ঢাকা, শনিবার, ৪ মাঘ ১৪৩১, ১৮ জানুয়ারি ২০২৫, ১৭ রজব ১৪৪৬

জাতীয়

উপরে ফিটফাট, ভেতরেই সদরঘাট

ইকরাম-উদ দৌলা, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০২১৫ ঘণ্টা, নভেম্বর ১২, ২০১৫
উপরে ফিটফাট, ভেতরেই সদরঘাট ছবি: রাজিব- বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

ঢাকা: ‘উপরে ফিটফাট, ভেতরে সদরঘাট’ - দেশের সর্বত্র প্রচলিত একটি প্রবাদ। প্রবাদটি দিয়ে সাধারণভাবে বাহ্যিক চাকচিক্যময়তা আর ভেতরের অগোছালো, অব্যবস্থাপনা বা অনিয়মকে বোঝানো হয়।



আকারে, আয়তনে কিংবা অর্থনৈতিক দিক বিবেচনায় দেশের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ নৌপরিবহন টার্মিনাল সদরঘাট। এটি বেশ গুরুত্বপূর্ণও।

এ টার্মিনাল থেকেই দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে দিন-রাত যাত্রী কিংবা পণ্যবাহী লঞ্চ চলাচল করে। নিঃস্বন্দেহে এর ব্যবস্থাও বেশি, তবে অব্যস্থাপনাও কম নয়।
 
সময় পরিবর্তনের সঙ্গে সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনালের চেহারাও হয়তো সমানুপাতিক হারে পাল্টেছে। লেগেছে আধুনিকতার ছোঁয়াও।

পাল্টে গেছে টার্মিনাল ভবন, ব্যবস্থাপনায় এসেছে উৎকর্ষতা। আছে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর উপস্থিতিও। সেই সঙ্গে উন্নত হয়েছে পন্টুনও।
বুধবার (১১ নভেম্বর) রাত ৮টার দিকে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে দিয়ে কিছুক্ষণ এগুনোর পরপরই সিএনজি চালিত অটোরিকশা থেমে গেল।

চালক মনসুর আলী বললেন, মামা নামেন, আইসা পরছি। পালকির মতো করে বানানো অটোরিকশার  দরজা খুলে মাথা বের করেই মনে হলো-নাহ, সদরঘাট বুঝি আর সেই সদরঘাট নেই। টার্মিনালের ভেতরটাও হয়তো ফিটফাটই হবে।

মনে হল- লঞ্চ ভ্রমণও বেশ আরামদায়ক হবে। এই ভেবে প্রশান্তি নিয়েই এগুনো গেল। সুন্দর ঝকঝকে গেট, মেঝে পার হয়ে একটু সামনে যেতেই দেখা মিললো পরিপাটি টিকিট কাউন্টার।

কাউন্টারের সামনে বসার জন্য পাতা হয়েছে সুন্দর গোছানো চেয়ার। পন্টুনে নামার জন্য আছে ছাউনিওয়ালা ব্রিজ।

তবে ওই পর্যন্তই। পন্টুনে যাওয়ার ব্রিজে পা রাখতেই দেখা মিলল শত শত হকারের, ঠাঁই আসন গেরে বসা দোকান।

গন্তব্যের কারণেই যেতে হলো ৮ নম্বর পন্টুনের দিকে। যেখানে দাঁড়িয়ে আছে শের-ই-বাংলার ‘দেশে’র লঞ্চ। সেখানে একটি কেবিন আগে থেকেই বুকিং দেওয়া ছিল।

ঠিক ১৮বছর আগে এখানে এসেছিলাম। তখনকার থেকে অবস্থার উন্নয়ন হয়েছে ঢের বেশি। তবে প্রকৃত উন্নয়ন যে হয়নি, তা বললে ভুলও হবে না।

সেই ১৯৯৭ সালে যেমন দেখেছিলাম-হকারদের দৌরাত্ম, যাত্রী টানাটানি, এখনও তেমনি আছে।

টার্মিনাল ঘুরে দেখা গেল, পন্টুনে শেকড় গছিয়ে ব্রিজের দুইপাশে বসেছে হকাররা। এজন্য যাত্রীদের চলাচলে বেশ অসুবিধা হয়।

অন্যদিকে তারাও জীবনের ঝুঁকি নিয়েই চালিয়ে যাচ্ছেন ব্যবসা। কেউ কেউ আবার পন্টুনের সঙ্গে নৌকা বেঁধে ভাসমান দোকান নিয়েও বসেছেন।

