ঢাকা: দেশে একসময় ২৪ হাজার কিলোমিটার নদীপথ ছিল যা বর্তমানে কমে মাত্র ছয় হাজার কিলোমিটারে এসে দাঁড়িয়েছে। তবে নৌ-পথের নাব্য পুনরুদ্ধার ও সংরক্ষণের লক্ষ্যে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ) ৫৩টি নৌ-পথ খননের জন্য প্রায় ১২ হাজার কোটি টাকার মেগা প্রকল্প হাতে নেওয়ায় হৃত গৌরব ফিরে পাওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে।
পর্যটন, পণ্য পরিবহন ও যাতায়াতের মত জনগুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোকে সামনে রেখে ২০১২ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত ছয় বছর মেয়াদী মেগা প্রকল্পের আওতায় ইতোমধ্যে ২৪টি নৌ-পথ খনন প্রকল্প একনেকে অনুমোদিত হয়েছে। এতে প্রায় ২ হাজার ৪৭০ কিলোমিটার নাব্য নৌ-পথ দেশের অভ্যন্তরীণ নৌ-পথে যুক্ত হবে।
একই সঙ্গে ক্যাপিটাল ড্রেজিং প্রকল্পের দ্বিতীয় পর্যায়ে ২৯টি নৌ-পথ খননের মাধ্যমে প্রায় ৩ হাজার ৭৪ কিলোমিটার নাব্য নৌ-পথ দেশের অভ্যন্তরীণ নৌ-পথে যুক্ত হবে।
এছাড়া ঢাকার চারিদিকে নৌ-পথ চালুকরণ প্রকল্পের আওতায় দ্বিতীয় পর্যায়ে খননের মাধ্যমে ৭০ কিলোমিটার নৌ-পথ উন্নয়ন করা হয়েছে।
এছাড়াও আরো ১২টি গুরুত্বপূর্ণ নৌ-পথ খনন প্রকল্প চলমান রয়েছে। গত বছরের ডিসেম্বরে শ্যালা নদীতে তেল ভর্তি ট্যাংকার ডুবির পর মংলা-ঘষিয়াখালী নৌরুটে প্রকল্পের আওতায় খনন কাজ শুরু হয়েছে।
এছাড়া, মৃত ও মৃতপ্রায় নদ-নদীসমূহ পুনরুজ্জীবিত করে পুরাতন নৌ-পথসহ নতুন নৌ-পথ চালুর জন্য বিআইডব্লিউটিএ আরও কয়েকটি প্রকল্প গ্রহণ করেছে।
ঢাকা ও এর আশপাশের নদীগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ বৃদ্ধির লক্ষ্যে বুড়িগঙ্গা, বালু, তুরাগ নদীতে ইতোমধ্যেই খনন কাজ শুরু হয়েছে। প্রায় ১৭ কোটি টাকা ব্যয় করে বুড়িগঙ্গা নদীর তলদেশ থেকে ৮ লাখ ঘন মিটার বর্জ্য অপসারণের মাধ্যমে বুড়িগঙ্গা নদীর পানিতে অক্সিজেনের মাত্রা বৃদ্ধি করা হয়েছে। ঢাকার চারপাশে নদীপথ চালু রাখার স্বার্থে বিআইডব্লিউটিএ বুড়িগঙ্গা নদীর খনন কাজ চলমান রয়েছে।
নৌ-পথগুলো সচল রাখতে প্রতিবছরই ড্রেজিং করতে হয়। জানুয়ারি ২০১১ থেকে শুরু হওয়া মাদারীপুর-চরমুগুরিয়া-টেকেরহাট-গোপালগঞ্জ নৌ-পথ খনন প্রকল্পের প্রথম পর্যায় সফলভাবে শেষ হয়েছে। এ প্রকল্পের প্রথম পর্যায়ের মাধ্যমে কুমার, আপার কুমার, মধুমতি নদীর নাব্য বৃদ্ধি করা হয়েছে এবং সম্পূর্ণ মৃত লোয়ার কুমার নদী খনন করে নৌ-যান চলাচলের উপযোগী করা হয়েছে।
বিআইডব্লিউটিএ’র ড্রেজিং বিভাগের পরিচালক আব্দুল মতিন বাংলানিউজকে বলেন, পর্যটন, পণ্য পরিবহন ও যাতায়াতের মত জনগুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোকে সামনে রেখে বিদ্যমান নদীগুলোর নাব্যতা বৃদ্ধির মাধ্যমে দেশের নৌপথের পুরনো গৌরব ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করা হচ্ছে। এ লক্ষ্যেই ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের নদীগুলোর খনন, দখলমুক্ত করার মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের কাজ চলছে।
নৌপথগুলো চালু করা হলে দেশের বিভিন্ন এলাকায় অল্প খরচে নির্বিঘ্নে যাতায়াত ও পণ্য পরিবহন সহজ হবে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
বর্তমানে দেশে পাঁচ হাজার ৯৯৫ কিলোমিটার নৌপথের মধ্যে ১২-১৩ ফুট গভীরতার প্রথম শ্রেণির নৌ-পথ আছে মাত্র ৬৮৩ কিলোমিটার। সাত-আট ফুট গভীরতার দ্বিতীয় শ্রেণির নৌ-পথ আছে প্রায় এক হাজার কিলোমিটার যার মধ্যে ২৪ ঘণ্টা চলাচল উপযোগী থাকে মাত্র ৬৬৩ কিলোমিটার। ৫/৬ ফুট গভীরতার তৃতীয় শ্রেণির নৌ-পথ আছে মাত্র এক হাজার ৮৮৫ কিলোমিটার যার মধ্যে সারাদিন নৌযান চলাচল উপযোগী রয়েছে এক হাজার বাইশ কিলোমিটার। যে টুকু নৌপথ আছে নাব্য সংকট থাকায় সেই পথ টুকুতেও নির্বিঘ্ন চলাচলের কোনো উপায় নেই। নাব্য সংকটের কারণে শুষ্ক মৌসুমে ফেরি চলাচল বিঘ্নিত হয়।
বাংলাদেশ সময়: ০০৩৮ ঘণ্টা, নভেম্বর ০৯, ২০১৫
এইচআর/এমআইএইচ/আরএ