ঢাকা: বিদেশি সাহায্যপুষ্ট বিভিন্ন এনজিও বা সংস্থার অর্থের উৎস খতিয়ে দেখবে সরকার। বিশেষ করে মানবাধিকার নিয়ে যেসব এনজিও এবং সংগঠন কাজ করে তাদের আয়ের উৎস কী, কোথা থেকে কোন খাতে অর্থ এনে কোন খাতে ব্যয় করে সরকার তা নজরে রাখতে চায়।
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও সরকারের সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র জানায়, বেশকিছু দিন ধরেই এ বিষয়টির গুরুত্ব অনুধাবন করছে সরকার। সম্প্রতি ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) বর্তমান সংসদ নিয়ে কড়া সমালোচনার পর সরকার নড়েচড়ে বসেছে। টিআইবি রাজনৈতিক উদ্দেশ্য প্রণোদিত হয়ে এ ধরনের বক্তব্য দিয়েছে বলে সরকারের নীতিনির্ধারকরা মনে করছেন।
সূত্রগুলো জানায়, মানবাধিকার নিয়ে কাজ করার নামে কিছু এনজিও বা বেসরকারি সংস্থা সরকারের বিভিন্ন কার্যক্রম নিয়ে কারণে অকারণে প্রায়ই অযৌক্তিক কিছু সমালোচনায় মেতে উঠছে। এসব সংস্থা দেশি-বিদেশি বিভিন্ন গোষ্ঠীর হয়ে কাজ করছে। ওই বিশেষ গোষ্ঠীগুলোর উদ্দেশ্য বাস্তবায়নে সংস্থাগুলো বিভ্রান্তিকর তথ্য তুলে ধরছে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক রাজনীতি দ্বারা প্রভাবিত হয়ে সংস্থাগুলো কাজ করছে। কোনো কোনো বিশেষ গোষ্ঠী এসব সংস্থায় অর্থ যোগান দিয়ে আসছে বলে সরকারের কাছে তথ্য রয়েছে।
কোনো কোনো এনজিও’র ওপর ভর করে জঙ্গি-সন্ত্রাসী গোষ্ঠী তৎপরতা চালাচ্ছে বা কোনো কোনো এনজিও গোপনে জঙ্গি-সন্ত্রাসী গোষ্ঠী পরিচালনা করছে ও অর্থ দিয়ে পৃষ্ঠপোষকতা দিচ্ছে বলেও সূত্রগুলো জানায়।
বিষয়গুলো নজরদারিতে রাখতে সংস্থাগুলোর আয়ের উৎস, কী কাজে বিদেশ থেকে অর্থ আসছে, কোন দেশ থেকে আসছে, কী কাজে ব্যয় করা হচ্ছে, সঠিক কাজে ব্যয় করা হচ্ছে কি না তা খতিয়ে দেখা উচিত বলে সরকারের নীতিনির্ধারকরা মনে করছেন।
গত ২৫ অক্টোবর ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) পার্লামেন্ট ওয়াচ নামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে। এতে বর্তমান জাতীয় সংসদকে পুতুল নাচের নাট্যশালা হিসেবে অবিহিত করে টিআইবি। প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, এমপিরা আইন-কানুন বোঝেন না, বিরোধী দল সরকারের লেজুরবৃত্তিতে ব্যস্ত, অকার্যকর হয়ে পড়েছে সংসদ। অবিলম্বে নির্বাচনের দাবিও জানানো হয় প্রতিবেদনটিতে।
এর আগে ‘অধিকার’ নামে একটি সংস্থা ২০১৩ সালের ৫ মে হেফজতের সমাবেশে নিহতের তথ্য ও তালিকা প্রকাশ করলে এ নিয়ে বিভ্রান্তি ছাড়ায়। অধিকারের প্রকাশিত নিহতের তথ্যের সঙ্গে বাস্তবের কোনো মিল পাওয়া যায়নি। উদ্দেশ্যমূলকভাবে সরকারকে বেকায়দায় ফেলতেই এ ধরনের বিভ্রান্তিকর তথ্য প্রকাশ হয় বলে সরকার সংশ্লিষ্টরা মনে করেন।
এদিকে টিআইবির বক্তব্যে সরকারের নীতিনির্ধারকরা ব্যাপক ক্ষুব্ধ হন। ক্ষমতাসীনদের বিভিন্ন ফোরামের আলোচনায় টিআইবি প্রসঙ্গে ক্ষোভ প্রকাশ করা হয়। টিআইবির আয়ের উৎস নিয়েও প্রশ্ন তোলেন সরকারের নীতিনির্ধারকরা।
সরকার সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানায়, এনজিও বা যেসব সংস্থা বিদেশ থেকে তহবিল পেয়ে থাকে সেই সংক্রান্ত কোনো আইন না থাকায় এদের আয়ের উৎস সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পারছে না সরকার। এই প্রেক্ষাপটে সরকার বিদেশি অনুদান নিয়ন্ত্রণ আইন করতে যাচ্ছে।
গত ১ সেপ্টেম্বর জাতীয় সংসদে এ সংক্রান্ত একটি বিল- ‘বৈদেশিক অনুদান (স্বেচ্ছাসেবামূলক কার্যক্রম) রেগুলেশন বিল’ উপস্থাপন করা হয়। ইতোমধ্যেই এটি মন্ত্রিসভায় অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। সংসদের আগামী (রোববার থেকে শুরু) অধিবেশনে বিলটি পাস হবে বলেও জানা গেছে।
এনজিও বা সংস্থার বিদেশি অনুদানের বিষয়টিতে স্বচ্ছতা আনতে এই আইন করা হচ্ছে। এর ফলে কোথা থেকে অর্থ আসছে, কার কাছে আসছে এবং কী কাজে ব্যয় হচ্ছে তার হিসাব বা তথ্য সরকারের কাছে থাকবে। আইন হলে সরকার বৈধভাবে হস্তক্ষেপ করতে পারবে এবং সরকারের নজরদারি থাকবে। এর ফলে এনজিওগুলোর স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত হবে বলে সরকার ও ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সূত্রগুলো জানায়।
বাংলাদেশ সময়: ১১২০ ঘণ্টা, নভেম্বর ০৬, ২০১৫
এসকে/এমজেএফ