ঢাকা: অর্থনৈতিকভাবে লাভবান না হওয়া খোঁড়া যুক্তি দেখিয়ে পরিকল্পনা কমিশনের ভৌত অবকাঠামো বিভাগ থেকে ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছে বিদ্যমান বরিশাল বিমানবন্দর উন্নয়ন প্রকল্প।
প্রকল্পের ফিজিবিলি স্ট্যাডির ডিপিপি (প্রকল্প উন্নয়ন প্রস্তাবনা) বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ে ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছে।
এতে করে আপাদত বাধাগ্রস্ত হলো বরিশাল বিমানবন্দর আধুনিকায়নের কাজ। বিমানবন্দরটির আধুনিকায়নের জন্য ৬৮৯ কোটি ৪০ লাখ টাকা চাওয়া হয়েছিল।
পরিকল্পনা কমিশন মনে করছে, পদ্মা সেতু প্রকল্পের কাজ শেষ হলে ঢাকা থেকে সরাসরি বরিশালে রেল যোগাযোগ ব্যবস্থা স্থাপিত হবে। নতুনভাবে খানজাহান আলী বিমানবন্দর নির্মাণ করার কাজ শুরু হয়ে গেছে। ৫৪৪ কোটি ৭৫ লাখ টাকা ব্যয়ে ২০১৫ থেকে ২০১৭ সাল নাগাদ এই বিমানবন্দর নির্মাণ করা হবে।
এছাড়া, ২৫ হাজার একর জমি নিয়ে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর নির্মাণ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। সম্ভাব্য চারটি স্থানে বিমানবন্দরটি নির্মাণ করা হবে। স্থান চারটি হলো- চর জানাজাত (শিবচর, মাদারীপুর), চর বিলাসপুর (দোহার, ঢাকা), কেয়াইন (সিরাজদিখান, মুন্সীগঞ্জ) ও লতব্দি (সিরাজদিখান, মুন্সীগঞ্জ)।
পরিকল্পনা কমিশন সূত্র জানায়, নতুন বিমানবন্দর নির্মাণের লক্ষ্যে ১৩৬ কোটি টাকায় ফিজিবিলি স্ট্যাডির কাজ চলছে। বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে বরিশালের দুরত্ব খুব বেশি হবে না। যে কারণে বিদ্যমান বিমানবন্দরকে আরও অধিক উন্নয়ন করার কোনো দরকার নেই।
এছাড়া, পদ্মা সেতু প্রকল্পের কাজ সম্পন্ন হলে বরিশালের সঙ্গে সরাসরি রেল যোগাযোগ স্থাপিত হবে। বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর নির্মাণ হয়ে গেলে গুরুত্ব হারাবে বরিশাল বিমানবন্দর। তাই বিদ্যমান বিমানবন্দরটি যেভাবে আছে সেইভাবেই থাকাটা যৌক্তিক মনে করছে পরিকল্পনা কমিশন।
সেই লক্ষ্যে সম্প্রতি প্রকল্পটির ফিজিবিলিটি স্ট্যাডির সারসংক্ষেপ বেসামরিক বিমান চলাচল ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ে ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছে।
প্রকল্পটি ফিরিয়ে দেওয়া প্রসঙ্গে পরিকল্পনা কমিশনের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বাংলানিউজকে বলেন, পদ্মা সেতু কাজ সম্পন্ন হলে বরিশালের সঙ্গে রেলসহ সড়ক পথে ঢাকার যোগাযোগ ব্যবস্থা আরও বাড়বে। নতুনভাবে খানজাহান আলী বিমানবন্দর নির্মাণ করার কাজ শুরু হয়ে গেছে।
এছাড়া বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর নির্মাণ করার জন্য ফিজিবিলিটি স্ট্যাডির কাজ শুরু হয়েছে। এই বিমানবন্দরটি বরিশাল থেকে খুব বেশি দূরে নয়। যে কারণে বিদ্যমান বরিশাল বিমানবন্দরটি উন্নয়ন করার কোনো যৌক্তিকতা খুঁজে পাচ্ছি না। ’
বরিশাল বিমানবন্দর উন্নয়ন প্রকল্পে সরকার বিনিয়োগ করলে আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে না লাভবান হবে সেই বিষয়ে একটি ফিজিবিলিটি স্ট্যাডি করে বেসামরিক বিমান চলাচল ও পর্যটন মন্ত্রণালয়।
