ঢাকা: ভোর সোয়া পাঁচটা। ফজরের আজান হচ্ছে।
রংপুরের মিঠাপুকুরের কফিলউদ্দিনের ছেলে আব্দুর রউফ বলেন, শেখ সাহেবের ভাষণের কথা মনে হইল গা আজও শিউরে ওঠে। সেই ভাষণের পরই আমরা যুদ্ধের জন্য রেডি হইয়া গেছিলাম।
‘২৫ মার্চ যখন শুনলাম শেখ সাহেবরে মিলিটারিরা নিয়া গেছে, তখন বুঝলাম যুদ্ধ শুরু হইয়া গেছে। সপ্তাহখানেক পরে আমরা শুনলাম বর্ডারে নাকি মুক্তিযোদ্ধাগো গুলি করা শিখাইতাছে। মিঠা পুকুর থেকে আমরা কয়েকজন চইলা গেলাম। ট্রেইনিং নিলাম। তারপর যুদ্ধ। দুই তিন মাস পর গ্রামে বাঙ্কার খোঁড়ার জন্য লোক দরকার হইলো। গ্রামে চইলা গেলাম। কৃষক সাইজা রাস্তায় রাইতে রাইতে বাঙ্কার খুঁড়তাম। কী যে সময় গেছে একমাত্র খোদা জানে। ’
দেশ স্বাধীনের পর ফের কৃষিকাজ শুরু করেন আব্দুর রউফ। পড়ালেখা না জানা মানুষটার মুক্তিযোদ্ধার সার্টিফিকেট নেওয়া হয়নি।
বলেন, মাগো ওইসব আমরা বুঝি না। কষ্টে ছিলাম। মিলিটারিরা না গেলে দেশে শান্তি হইবো না। তাই যুদ্ধ করছিলাম।
দারিদ্র্যের কষাঘাতে ৩০ বছর আগে ঢাকা আসেন আব্দুর রউফ। শুরু হয় জীবন যুদ্ধ। তিন ছেলে আর এক মেয়ে। অর্থাভাবে ছেলেমেয়েদের বেশি দূর পড়াতে পারেননি এ পিতা। দুই ছেলে আর মেয়ে বিথী কাজ করছেন গার্মেন্টে। ছোটছেলে পড়ছে ক্লাস থ্রিতে।
দিন-রাত খেটে আব্দুর রউফ টাকা জমাচ্ছেন মেয়ে বিথীকে বিয়ে দেওয়ার টাকা জোগাড়ের জন্য।
আর একটিই স্বপ্ন আব্দুর রউফের, রাজাকারের বিচার করা।
বলেন, পাপ বাপেরও ছাড়ে না। ভাবছিলো কিচ্ছু হবে না। এখনতো বিচার হইতাছেই। কী যে শান্তি লাগে এখন।
বাংলাদেশ সময়: ০৮৪০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৬, ২০১৫
ইউএম/এসএস