ঢাকা, রবিবার, ৫ মাঘ ১৪৩১, ১৯ জানুয়ারি ২০২৫, ১৮ রজব ১৪৪৬

জাতীয়

লালন পার্কে বেষ্টনি হচ্ছে

বিভ্রান্তি কাটাতে সমাবেশ চায় রাসিক

শরীফ সুমন, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭৩২ ঘণ্টা, নভেম্বর ৯, ২০১৫
বিভ্রান্তি কাটাতে সমাবেশ চায় রাসিক ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

রাজশাহী: রাজশাহী মহানগরীর পাঠানপাড়া এলাকায় লালন শাহ পার্কটি আমজনতার জন্য উন্মুক্তই থাকছে- এমন ঘোষণা একদিন আগে দিয়েছে রাজশাহী সিটি করপোরেশন (রাসিক)।

এবার বিষয়টি নিয়ে কেউ যেনো আর বিভ্রান্তি ছড়াতে না পারে সেজন্য সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের নিয়ে সেখানে সমাবেশ করতে চায় রাসিক।

বিষয়টি নিয়ে প্রাথমিক সিদ্ধান্ত হয়েছে।      

এদিকে, সোমবার (৯ নভেম্বর) বেলা ১২টার দিকে লালন শাহ পার্কে গিয়ে দেখা যায়, পার্কটিতে বেষ্টনি দেওয়ার কাজ দ্রুত গতিতে এগিয়ে চলছে। সোমবার লোহার অ্যাঙ্গেল ফুটোর কাজ চলছে। মঙ্গলবার থেকে সেগুলোর ওয়েল্ডিংয়ের কাজ শুরুর কথা রয়েছে। কাঁটাতারের বেড়া ও সবুজ নেট দেওয়ার জন্য মালামাল মজুদ করা হয়েছে। রাখা হয়েছে লোহার রড, সিমেন্টসহ অন্যান্য প্রয়োজনীয় নির্মাণ সামগ্রীও।    

পার্কের উন্মুক্ত মঞ্চে বসে সামনে তাকাতেই পদ্মা পাড়ের সবুজ কারুকার্য চোখের সামনে ভেসে ওঠে। সহজেই বোঝা যায়, রাজশাহীবাসী কেনো চিত্তবিনোদনের অন্যতম কেন্দ্র হিসেবে পদ্মাপাড়কেই বেছে নিয়েছে। উপরে নীল আসমান; নীচে চরের ওপারের কাশবন, কখনও শান্ত পদ্মার নির্মল বাতাস। কখনও চরে জমে থাকা পানিতে ভাঙা ভাঙা ঢেউয়ের নাচন। প্রতিদিন সান্ধ্য প্রদীপ নেভার মতই পশ্চিমাকাশে রক্তিম সূর্য ডোবা। যা দেখার নেশায় হাজারো মানুষ ছুটে আসেন মনোমুগ্ধকর এই পরিবেশে।

পার্কের পশ্চিম প্রান্ত দিয়ে ঢুকতেই চোখে পড়ে পানি সংরক্ষণের জন্য নির্মিত বড় চৌবাচ্চা। যা বর্তমানে খোলা অবস্থাতেই আছে। তার সামনে মাটি ভরাট করে আরও উঁচু করা হচ্ছে।

পার্কের মধ্যে উন্মুক্ত মঞ্চের পাশে গরু পালনের দৃশ্য চোখে না পড়লেও এর সীমানা ঘেঁষে গরু চরাতে দেখা গেছে। পাশ দিয়ে হেঁটে যাওয়া গরুকে সীমানার মধ্যে ঢুকতেও দেখা গেছে।  

আবদুর রাজ্জাক নামে স্থানীয় এক অধিবাসী জানান, রাজশাহী সিটি করপোরেশন বেষ্টনি দিচ্ছে। পার্কটি রক্ষণাবেক্ষণের জন্য উদ্যোগটি নি:সন্দেহে ভালো। তবে পার্কটি ইজারা দেওয়া বা জনসাধারণের কাছ থেকে পার্কে ঢোকার জন্য টিকিট নেওয়ার সিদ্ধান্তটি ভুল ছিল। এজন্য সবাই প্রতিবাদ করেছেন। উন্মুক্ত রাখা হলে বেষ্টনি দেওয়াতে তাদের কোনো আপত্তি নেই বলে জানান তিনি।

লালন শাহ পার্কে ঘুরতে আসা সাগর আহমেদ নামে এক তরুণ বলেন, বেষ্টনি নির্মাণ কাজ শেষ হলে অন্তত: আর যা-ই হোক গরু-ছাগল ঢুকে পরিবেশ নোংরা করতে পারবে না। আর পদ্মা নদীর তীর ঘেঁষা লালন শাহ পার্কটি আরও সবুজ, নির্মল ও নিরাপদ হলে বিনোদন প্রেমীদের ভিড়ও বাড়বে।       

পার্কে কর্মরত মাজদার আলী ও তার সহকর্মী সেন্টু শেখ জানান, বেষ্টনি নির্মাণের কাজ দ্রুত এগিয়ে চলছে। এক মাসের মধ্যেই কাজ শেষ করা সম্ভব হবে। সোমবার সীমানা প্রাচীরের জন্য অ্যাঙ্গেল ফুটো করার কাজ চলে। আগামীকাল মঙ্গলবার থেকে ওয়েল্ডিংয়ের কাজ শুরু হবে বলে জানান তিনি।    

