ঢাকা, রবিবার, ৫ মাঘ ১৪৩১, ১৯ জানুয়ারি ২০২৫, ১৮ রজব ১৪৪৬

জাতীয়

গোদাগাড়ী-ধুলিয়ান নৌরুট

শুষ্ক মৌসুমে অর্ধেকে নেমে আসবে পণ্য পরিবহন

ডিপ্লোম্যাটিক করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০২৩২ ঘণ্টা, নভেম্বর ৯, ২০১৫
শুষ্ক মৌসুমে অর্ধেকে নেমে আসবে পণ্য পরিবহন

ঢাকা: দু’দেশের ট্রানজিট-ট্রান্সশিপমেন্ট এবং দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য বাড়াতে  ভারতের ধুলিয়ান বন্দর ব্যবহারের প্রস্তাব দিলেও শুষ্ক মৌসুমে রুটটির কর্মক্ষমতা অর্ধেকে নেমে আসবে। রুটটি নিয়ে করা এক জরিপে এ তথ্য উঠে এসেছে।



যাতে বলা হয়েছে, বর্ষা মৌসুমে রুটটি দিয়ে চলাচলকারী ৪শ থেকে ৫শ টন মালামাল ধারণ ক্ষমতা সম্পন্ন নৌযান চলতে পারলেও শুষ্ক মৌসুমে ২শ থেকে ৩শ মণের বেশি পণ্য পরিবহন করা যাবে না।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র এসব তথ্য জানিয়েছে।

সূত্র আরও জানায়, পদ্মা সেতুর মত অবকাঠামো নির্মাণের বিষয়টি মাথায় রেখে ভারতের ধুলিয়ান বন্দর ব্যবহার করতে চেয়েছে বাংলাদেশ।

এ লক্ষ্যে গোদাগাড়ী-ধুলিয়ান নৌ-পথ পরিদর্শন করে নদীর বর্তমান অবস্থা পর্যবেক্ষণ, স্থানীয় নৌকা, ট্রলার ও বালুবাহী নৌযানের মালিক-চালক, স্থানীয় বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) ও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের (ওসি) সঙ্গে আলোচনা করে বিআইডব্লিঊটিএ’র একটি কমিটি।

তাদের দেওয়া প্রতিবেদন অনুযায়ী, গোদাগাড়ী-ধুলিয়ান নৌরুটের বাংলাদেশ অংশে প্রায় ১৬ থেকে ১৭ কিলোমিটার এলাকায় মূল চ্যানেল দিয়ে বছরের জুন থেকে অক্টোবর পর্যন্ত পরীক্ষামূলক ভাবে ৪শ থেকে ৫শ টন ক্ষমতা সম্পন্ন কম গভীরতার জাহাজ চলাচলের অনুমতি দেওয়ার ব্যবস্থা করা যেতে পারে।

কমিটি নৌ পথটি চালুর আগে গোদাগাড়ীতে এলসি স্টেশনের কার্যক্রম ও পরিসর বাড়ানোর প্রয়োজনীয়তার সুপারিশও করেছে। বর্তমানে সেখানে এলসি স্টেশনের কার্যক্রম চলছে সীমিত পরিসরে। রুটটি এখন শুধু গরু আমদানির কাজে ব্যবহার করা হয়।

এছাড়া বর্তমানে এ রুটটিতে বালুবাহী নৌযান চলাচল করে। শুষ্ক মৌসুমে আবারো হাইড্রোগ্রাফিক জরিপ করে দেখার সুপারিশ করেছে কমিটি। সেই সঙ্গে নৌ রুটটি চালু করতে নিয়মিত মার্কা দিয়ে চিহ্নিত করার জন্য মার্কিং বোট, পাইলট ও মার্কম্যান বসানোর প্রয়োজনীয়তার কথা জানিয়েছে কমিটি।

এছাড়া মহিশাল বাড়ী বাজারের কাছে পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে থাকা রেলওয়ের প্রায় ৫৫ বিঘা জমি দু’দেশের ট্রানজিট পণ্যের সাময়িক গুদাম হিসেবে ব্যবহার করার কথাও বলা আছে কমিটির প্রতিবেদনে।

