ঢাকা, রবিবার, ৫ মাঘ ১৪৩১, ১৯ জানুয়ারি ২০২৫, ১৮ রজব ১৪৪৬

জাতীয়

রাজধানীতে ঝুঁকিপূর্ণ বিলবোর্ড ঝুলছেই

তাবারুল হক, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০৫৩ ঘণ্টা, নভেম্বর ৯, ২০১৫
রাজধানীতে ঝুঁকিপূর্ণ বিলবোর্ড ঝুলছেই ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

ঢাকা: রাজধানীর ব্যস্ত এলাকা গুলশান-১ এর মোড়েই ‘গুলশান শপিং কমপ্লেক্স’। এ মার্কেটের পূর্ব ও উত্তর অংশ লাগোয়া রয়েছে নগরীর গুরুত্বপূর্ণ সড়ক।

নগরীর বিভিন্ন এলাকায় যাতায়াতের জন্য প্রতিনিয়ত শত শত যাত্রী ওই মার্কেটের নিচে পরিবহনের জন্য অপেক্ষায় থাকেন। অথচ বহুতল এই মার্কেটের দেয়াল ও ছাদে ঝুঁকিপূর্ণভাবে ঝুলছে প্রায় বিশটি বিলবোর্ড ও অন্যান্য বিজ্ঞাপন বোর্ড।
 
গুলশান শপিং কমপ্লেক্সটি অবৈধ বিলবোর্ডে ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে ওঠা ঢাকার একটি খণ্ডচিত্র মাত্র।

শুধু গুলশানই নয়, ঢাকার প্রায় সব এলাকায়ই খুঁটি দিয়ে সড়ক ও ফুটপাতের ওপর, মার্কেট-বাড়ি, বাজার ও অন্যান্য ভবনের দেয়াল ও ছাদে এভাবে ঝুলছে হাজার হাজার অবৈধ বিলবোর্ড, ইউনিপোল ও অন্যান্য বিজ্ঞাপন বোর্ড।
 
যদিও ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন গত ০১ সেপ্টেম্বর থেকে এসব বিলবোর্ড উচ্ছেদে অভিযান চালাচ্ছে। এর আগে গত ৩১ আগস্টের মধ্যে রাজধানী থেকে সব ধরনের বিলবোর্ড সরাতে বিলবোর্ড মালিকদের নির্দেশ দিয়েছিল দুই সিটি করপোরেশন। কিন্তু এতে তারা সাড়া দেননি।
 
সিটি করপোরেশনের অভিযানে সব ধরনের বিলবোর্ড এক মাসের মধ্যে উচ্ছেদ করার কথা থাকলেও হাতেগোনা কিছু বিলবোর্ড ছাড়া অধিকাংশই আগের জায়গাতেই রয়েছে।
 
সরেজমিনে দেখা গেছে, গুলশান-১ এর মতোই গুলশান-২ এলাকার বিভিন্ন মার্কেট ও ভবনের দেয়াল-ছাদ ও ফুটপাতের ওপর ঝুলছে অসংখ্য বিলবোর্ড ও ব্যানার। এ এলাকার ‘মেট্রোপলিটন শপিং প্লাজা’র সামনের অংশে ১০টি ও মার্কেটের দক্ষিণ দিকে আরো তিনটি বিলবোর্ড রয়েছে।
 
মার্কেটের বিপরীতে তাহের টাওয়ার শপিং সেন্টার লাগোয়া ভবনে রয়েছে আরো তিনটি বিলবোর্ড। একই এলাকায় ‘ভবন মার্কেট’র সামনে খুঁটির ওপর রয়েছে বড় একটি বিলবোর্ড ও ‘রব সুপার মার্কেট’র দেয়াল ও ছাদে অন্তত আটটি বিলবোর্ড ঝুলছে।
 
অন্যদিকে নতুন বাজার মোড়ে বিভিন্ন কোম্পানির পণ্যের প্রচারে ১৩/১৪টি ছোট-বড় বিলবোর্ড ঝুলে রয়েছে। মেরুল বাড্ডায় সড়কের দুই পাশে বিভিন্ন ভবনে অন্তত ১০টি বড় বিলবোর্ড দেখা গেছে।

একইভাবে নগরীর প্রধান সড়ক ছাড়াও অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ সড়কের পাশে অসংখ্য বিলবোর্ড ঝুলছে।
 
তবে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন ও ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন জানিয়েছে, বিলবোর্ড উচ্ছেদে অভিযান অব্যাহত রয়েছে। চলতি বছরের মধ্যে (ডিসেম্বর) রাজধানী থেকে সব ধরনের বিলবোর্ড উচ্ছেদ করা হবে বলেও জানাচ্ছে দুই সিটি করপোরেশন।
 
