ঢাকা, রবিবার, ৪ মাঘ ১৪৩১, ১৯ জানুয়ারি ২০২৫, ১৮ রজব ১৪৪৬

জাতীয়

সমস্যা-সঙ্কটের বৃত্তে বন্দি ফায়ার সার্ভিস

এম.আব্দুল্লাহ আল মামুন খান, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২১৫ ঘণ্টা, নভেম্বর ১১, ২০১৫
সমস্যা-সঙ্কটের বৃত্তে বন্দি ফায়ার সার্ভিস ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

ময়মনসিংহ: ভূমিকম্পের সর্বোচ্চ ঝুঁকিতে রয়েছে ময়মনসিংহ। এ ঝুঁকি মাথায় নিয়েই নগরীতে আকাশছোঁয়া ভবন নির্মাণের হিড়িক পড়েছে।

অথচ ভূমিকম্প কিংবা বড় ধরনের অগ্নিকাণ্ডে এসব বহুতল ভবনে ক্ষয়ক্ষতি সামাল ও উদ্ধার অভিযান চালানোর মতো অত্যাধুনিক যান ও সরঞ্জাম নেই ময়মনসিংহ ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের।

এমনকি ওইসব যান চালানো ও ব্যবহার করার মতো প্রশস্ত সড়কের সংখ্যাও নগরীতে নেহায়েতই কম। প্রথম শ্রেণির এ স্টেশনটির অভ্যন্তরেও অন্ত নেই সমস্যার। এ স্টেশনের স্যাঁতস্যাঁতে মূল ভবনটি বছরের ছয় মাস জলমগ্ন অবস্থায় থাকে।

৫ থেকে ৬ মাত্রার ভূমিকম্প হলে ধসে পড়তে পারে জরাজীর্ণ ও ঝুঁকিপূর্ণ এ ভবনটি। এমন সমস্যা-সঙ্কটের মধ্যে দিয়েই বুধবার (১১ নভেম্বর) থেকে শুরু হচ্ছে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স সপ্তাহ। সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়েই অবহেলিত এ প্রতিষ্ঠানটিকে ঢেলে সাজানোর দাবি তুলেছেন সচেতন নগরবাসী।

বাংলাদেশ ন্যাশনাল বিল্ডিং কোড (বিএনবিসি) জরিপ মতে, ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল সীমান্তবর্তী ডাউকি ফল্ট থেকে মাত্র ৪০ কিলোমিটার দূরে রয়েছে ময়মনসিংহ। এছাড়া মধুপুর চ্যুতিও এ অঞ্চলের জন্য বেশ বিপজ্জনক। ১৮৮৫ সালে এ অঞ্চলে ভূমিকম্পে বড় ধরনের ক্ষয়ক্ষতি হয়েছিল। পরিবর্তন হয়ে গিয়েছিল ব্রক্ষপুত্র নদের গতিপথ। এখানে আবারো বড় ধরনের ভূমিকম্প সংঘটিত হবার আশঙ্কা রয়েছে।

সংশ্লিষ্টরা জানান, এ আশঙ্কার মধ্যেও নগরীতে গত কয়েক বছরে ৩০ থেকে ৪০টি আকাশছোঁয়া ভবন তৈরি হলেও বেশিরভাগ ভবনেই নেই অগ্নিনির্বাপক ব্যবস্থা। ময়মনসিংহ ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের ৫ থেকে ৬ তলার উপরে কোন বহুতল ভবনে ভূমিকম্পে ক্ষয়ক্ষতি বা অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটলে এগুলো নিয়ন্ত্রণের ক্ষমতা নেই।

স্বাধীনতার পর আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকারের সময়ে ফায়ার সার্ভিসের অনেক উন্নয়ন হলেও এসব বহুতল ভবনে ক্ষয়ক্ষতি সামাল ও উদ্ধার কার্যক্রমের জন্য এখনো দেড় থেকে দুই কোটি টাকা দামের বড় ধরনের হাইড্রোলিক টার্ন টেবেল ল্যাডারসহ অত্যাধুনিক কোন যানবাহন নেই বলে জানান ময়মনসিংহ ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের সহকারী পরিচালক আবুল হোসেন।