জানা যায়, বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যকার নৌ প্রটোকল বা ‘প্রটোকল অন ইনল্যান্ড ওয়াটার ট্রানজিট অ্যান্ড ট্রেড’ (পিআইডব্লিউটিটি) আবারো সংশোধন করা হচ্ছে। বাংলাদেশ অংশে ভারত পানগাঁও বন্দরের অন্তর্ভুক্তি চাচ্ছে। আর এর বিপরীতে ব্যান্ডেল এবং ধুলিয়ান বন্দর ব্যবহার করতে চায় বাংলাদেশ।

১৬ নভেম্বর শুরু হতে যাওয়া বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যকার নৌ সচিব পর্যায়ের বৈঠকে অতিরিক্ত বন্দর সংযোজনের বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হবে।

বিদ্যমান নৌ প্রটোকল অনুযায়ী ভারতের জাহাজগুলো বাংলাদেশের নারায়ণগঞ্জ, খুলনা, মংলা, সিরাজগঞ্জ এবং আশুগঞ্জ বন্দর ব্যবহার করতে পারে। একইভাবে বাংলাদেশেরও ভারতের কলকাতা, হলদিয়া, করিমগঞ্জ, পান্ডু এবং শিলঘাটের বন্দর ব্যবহারের অনুমতি রয়েছে।

তবে যাত্রা পথে তেল সংগ্রহের জন্য ভারতীয় জাহাজগুলো বাংলাদেশের শেখবাড়িয়া, মংলা, খুলনা, বরিশাল, চাঁদপুর, নারায়ণগঞ্জ, সিরাজগঞ্জ এবং চিলমারি বন্দর ব্যবহার এবং বাংলাদেশের জাহাজগুলো ভারতের যোগিগোপা, ধুবরি, নামখানা, পান্ডু, করিমগঞ্জ, হলদিয়া, কলকাতা এবং বজবজ বন্দরে প্রবেশের অনুমুতি রয়েছে। এছাড়া মেরামতের জন্য সরকারি বা যেকোনো সুমানধন্য জাহাজ মেরামতকারী প্রতিষ্ঠানে দুই দেশের জাহাজগুলোই সুযোগ পাবে।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, গোদাগাড়ী-ধুলিয়ান চ্যানেলের বড় অংশে বছরে ৬ মাস ৪ থেকে ৫ মিটার পানি থাকে। ফলে এ সময়ে যে কোনো জাহাজ চলাচল করতে পারবে। তবে শুষ্ক মৌসুমে স্থান ভেদে এ নাব্যতা কমে আসে। এ সময়ে মাত্র ২০০ থেকে ৩০০ মণ ক্ষমতা সম্পন্ন জাহাজই এ রুটটিতে চলাচল করতে পারবে।

এর আগে বিআইডব্লিউটিএ’র ট্রাফিক ও পোর্ট বিভাগের এম শফিকুল হক এ বিষয়ে বাংলানিউজকে বলেন, দুরত্ব আর কৌশলগত সুবিধা বিবেচনা করে বাংলাদেশ ভারতের ধুলিয়ান এবং ব্যান্ডেল বন্দর ব্যবহার করতে চেয়েছে। আর ভারতও আমাদের পানগাঁও বন্দরের ব্যবহার চায়। এসব বিষয়গুলো দু’দেশের সচিব পর্যায়ের বৈঠকে গুরুত্ব পাবে।

এ প্রটোকলের আওতায় বাংলাদেশ ভারতের ভুখণ্ড ব্যবহার করে তৃতীয় দেশে পণ্য পরিবহন করতে পারবে। একই ভাবে ভারত বাংলাদেশের ভুখণ্ড ব্যবহার করে দেশটির উত্তর-দক্ষিণ অথবা তৃতীয় দেশে পণ্য পরিবহন করতে পারবে।

বাংলাদেশ সময়: ০০৫৫ ঘণ্টা, নভেম্বর ০৯, ২০১৫
এসএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।