প্রকল্পের ফিজিবিলিটি স্ট্যাডিতে দেখা গেছে, নতুনভাবে প্রকল্পে সরকার অর্থায়ন করলেও আর্থিকভাবে কোনো লাভ খুঁজে পাওয়া যাবে না। কারণ বর্তমানে প্রতি বছর বরিশাল থেকে ঢাকায় আকাশ পথে যাতায়াত করে মাত্র ৩ হাজার ৬৬৫ জন। বিমানবন্দরটি আরও উন্নত করলেও যাত্রীর সংখ্যা বৃদ্ধির কোনো সম্ভাব্য নেই।
পরিকল্পনা কমিশনে পাঠানো ফিজিবিলি স্ট্যাডিতে দেখা গেছে, বরিশাল বিমানবন্দর নির্মাণের জন্য ৬৮৯ কোটি ৪০ লাখ টাকা চাওয়া হয়েছে। প্রকল্পের আওতায় ভূমি অধিগ্রহণ, ভূমি উন্নয়ন, পেভমেন্ট ওয়ার্ক, অপারেশনাল ও আবাসিক ভবন নির্মাণ, ইলেক্ট্রো মেকানিক্যাল, নেভ-এইড ইক্যুইপমেন্ট কেনা হবে।
এছাড়া বাউন্ডারি ওয়াল, সিকিউরিটি ফেন্সিং, ফায়ার ভেহিক্যাল কেনা হবে, ওয়াটার সাপ্লাই সিস্টেম স্থাপন করার কথা উল্লেখ করা হয়েছে।
বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় নানা পরিকল্পনার কথা উল্লেখ করা সত্ত্বেও প্রকল্পটি ফিরিয়ে দিয়েছে পরিকল্পনা কমিশন। প্রকল্পের আওতায়, বরিশাল বিমানবন্দরে ২টি ফাইটার স্কোয়াড্রন (প্রায় ২৪টি যুদ্ধ বিমান) পরিচালনা কারর পরিকল্পনা আছে। বরিশাল রানওয়েটিকে বর্তমানে ৬ হাজার ফুট হতে ৯ হাজার ফুট উন্নীত করণের পরিকল্পনাও আছে।
বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় জানায়, বাংলাদেশের দক্ষিণ অঞ্চল একটি প্রাকৃতিক দুর্যোগপূর্ণ এলাকা বিধায় এখানে দুর্যোগ লেগেই থাকে। এসব মোকাবেলায় বরিশাল বিমানবন্দর উন্নয়ন করা জরুরি। সব ক্ষেত্রেই অর্থনৈতিক লাভবানের কথা চিন্তা করলে হবে না।
মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, যাবতীয় অপারেশন পরিচালনার জন্য রানওয়ে থেকে ৫ হাজার ফুট উত্তর এবং ২৩’শ ফুট পশ্চিমের জায়গাটিতে নানা ধরনের অবকাঠামো উন্নয়ন করা দরকার।
তাই প্রকল্পটিকে ফিরিয়ে দেয়া অযৌক্তিক মনে করছে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়।
মন্ত্রণালয় জানায়, বরিশালে বিদ্যমান বিমানবন্দরটি নামে মাত্র আছে। এই বিমানবন্দরে যাত্রীদের বসার জন্য উপযুক্ত স্থান নেই, রানওয়ে ছোট, টাওয়ার ছোট এমনকি ভিআইপি রুম নেই।
এ প্রসঙ্গে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (প্রশাসন ও পর্যটন উইং) রফিকুজ্জামান বাংলানিউজকে বলেন, বরিশাল বিমানবন্দর নামে মাত্র রয়েছে। একটি আধুনিক বিমানবন্দরের কোনো চিহ্ন সেখানে নেই। বিমানবন্দরটি কোনো রকম ব্যবহার করা হচ্ছে। বিমানবন্দরটির রানওয়ে বাড়ানো দরকার। এর পাশাপাশি টার্মিনাল নির্মাণ করা দরকার।
তিনি আরও বলেন, বরিশাল বিমানবন্দরকে আরও উন্নত করতেই হবে। কারণ বরিশালের অনেক ব্যবসায়ি ঢাকায় বড় বড় বিনিয়োগ করেছে। তারা আকাশ পথকে স্বাচ্ছন্দবোধ করেন। বরিশাল বিমানবন্দরটি উন্নয়ন করা হলে ভোলা, বরগুনা ও পটুয়াখালী অঞ্চলের মানুষের যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজ হয়ে যাবে।
বিমানবন্দরের গুরুত্ব তুলে ধরে রফিকুজ্জামান বলেন, সব প্রকল্পে আর্থিক লাভের কথা চিন্তা করলে হবে না। বরিশাল বিমানবন্দরটি আধুনিক হলে নানা দুর্যোগে উপকূলীয় এলাকার মানুষকে সহায়তা করা সহজতর হবে।
বাংলাদেশ সময়: ০২১০ ঘণ্টা, নভেম্বর ০৯, ২০১৫
এমআইএস/এসএইচ