ঢাকা, রবিবার, ৫ মাঘ ১৪৩১, ১৯ জানুয়ারি ২০২৫, ১৮ রজব ১৪৪৬

জাতীয়

বারো মাস আমি এমনই ‍আছি

সাঈদ শিপন, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৮১০ ঘণ্টা, নভেম্বর ৯, ২০১৫
বারো মাস আমি এমনই ‍আছি ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

ঢাকা: এটি কোন খাল, পুকুর বা জলাশয় নয়। পূর্ব রামপুরা থেকে খিলগাঁও যাওয়ার একমাত্র রাস্তা এটি।

আর এই রাস্তায় জমে আছে নর্দমার পচা পানি। তবুও প্রতিদিন জীবন ও জীবিকার টানে এ রাস্তা দিয়েই কাজে ছুটতে হয় হাজারো মানুষকে।  

বছরের পর বছর ধরে বর্ষা, শীত, বসন্ত সব ঋতুতেই এমনই বেহাল থাকে এ রাস্তা। হালকা বৃষ্টি হলেই পানি বেড়ে হয়ে যায় কোমর সমান।

অথচ এ স্থান থেকে বড়জোর ৩শ’ মিটার দূরে নির্বাচিত কাউন্সিলরের বাড়ি। কিছুদিন আগেও এই রাস্তাটির উত্তর ও দক্ষিণ দিকে সংস্কার করা হলেও মধ্যখানে গর্তটা ঠিকই রয়ে গেছে। বছর ভর তাই এমনই থাকে পূর্ব রামপুরার জামতলার এই রাস্তা।

এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এ এলাকায় ১৯৯০ সালের পর থেকে রাজত্ব করছেন দু্ই ভাই আক্কেল আলী কমিশনার ও লিয়াকত আলী কমিশনার। আওয়ামী লীগ ও বিএনপির রাজনীতিতে সম্পৃক্ত এই দুই ভাই পালাক্রমেই শাসন করেন পূর্ব রামপুরা।

এলাকাব‍াসী জানিয়েছে, শুধু জামতলার রাস্তাটি নয়, সমগ্র পূর্ব রামপুরা একটি অপরিকল্পিত এলাকা। অল্প বৃষ্টিতেই এ এলাকার অধিকাংশ স্থানে পানি জমে যায়। যত্রতত্র পড়ে থাকে ময়লার স্তুপ। সঙ্গে মশার উপদ্রব তো আছেই। তবে কিছুটা ব্যতিক্রম দুই কমিশনার ভাইয়ের বাড়ির সামনের রাস্তাটি (কমিশনার রোড)।

পূর্ব রামপুরার যে রাস্তাটিতে বারো মাস পানি জমে থাকে, ওই স্থানটির পাশেই চায়ের দোকান দিয়ে বসা একজন জানান, তিনি এলাকাটিতে ৭ বছর বাস করছেন। এই ৭ সাত বছরের মধ্যে কখনো রাস্তাটিকে শুকনা অথবা মসৃণ (ভালো) অবস্থায় দেখেননি।

এই চায়ের দোকানদার জানান, অল্প একটু বৃষ্টি হলেই পানি রাস্তা উপচে পাশের বসত ঘরে ঢুকে পড়ে। রাস্তাটি মেরামত করতে দায়িত্বপ্রাপ্তরা কখনো কোন পদক্ষেপ নেয়নি। তবে স্থানটির টিন শেডের বাসিন্দারা নিজ উদ্যোগে রাস্তার দুই ধারে কিছু মাটি ফেলে কোন রকমে যাতায়াতের ব্যবস্থা করেছেন।

রাস্তাটি থেকে কয়েক গজ দক্ষিণেই বৌ বাজার। এই বাজারটিতে পূর্ব রামপুরার বাসিন্দাদের যেতে হলে এই নর্দমার পানি জমে থাকা রাস্তাটি পার হয়েই যেতে হয়। বৌ বাজারে কাঁচামালের ব্যবসা করেন পূর্ব রামপুরার জামতলার আলী হোসেন।

তিনি জানান, নর্দমার পানি জমে থাকা রাস্তাটির পাশেই পরিবার নিয়ে একটি টিন শেডের ভাড়া বাড়িতে বাস করেন। এবারের বর্ষাকালে প্রায় প্রতিদিন তাদের ঘরে পানি ঢুকেছে। বাড়ির মালিককে বলেও কোন লাভ হয়নি।

পরে বাড়ি মালিকের পরামর্শ অনুযায়ী তারা কয়েকজন মিলে রাস্তাটির এক পাশে মাটি উঁচু করে পানি আটকানোর চেষ্টা করেন। তবে এতেও তাদের শেষ রক্ষা হয়নি। অল্প বৃষ্টিতে রেহাই পাওয়া গেলেও একটু বেশি বৃষ্টি হলেই গোটা ঘর পানিতে ভেসে যায়, বলেন আলী হোসেন।

পূর্ব রামপুরার জাকের গলিতে ২০০৫ সাল থেকে বাস করেন মো. মামুন। তিনি বলেন, এক সময় রামপুরাতে নিয়মিত মশার ওষুধ ছিটানো হতো। তবে ২০১০ সালের পর থেকে আর মশার ওষুধ ছিটাতে দেখা যায়নি। মাঝে চলতি বছর সিটি করপোরেশনের নির্বাচনের পর কিছুদিন মশার ওষুধ দেওয়া হয়। তবে মাস খানেক ধরে তাও বন্ধ রয়েছে। ফলে মশার উৎপাতও বেড়েছে।

জামতলায় নির্মাণাধীন ৬ তলা একটি বাড়ির মালিক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, বছরের পর বছর ধরে দুই ভাই আক্কেল আলী কমিশনার ও লিয়াকত আলী কমিশনার পূর্ব রামপুরায় রাজত্ব করছেন। এর মধ্যে আক্কেল আলী বিএনপির রাজনীতিতে সম্পৃক্ত এবং লিয়াকত আলী আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে সম্পৃক্ত। কমিশনার (কাউন্সিলর) নির্বাচনে সব সময় শুধু তারা দুই ভাই প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন।

তিনি বলেন, বছরের পর বছর ধরে দুই ভাই পূর্ব রামপুরার কমিশনার নির্বাচিত হয়েছেন। কিন্তু এলাকার উন্নয়ন তেমন একটা হয়নি। পূর্ব রামপুরার অধিকাংশ গলিরাস্তার অবস্থা বেহাল। সাধারণ মানুষের অবস্থার উন্নয়ন না হলেও কমিশনার ভাইদের উন্নয়ন ঠিকই হয়েছে।

সার্বিক বিষয় নিয়ে পূর্ব রামপুরার বর্তমান কাউন্সিলর লিয়াকত আলীর মোব‍াইল ফোনে বাংলানিউজের পক্ষ থেকে যোগাযোগ করা হলেও তিনি কোন কথা বলতে রাজি হননি।

বাংলাদেশ সময়: ০৮১০ ঘণ্টা, নভেম্বর ০৯, ২০১৫
এএসএস/জেডএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।