ভব
**বিচার বিভাগ পৃথকীকরণের আট বছর পূর্তিতে আলোচনা

বাংলাদেচ সময়: ১৫০৯ ঘণ্টা, অক্টোবর ৩১, ২০১৫
এমআইএইচ/এএসএস/এএসআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।