অথচ একের পর এক লঞ্চ এসে থামছে ঘাটে। এতে অনেক সময় ওইসব দোকানের ওপরও চলে আসে লঞ্চ।

তখন তাড়াহুড়ো করে গুঁটিয়ে নেওয়া হয় দোকানগুলো। কিংবা ভাসমান দোকান উল্টে যাওয়ারও জোগাড় হচ্ছে।

সব মিলিয়ে পন্টুনে হকারের ‘অবাঞ্চিত’ অবস্থানের কারণে তা কোনোভাবেই লঞ্চঘাটের সাক্ষ্য বহন করে না। যেন তাদের নির্ধারিত বসার কোনো মার্কেট।

পন্টুনের ওই পাশটা, যেখানে ঢেউ এসে আঁছড়ে পড়ছে, ঘাটে নোঙ্গর করার সময় লঞ্চের সামনের অংশের ধাক্কাও লাগে। ঠিক এ পাশটায় ফলের দোকান নিয়ে বসেছেন বিক্রমপুরের মো. সোলায়মান।

বললেন, টার্মিনাল ইজারা দেওয়া। কিন্তু পন্টুনের উপরে বওয়ার নিয়ম নাই। এইডা তো সরকারি জায়গা। পুলিশ আইসা মাঝে মইধ্যে তুইল্যা দেয়। এরপরেও বইতে হয়। তয়, আমরা কিন্তু প্রত্যেকদিন চান্দা দিয়াই ব্যবসা করি।

তবে যিনি চাঁদা নেন কিংবা উনি কার পক্ষ থেকে নেন সে বিষয়ে কিছু জানেন না সোলায়মান।

পন্টুনে বুট-ছোলা থেকে শুরু করে বিভিন্ন ধরনের হকার নানা পণ্য নিয়ে ঘোরাঘুরি করছেন। অনেকে পসরা সাজিয়ে সুরে সুরে হাঁক তুলছেন ‘এই যে ভাই চাবাইয়া যান, ছাইড়া দিবো। খাইয়া যান, ছাইড়া দিবো। ’

তবে পত্রিকার হকারের মুখে অবশ্য কোনো রা নেই। ভাসি হতে চলেছে এমন খবরের কাগজ কে-ই বা নেবে, হয়তো হাল ছেড়ে খুঁটি ধরে দাঁড়িয়ে আছেন তিনি।

নদীতে ভাসমান নৌকায় নানা পণ্য ফেরি করেন আব্দুর রহিম। জানালেন, ঝুঁকি তো আছেই। তবে দুর্ঘটনা তেমন একটা হয় না।

আর এভাবে ব্যবসা করতে করতে অভ্যস্ত হয়ে গেছেন বলে জানান তিনি
 
এদিকে বরিশালগামী লঞ্চ ছাড়ার সময় ঘনিয়ে আসছে। তাই চললাম সুন্দরবন-৭ লঞ্চের দিকে।

উঠার সময় লঞ্চে বাইরের চাকচিক্য দেখে মনে হল- আরামদায়ক ভ্রমণ হবে, এ পরিবেশে ঘুমানোর প্রশান্তির ভাবও উদয় হলো মনে।

সিঁড়িতে দু’ চক্কর ঘুরে গেলাম আমাদের বুকিং করা ২০৫ নম্বর কেবিনে। কিন্তু একি হাল! ভেতরে ঢুকেই সব প্রশান্তির ভাব যেন মুহূর্তেই উবে গেল।

ছোট-পরিসরের জায়গায় দেয়াল ঘেঁষা দু’টো পাঁচ ফিট বাই আড়াই ফিট আয়তনের খাট রাখা হয়েছে। রয়েছে একটি টিভিও। তবে তা ‘লঞ্চ বয়’ ছাড়া চলে না।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ‘লঞ্চ বয়’ জানান, লঞ্চের মাঝামাঝি হওয়ায় কেবিনের ভাড়া এসি রুমের সমান।

তবে এই মাঝামাঝি অবস্থানের কোনো সুবিধা কিন্তু যাত্রাকালে বোঝা গেল না। বরং পকেটের টাকা ‘ডাকাতি’ হয়েছে বলেই মনে  হলো।
 
বাংলাদেশ সময়: ০২১০ ঘণ্টা, নভেম্বর ১২, ২০১৫
ইইউডি/এমএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।