বিষয়টি নিয়ে কথা বলতে গেলে রাজশাহী হেরিটেজ সোসাইটির সভাপতি মাহবুব সিদ্দিকী জানান, দেরীতে হলেও রাজশাহী সিটি করপোরেশন মানুষের মুক্ত চিন্তাকে সম্মান দেখিয়েছে। এজন্য তারা সাধুবাদ পেতেই পারে। তবে বেষ্টনি দেওয়ার পর পদ্মাপাড়ের এই পার্কটি নিয়ে যেনো আবার নতুন কোনো সিদ্ধান্ত না হয়, সেখানে সর্বসাধারণের অবাধ চলাচল নিশ্চিত করতে হবে বলে মন্তব্য করেন তিনি।

এক প্রশ্নের জবাবে মাহবুব সিদ্দিকী জানান, রাজশাহী নগর সৃষ্টির পেছনে পদ্মার অবদান অনস্বীকার্য। দেশ স্বাধীনের পরও রাজশাহী-চাঁপাইনবাবগঞ্জের ভুবন বিখ্যাত আম, সকল প্রকার পণ্য ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে নিয়ে যেত পদ্মার বুক দিয়েই। বড় বড় ছৈ তোলা নৌকায় স্রোতের অনুকূলে পাল খাটিয়ে মাঝি মাল্লারা ঢেউয়ের তালে তালে ভাটিয়ালী গান গেয়ে নৌকা বাইতো। রাজশাহী শহরতলীর ছেলে-মেয়েরা এককালে পদ্মা তীরে মাঝি-মাল্লাদের আনন্দের সঙ্গে নিজেরাও গেয়ে উঠত।

এখন শুধু নগরবাসী নয়, দেশ-বিদেশের পর্যটকরাও তীরে পদার্পণ করে পদ্মাকে ধন্য করেন। দিন বদলের পালায় সেকালের পদ্মা আর আজকের পদ্মার সাথে মানুষের জীবন ও জীবিকার  তফাৎ হলেও সম্পর্কের বিভেদ ঘটেনি। তাই নদীঘেঁষা লালন শাহ পার্কটি সবার জন্য উন্মুক্তই রাখতে হবে বলে মত দেন তিনি।
 
রাজশাহী সিটি করপোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী আশরাফুল হক জানান- পদ্মাপাড়ের উন্মুক্ত পার্কটি ইজারা নয়, যে কোনোভাবে রক্ষণাবেক্ষণই ছিল প্রধান উদ্দেশ্য। কিন্তু শেষ পর্যন্ত সাধারণ মানুষের ইচ্ছের কারণে পার্কটির প্রবেশাধিকার উন্মুক্তই রাখা হচ্ছে। তবে নিরাপত্তা এবং মঞ্চ ও স্থাপনার বিভিন্ন সরঞ্জাম যেনো চুরি না হয়ে যায় সেজন্য ৭৫০ মিটার এলাকাজুড়ে সবুজ বেষ্টনি গড়ে তোলা হচ্ছে।   

আশরাফুল হক আরও জানান, বেষ্টনি নির্মাণের পর সেখানে নিরাপত্তাকর্মী নিয়োগ করা হবে। এছাড়া একটি কফিশপ ও খাবারের দোকান স্থাপনের পরিকল্পনাও রয়েছে তাদের। আর এ নিয়ে কেউ যেনো বিভ্রান্তি ছড়াতে না পারে সেজন্য সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের নিয়ে পার্কে শিগগিরই সমাবেশ করতে যাচ্ছে রাসিক। বিষয়টি নিয়ে প্রাথমিক সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে জানান রাসিকের এই ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা।

এর আগে রাজশাহী মহানগরীর পদ্মা নদীর কূল ঘেঁষে স্থাপন করা লালন শাহ পার্ক লিজ দেওয়ার সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসে রাসিক। সর্বসাধারণের জন্য উন্মুক্ত স্থানটি রক্ষণাবেক্ষণের জন্য বেষ্টনি দেওয়া হলেও কোনো টিকিট লাগবে না। রোববার (০৮ নভেম্বর) বিকেলে রাজশাহী সিটি করপোরেশনের জনসংযোগ কর্মকর্তা কাজী আমিরুল করিম সাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এই তথ্য নিশ্চিত করা হয়।

বিষয়টি নিয়ে গত শনিবার (০৭ নভেম্বর) বাংলানিউজে ‘পদ্মাপাড়ে কাঁটাতারের বেড়া, ফুঁসছেন রাজশাহীবাসী’ শিরোনামে সংবাদ প্রকাশ হয়। এছাড়া লালন শাহ পার্ক লিজ দেওয়ার সিদ্ধান্ত বাতিলের দাবিতে বিভিন্ন কর্মসূচির সংবাদ নিয়মিত প্রকাশ করে আসছিল বাংলানিউজ।

বাংলাদেশ সময়: ১৭৩২ ঘণ্টা, নভেম্বর ৯, ২০১৫
এসএস/জেডএম

** লালন শাহ পার্ক লিজ দেওয়া হবে না
** পদ্মাপাড়ে কাঁটাতারের বেড়া, ফুঁসছেন রাজশাহীবাসী

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।