ঢাকা: আনন্দঘন পরিবেশে দেশব্যাপী মহান বিজয় দিবস উদযাপন করছে বাঙালি জাতি। রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন শহরের অলি-গলি থেকে শুরু করে বড় রাস্তার মোড় সেজেছে লাল-সবুজের রঙে।
৩০ লাখ শহীদের রক্তে অর্জিত জাতীয় পতাকা পতপত করে উড়ছে গাড়ি-বাড়িতে। অনেকে মাইকে একাত্তরের কালজয়ী গান কিংবা বঙ্গবন্ধুর সেই অমোঘ বাণী ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম’ বাজানো হচ্ছে। কোথাও চলছে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান কিংবা বিজয় শোভাযাত্রা।
যেন উৎসবে মেতে উঠেছে বাংলাদেশের মানুষ; আর উঠবেই না কেন? দিনটি যে তাদের আবেগের, সবচেয়ে আনন্দের, প্রাপ্তি আর অধিকার আদায়ের দিন।
নয় মাস রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের পর একাত্তরের এই দিনে ঢাকার ঐতিহাসিক রেসকোর্স ময়দানে (বর্তমান সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) আত্মসমপর্ন করে বর্বর পাকিস্তানি বাহিনী।
তাই যথাযোগ্য মর্যাদা ও বিপুল উৎসাহ-উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে দিবসটি উদযাপন করছে জাতি।
বুধবার (১৬ ডিসেম্বর) ভোরে ৩১বার তোপধ্বনির মাধ্যমে দিবস উদযাপনের আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়। সকালে সাভার জাতীয় স্মৃতিসৌধে ফুল দিয়ে মহান মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের শ্রদ্ধা জানান জাতীয় সংসদের স্পিকার, বিরোধীদলীয় নেতা, মন্ত্রিপরিষদের সদস্য, তিনবাহিনীর প্রধানসহ বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষ। এরপর সেখানে সাধারণ মানুষের ঢল নামে।
বেলা ১১টার দিকে স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধা জানাতে যান বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াসহ দলের জ্যেষ্ঠ নেতারা।
এদিকে দিবসটি উপলক্ষে সকাল ১০টায় জাতীয় প্যারেড গ্রাউন্ডে মনোজ্ঞ কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠিত হয়। প্যারেড গ্রাউন্ডে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে সম্মিলিত বাহিনীর কুচকাওয়াজে সালাম গ্রহণ করেন রাষ্ট্রপতি মো. আব্দুল হামিদ। পরে গাড়িতে চড়ে প্যারেড পরিদর্শন করেন তিনি। এবার প্রথমবারের মতো সেনাবাহিনীর নারী সদস্যরাও কুচকাওয়াজে অংশ নেন।
এ সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহা, মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক এবং তিন বাহিনীর প্রধান ছাড়াও ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
কুচকাওয়াজে মনোজ্ঞ ডিসপ্লে পরিবেশন করেন রাজধানীর বিভিন্ন স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা। তাদের শারীরিক নানা কসরত মুগ্ধ করেছে লাখো মানুষকে, যা নতুন মাত্রা যোগ করেছে বিজয় উৎসবে।
এবারের বিজয় দিবসের কুচকাওয়াজে ঢাকা সফররত ভারতীয় সশস্ত্র বাহিনীর লে. জেনারেল (অব.) ভিষ্ণু কান্ত চতুবের্দির নেতৃত্বে একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেওয়া ২৭ ভারতীয় যোদ্ধা উপস্থিত ছিলেন।
ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ক উপদেষ্টা সজিব ওয়াজেদ জয়, প্রধানমন্ত্রীর মেয়ে সায়মা হোসেন পুতুল ও শেখ রেহানার ছেলে রেদওয়ান সিদ্দিকী ববিও।
প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দূত জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ ও বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদও ছিলেন কুচকাওয়াজে।
এদিকে দিবসটি উপলক্ষে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে রাজধানীসহ সারা দেশে বিজয় শোভাযাত্রাসহ নানা কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে।
রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনের সামনে থেকে শুরু হয়ে শোভাযাত্রাটি ধানমণ্ডির ৩২ নম্বরে গিয়ে শেষ হয়।
নয়াপল্টনের দলীয় কার্যালয়ের সামনে থেকে মালিবাগ পর্যন্ত শোভাযাত্রা করেছে বিএনপি।
পৃথক কর্মসূচি পালন করেছে জাতীয় পার্টি, ওয়ার্কার্স পার্টি, সিপিবিসহ বিভিন্ন রাজনৈতি, সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্যোগে খেলার মাঠেও বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। মানুষের উপস্থিতি ছিল টিএসসিসহ সোহরাওয়ার্দী উদ্যান এলাকাতেও।
মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, বিরোধদলীয় নেতা এবং বিএনপির চেয়ারপারসন পৃথক বাণী দিয়েছেন। স্বাধীনতার ৪৪ বছর পূর্তিতে অবমুক্ত করা হয়েছে স্মাারক ডাক টিকিটেরও।
বুধবার, ১৬ ডিসেম্বর সরকারি ছুটি। দিবসটি উপলক্ষে সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ভবনে আলোকসজ্জা করা হয়েছে। বিশেষ খাবার পরিবেশন করা হচ্ছে হাসপাতাল, শিশুসদন ও কারাগারে।
সরকারি ছুটির দিন হওয়ায় দিনভর রাজধানীর বিভিন্ন বিনোদন কেন্দ্রগুলোতে ছিল উপচে পড়া ভিড়।
হাতে-মুখে লাল-সবুজের জাতীয় পতাকা কিংবা মাথায় পতাকার রঙের ফিতা বেঁধে ঘুরে প্রিয়জনদের সঙ্গে বিজয়ের আনন্দ উপভোগ করছেন বিভিন্ন বয়সের মানুষ।
বাংলাদেশ সময়: ১৭০৬ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৬, ২০১৫
এমএ
** বঙ্গভবনে বিজয় উৎসব
** পতাকার সাজে রাফা যেন একখণ্ড বাংলাদেশ
** বিজয় দিবস উদযাপনে মুখরিত দেশ
** বিজয় দিবসের কুচকাওয়াজে রাষ্ট্রপতির সালাম গ্রহণ