আগুন বা দুর্ঘটনার খবর পাওয়ামাত্রই ফায়ার সার্ভিস কর্মীরা ঘটনাস্থলে ছুটে যান, এ কথাটি স্মরণ করিয়ে মঙ্গলবার (১০ নভেম্বর) বিকেলে বাংলানিউজের সঙ্গে আলাপকালে তিনি বলেন, বেশিরভাগ হাইরাইজ ভবনে পৌছার জন্য নগরীর ভেতর প্রশস্ত সড়ক নেই। এসব যান চলাচল ও ব্যবহার করার জন্য ২০ থেকে ৩০ ফুট প্রশস্ত সড়ক প্রয়োজন। কিন্তু এখানকার অধিকাংশ সড়কই সরু।

দুর্ঘটনায় ক্ষয়ক্ষতি হ্রাস এবং দ্রুত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এসব উদ্ধারযান সরবরাহের জন্য ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের মহাপরিচালক বরাবর ৩ থেকে ৪ বার আবেদন করা হয়েছে, ফল হয়নি। কিন্তু ময়মনসিংহ বিভাগে উন্নীত হবার পর আশার আলো জেগেছে। এখন দ্রুত সময়ের মধ্যে প্রাপ্যতার ভিত্তিতেই এসব যানবাহন পাওয়া যাবে বলে আশা প্রকাশ করেন আবুল হোসেন।

অনেকটাই অবহেলার মধ্যে থাকা এখানকার ফায়ার সার্ভিসের বড় ধরনের দুর্ঘটনা সামাল দিতে প্রয়োজন ৠাকার ভ্যান, ডাম্পিং শিট, পাইপ ইস্কুইজার, নোঙর, চেইনসহ হরেক রকমের সরঞ্জাম। কিন্তু এর কোনটিই নেই এ স্টেশনে। এসব যন্ত্রপাতির জন্যও উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন করা হয়েছে বলে জানান সহকারী পরিচালক আবুল হোসেন।

নিজেদের দুর্গতির চিত্র তুলে ধরে তিনি বলেন, ১৯৬১ সালে নির্মিত হয় ময়মনসিংহ ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের মূল দ্বিতল ভবন। কিন্তু ৫ থেকে ৬ মাত্রার ভূমিকম্পে পুরনো জরাজীর্ণ এ ভবনটি ধসে পড়তে পারে। কর্মচারীদের থাকার ব্যারাক ভবনটিও শোচনীয়। এখানে খসে পড়ছে পলেস্তারা।

ময়মনসিংহের ৯ উপজেলায় ফায়ার সার্ভিসের স্টেশন রয়েছে। সীমান্তবর্তী ধোবাউড়া উপজেলাতে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স স্টেশন নির্মাণের কাজ পুরোদমে চলছে। বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় (বাকৃবি) এলাকায় আরেকটি দ্বিতীয় শ্রেণির স্টেশন নির্মাণের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ আগামী দুসপ্তাহের মধ্যে জমি বুঝিয়ে দিলেই আহবান করা হবে দরপত্র, বলেন আবুল হোসেন।

বাংলানিউজের প্রশ্নের উত্তরে তিনি জানান, ২০১৩ সাল থেকে ২০১৫ সালের আগস্ট পর্যন্ত ১ হাজার ৮শ’ ২৭ টি অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। এর মধ্যে ২০১৩ সালে ১০ কোটি ৩২ লক্ষ ৭৮ হাজার ৯শ’ টাকা, ২০১৪ সালে ১০ কোটি ১৫ লক্ষ ৩৬ হাজার ৭শ’ টাকা এবং চলতি বছরের আগস্ট পর্যন্ত ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ ৭ কোটি ৪ লক্ষ ২৪ হাজার টাকা।

বাংলাদেশ সময়: ১২১৫ ঘণ্টা, নভেম্বর ১১, ২০১৫
জেডএম/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।