রাজশাহী: সব যুদ্ধাপরাধীর দ্রুত বিচার, দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব রক্ষার শপথ গ্রহণ ও জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের শ্রদ্ধা জানানোর মধ্য দিয়ে বুধবার (১৬ ডিসেম্বর) সূর্যদয়ের পর থেকে রাজশাহীতে উদযাপিত হচ্ছে মহান বিজয় দিবসের নানা কর্মসূচি।
এর আগে মঙ্গলবার (১৫ ডিসেম্বর) দিনগত রাত ১২টা ১ মিনিটে রাজশাহী পুলিশ লাইনে ২১ বার তোপধ্বনির মাধ্যমে দিবসটির সূচনা করা হয়।
বিজয়ের ৪৪ বছর পূর্তি ও মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে জেলা প্রশাসন ছাড়াও বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও পেশাজীবী সংগঠন ব্যাপক কর্মসূচি পালন করছে।
বিজয় দিবসের প্রথম প্রহরেই বীর শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে রাজশাহী মহানগরীর শহীদ মিনারগুলোতে মানুষের ঢল নামে। প্রগতিশীল সাহিত্য-সংস্কৃতিকর্মী রাজনীতিবিদ, সমাজকর্মীসহ রাজশাহীর আপামর জনগণ পুষ্পস্তবক অর্পণের মাধ্যমে হৃদয়ের গভীর থেকে বিনম্র শ্রদ্ধা জানাচ্ছেন দেশের পরাধীনতার গ্লানি মোচনে প্রাণ উৎসর্গ করা বীর সন্তানদের।
রাত ১২টা এক মিনিটে মহানগরীর ভুবন মোহন পার্ক, রাজশাহী কলেজ শহীদ মিনার, রাজশাহী কোর্ট শহীদ মিনার, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় শহীদ মিনারসহ অন্য শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা নিবেদন করে বিভিন্ন সংগঠন। পরে ভোরে মহানগরীর শহীদ বেদীগুলো ফুলে ফুলে ভরে যায়। শ্রদ্ধা জানাতে আসা সর্বস্তরের মানুষের কণ্ঠে ছিল, অবিলম্বে সব যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের বলিষ্ঠ দাবি।
এদিকে, সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে নগর ভবন, বিভাগীয় কমিশনার ও জেলা প্রশাসকের কার্যালয়সহ বিভিন্ন সরকারি-বেরসরকারি ভবনে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হয়। ওয়ার্ড কার্যালয় ও রাসিক’র বিভিন্ন স্থাপনায়ও জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হয়। বাদ যোহর জাতির শান্তি ও অগ্রগতি কামনা করে সিটি করপোরেশন মসজিদে বিশেষ মোনাজাতের আয়োজন করা হয়েছে। এছাড়া মহানগরীর বিভিন্ন সড়ক, সড়কদ্বীপ রঙ-বেরঙের পতাকা সজ্জিত ও আলোকসজ্জা করা হয়েছে।
সকাল ৯টায় রাজশাহী মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতি স্টেডিয়ামে আনুষ্ঠানিকভাবে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন- রাজশাহী বিভাগীয় কমিশনার মোহাম্মদ হেলালুদ্দিন আহমদ। সেখানে তিনি পুলিশ, আনসার, ভিডিপি, ফায়ার সার্ভিস, বিএনসিসি, স্কাউটস, গার্লস গাইড, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছাত্র-ছাত্রী, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের সদস্যদের সম্মিলিত কুচকাওয়াজের অভিবাদন গ্রহণ করেন।
এসময় রাজশাহী জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মেজবাহ্ উদ্দিন চৌধুরী, রাজশাহী রেঞ্জের উপমহাপুলিশ পরিদর্শক (ডিআইজি) ইকবাল বাহার, রাজশাহী মহানগর পুলিশ কমিশনার মোহাম্মদ শামসুদ্দিন, রাজশাহীর পুলিশ সুপার নিসারুল আরিফসহ প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
বেলা ১১টা থেকে মহানগরীর লক্ষ্মীপুর মোড়সহ ও জনবহুল এলাকায় মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক প্রামাণ্য চিত্র প্রদর্শন করা হচ্ছে।
দুপুরের পর মহানগরীর বিভিন্ন মন্দির, গির্জা, প্যাগোডা ও ধর্মীয় উপাসনালয়ে জাতির সুখ, সমৃদ্ধি, শান্তি ও অগ্রগতি কামনা করে বিশেষ প্রার্থনার আয়োজন করা হবে। বিকেল ৩টায় রিভারভিউ কালেক্টরেট স্কুলে রয়েছে নারীদের ক্রীড়া অনুষ্ঠান।
এদিকে, সকাল থেকে প্রবেশমূল্য ছাড়া রাজশাহীর বরেন্দ্র গবেষণা জাদুঘর, পার্ক, চিড়িয়াখানা সর্বসাধারণের জন্য উন্মুক্ত রয়েছে। বিকেলে রিভারভিউ কালেক্টরেট স্কুলে আলোচনা সভা ও নারীদের ক্রীড়া অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হবে। এছাড়া মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতি স্টেডিয়ামে বিকেলে মুক্তিযোদ্ধা সংসদ একাদশ বনাম বিভাগীয় কমিশনার একাদশের মধ্যে প্রীতি ফুটবল ম্যাচ অনুষ্ঠিত হবে। সন্ধ্যায় সিটি করপোরেশনের গ্রিন প্লাজায় রয়েছে আলোচনা সভা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও পুরস্কার বিতরণ।
এদিকে, মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, কেন্দ্রীয় কারাগার, সরকারি শিশুসদন, শিশু নিবাস, অন্ধ, মুক ও বধির বিদ্যালয়, সেফ হোম, এসওএস শিশু পল্লী ও এতিমখানায় সকাল থেকে উন্নতমানের খাবার পরিবেশন করা হচ্ছে। সন্ধ্যায় সরকারি, আধাসরকারি, স্বায়ত্তশাসিত ও বেসরকারি ভবনগুলোতে আলোকসজ্জা শোভা পাবে।
বাংলাদেশ সময়: ১১৩৩ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৬, ২০১৫
এসএস/জেডএস