ঢাকা, রবিবার, ৫ মাঘ ১৪৩১, ১৯ জানুয়ারি ২০২৫, ১৮ রজব ১৪৪৬

জাতীয়

স্বামী হত্যার বিচারের আক্ষেপ নিয়েই বিদায়

নাসির উদ্দিন, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫০১ ঘণ্টা, নভেম্বর ৯, ২০১৫
স্বামী হত্যার বিচারের আক্ষেপ নিয়েই বিদায় আসমা কিবরিয়া

সিলেট: বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ সাবেক অর্থমন্ত্রী প্রয়াত শাহ এএমএস কিবরিয়ার স্ত্রী আসমা কিবরিয়া ছিলেন মৃদুভাষী ব্যক্তিত্বসম্পন্ন। ৭৮ বছর বয়সে সোমবার (০৯ নভেম্বর) সকালে রাজধানীর একটি হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন খ্যাতনামা এই চিত্রশিল্পী।



ব্যক্তি জীবনে অত্যন্ত বিনয়ী ছিলেন আসমা কিবরিয়া। গ্রেনেড হামলায় শাহ কিবরিয়া নিহত হওয়ার পর 'শান্তির স্বপক্ষে নীলিমা' ও 'রক্তের অক্ষরে শপথের স্বাক্ষর' নামক অভিনব ও শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ কর্মসূচির মাধ্যমে হত্যাকাণ্ডের বিরুদ্ধে দেশব্যাপী ব্যাপক জনসচেতনতা সৃষ্টি করেছিলেন তিনি। সারা দেশে আলোড়ন তোলে তার এ কর্মসূচি।

কিবরিয়া দম্পতির পুত্র ড. রেজা কিবরিয়া একজন স্বনামখ্যাত অর্থনীতিবিদ এবং মেয়ে ড. নাজলী কিবরিয়া বস্টন বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান অনুষদের সহযোগী অধ্যাপক হিসেবে কর্মরত।

সিলেট আওয়ামী পরিবারের লোকজনও অত্যন্ত বিনয়ী হিসেবে চিনতেন তাকে। তাদের মতে, রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব না হলেও আসমা কিবরিয়া ছিলেন একজন মহিয়সী নারী। আড়ালে থেকেও স্বামীকে সমাজ ও মানুষের কল্যাণে ব্রত থাকার সাহস যুগিয়েছেন।

আসমা কিবরিয়ার বিদেহি আত্মার মাগফেরাত কামনা করেছেন তারা।

সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক সংসদ সদস্য শফিকুর রহমান চৌধুরী বাংলানিউজকে বলেন, আসমা কিবরিয়া একজন মহিয়সী নারী ছিলেন। স্বামী হত্যার বিচারের দাবিতে জীবোদ্দশায় অনেক মানববন্ধনও করেছেন। ব্যক্তিগত ভাবে তার সঙ্গে কয়েকবার দেখা করেছি আমি। তার মেয়ের সঙ্গেও লন্ডনে বার বার দেখা হয়েছে।

তার মৃত্যুতে সিলেট আওয়ামী পরিবার ব্যথিত উল্লেখ করে শফিকুর রহমান বলেন, অত্যন্ত দুঃখের বিষয়, কিবরিয়া হত্যার ঘাতকদের বিচার দেখে যেতে পারলেন না তিনি। তবে এই সরকারের আমলে বিচার হলে অন্তত তার আত্মা শান্তি পাবে।  

সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাবেক সিটি মেয়র বদর উদ্দিন আহমদ কামরান বাংলানিউজকে বলেন, আসমা কিবরিয়া একজন সমাজহিতৈষী মানুষ ছিলেন। তিনি রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব ছিলেন না। যে কারণে তার সংস্পর্শে যাওয়া এবং জীবনী সম্পর্কে জানার তেমন সুযোগ হয়নি।

সাবেক অর্থমন্ত্রী শাহ এএমএস কিবরিয়া মারা যাওয়ার পর তিনি জনসম্মুখে আসেন। 'শান্তির স্বপক্ষে নীলিমা' ও 'রক্তের অক্ষরে শপথের স্বাক্ষর' নামক অভিনব ও শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ কর্মসূচির মাধ্যমে স্বামী হত্যার বিচারের দাবিতে মানববন্ধন করেছিলেন। তার মৃত্যুতে সিলেট আওয়ামী পরিবার শোকাহত।

আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মিসবাহ উদ্দিন সিরাজ বাংলানিউজকে বলেন, সাবেক অর্থমন্ত্রী শাহ এএমএস কিবরিয়া ছিলেন একজন আন্তর্জাতিক ব্যক্তিত্ব। আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে তাকে সহযোগিতা করে গেছেন তার স্ত্রী আসমা কিবরিয়া। তিনি রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব ছিলন না ঠিকই, তবে সমাজ সেবামূলক কাজে বেশি নিয়োজিত ছিলেন। যে কারণে তার জীবনী অনেকেরই অজানা। স্বামী হত্যার বিচার দাবিতে তিনি আন্দোলন করে গেছেন। কিন্তু জীবোদ্দশায় ঘাতকদের বিচার দেখে যেতে পারলেন না।

তবে আওয়ামী লীগ সরকারের আমলেই আলোচিত এ হত্যাকাণ্ডের বিচারের রায় হবে বলে আশাবাদী সিরাজ।

২০০৫ সালের ২৭ জানুয়ারি হবিগঞ্জ সদর উপজেলার বৈদ্যের বাজারে স্থানীয় আওয়ামী লীগ আয়োজিত জনসভা শেষে ফেরার পথে দুর্বৃত্তদের ছোড়া গ্রেনেড হামলায় নিহত হন সাবেক অর্থমন্ত্রী শাহ এএমএস কিবরিয়া ও তার ভাতিজা শাহ মঞ্জুর হুদাসহ পাঁচজন। আহত হন বর্তমান জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট মো. আবু জাহিরসহ ৪৩ জন।

এ ঘটনায় আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এমপি অ্যাডভোকেট মো. আব্দুল মজিদ খান বাদী হয়ে সদর থানায় হত্যা এবং বিস্ফোরক আইনে পৃথক দু’টি মামলা দায়ের করেন। হত্যা মামলাটি বর্তমানে সিলেট বিভাগীয় দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে বিচারাধীন রয়েছে।

বাংলাদেশ সময়: ১৫০০ ঘণ্টা, নভেম্বর ০৯, ২০১৫
এনইউ/এএসআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।