এরপর পরিকল্পিতভাবে একটি নীতিমালার অধীনে নতুন করে নগরীর বিভিন্ন এলাকায় ডিজিটাল এলইডি বিলবোর্ড স্থাপনের পরিকল্পনা রয়েছে বলে জানিয়েছেন সিটি করপোরেশনের দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা।
 
সিটি করপোরেশন সূত্রে জানা যায়, দুই সিটি করপোরেশন থেকে অনুমোদনপ্রাপ্ত বিলবো্র্ডের চেয়ে অবৈধ বিলবোর্ডের সংখ্যা কয়েকগুণ বেশি। যত্রতত্র ও অপরিকল্পিতভাবে সড়কের ওপর, ভবনের ছাদে, দেয়ালে, মাঠ ও পার্কের পাশে, বাজারসহ বিভিন্ন স্থানে বিলবোর্ড স্থাপনের ফলে সৌন্দর্য নষ্ট ও ঝুঁকিপূর্ণ নগরীতে পরিণত হয়েছে ঢাকা।
 
উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের পরিসংখ্যানে দেখা যায়, দুই সিটি করপোরেশন এলাকায় অনুমোদিত বিভিন্ন বিলবোর্ড, ইউনিপোল, টি-সাইন, মেগা সাইন, পরিচিতিমূলক ওভারহেড রয়েছে ২ হাজার ৬০০টির বেশি। এর মধ্যে উত্তরে রয়েছে ১ হাজার ৯০০টি। অন্যদিকে দক্ষিণে প্রায় ৭০০টি বিভিন্ন বিলবোর্ড ও ইউনিপোলসহ অন্যান্য বিজ্ঞাপন বোর্ড রয়েছে। এসব বিলবোর্ডের মেয়াদ গত ৩০ জুন শেষ হলেও নতুন করে আর নবায়ন করেনি সিটি করপোরেশন।
 
তবে রাজধানীতে মোট কতোটি অবৈধ বিলবোর্ড রয়েছে এর কোনো সুর্নিদিষ্ট হিসাব সিটি করপোরেশনের কাছে না থাকলেও বিভিন্ন বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের পরিসংখ্যানে এই সংখ্যা ১৮ হাজারের বেশি বলে জানা গেছে।
 
অভিযোগ রয়েছে, কোনো ধরনের নীতিমালা না মেনে বিভিন্ন সময় অবৈধভাবে নগরীর বিভিন্ন ভবন ও সড়কের ওপর ঝুঁকিপূর্ণভাবে স্থাপন করা হয়েছে এসব বিলবোর্ড।

ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের বিলবোর্ড সংক্রান্ত দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপক ক্যাপ্টেন বিপন কুমার সাহা বাংলানিউজকে বলেন, বিলবোর্ড মালিকদেরকে অবৈধ ও ঝুঁকিপূর্ণ বিলবোর্ড সরিয়ে নিতে একাধিকবার সময় দেওয়া হয়েছিল, কিন্তু তারা তা করেননি। এজন্য সিটি করপোরেশনের উদ্যোগেই বিলবোর্ড উচ্ছেদ করা হচ্ছে। নিয়মিতভাবে এ অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
 
প্রতিদিন ২০/৩০টি করে বিলবোর্ড উচ্ছেদ করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে মোট বিলবোর্ডের মধ্যে ৪০ শতাংশ উচ্ছেদ করা হয়েছে বলেও দাবি করেন তিনি।
 
বিশিষ্ট নাগরিকদের নিয়ে গঠিত কমিটি বিলবোর্ড সংক্রান্ত নীতিমালা তৈরির কাজ করছেন জানিয়ে বিপন কুমার সাহা বলেন, এ নীতিমালা প্রস্তুত হলে নগরীর কোথায়, কতোটি ও কী ধরনের বিলবোর্ড স্থাপন করা যায় তা নির্ধারণ করা হবে।
 
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা খান মোহাম্মদ বিলাল বাংলানিউজকে জানান, উত্তর সিটি করপোরেশনের মতো দক্ষিণ সিটি করপোরেশন এলাকায় থাকা সব ধরনের অবৈধ বিলবোর্ড উচ্ছেদে অভিযান অব্যাহত রয়েছে। ডিসেম্বরের মধ্যে এ অভিযান শেষ হবে। এরপর উন্নত দেশের মতো ডিজিটাল বিলবোর্ড স্থাপনের মাধ্যমে নগরীর সৌন্দর্য রক্ষা ও বর্ধন করা হবে।
 
বাংলাদেশ সময়: ১০৫০ ঘণ্টা, নভেম্বর ০৯, ২০১৫
টিএইচ/এএসআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।