ঢাকা, শুক্রবার, ১২ পৌষ ১৪৩১, ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

কমছে তাপমাত্রা, কাঁপছে রাজশাহী

শরীফ সুমন, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯৪২ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৬, ২০১৫
কমছে তাপমাত্রা, কাঁপছে রাজশাহী

রাজশাহী: ‘রাজশাহীতে গত ১৫ ডিসেম্বর দিনের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ১৪ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। সর্বোচ্চ ২৩ দশমিক ৫।

এর আগের দিন ১৪ ডিসেম্বর সর্বনিম্ন ছিল ১৬ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং সর্বোচ্চ ২৩ দশমিক ৫। কিন্তু মাত্র দু’দিনের ব্যবধানে হঠাৎ করেই তাপমাত্রা নেমে এসেছে ১০ ডিগ্রির নিচে।

বুধবার (১৬ ডিসেম্বর) রাজশাহীতে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৯ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। যা চলতি মৌসুমের এখন পর্যন্ত সর্বনিম্ন তাপমাত্রা।     

গত দু’দিনের সংক্ষিপ্ত পরিসংখ্যান দিয়ে এভাবেই আবহাওয়ার তারতম্যের তথ্যগুলো বাংলানিউজকে জানাচ্ছিলেন রাজশাহী আবহওয়া পর্যবেক্ষণাগারের ভারপ্রাপ্ত আবহাওয়া কর্মকর্তা আশরাফুল আলম।

আকাশে মেঘ না থাকলে এই তাপমাত্রা আরও কমতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেন তিনি।

এক প্রশ্নের জবাবে আশরাফুল আলম বলেন, রাজশাহীসহ উত্তরাঞ্চলের ওপর দিয়ে বুধবার থেকে মৃদু শৈত্য প্রবাহ শুরু হয়েছে। এটি আরও দুই থেকে তিন দিন অব্যাহত থাকতে পারে।

এ সময় রাজশাহী অঞ্চল ঘন কুয়াশার চাদরে ঢাকা থাকতে পারে। এরপর ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহে মৃদু থেকে মাঝারি আকারের দু’টি শৈত্য প্রবাহ বয়ে যেতে পারে। তাতে এ অঞ্চলের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ৮ থেকে ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াসে নামতে পারে। আর জানুয়ারিতে বয়ে যেতে পারে মাঝারি থেকে তীব্র শৈত্য প্রবাহ। সে সময় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা নামতে পারে ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে জানান তিনি।

রাজশাহী আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের জ্যেষ্ঠ পর্যবেক্ষক লতিফা বেগম বাংলানিউজকে জানান, বুধবার (১৬ ডিসেম্বর) রাজশাহীতে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ২৩ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এদিন সকাল ৬টায় বাতাসের আদ্রতা ছিল ১০০ শতাংশ এবং বিকেল ৩টায় ছিল ৪৫ শতাংশ।

এদিকে, রাজশাহীর ওপর দিয়ে হঠাৎ করেই মৃদু শৈত্য প্রবাহ বয়ে যাওয়ায় চরম দুর্ভোগ শুরু হয়েছে। উত্তরের হাড় কাঁপানো ঠাণ্ডা বাতাসে ছিন্নমূল মানুষগুলো জবুথবু হয়ে পড়েছে। আকাশে মেঘ কেটে যাওয়ায় বুধবার সকাল থেকেই সূর্যের দেখা মিলছে। কিন্তু তার কিরণ উত্তাপ ছড়াতে পারেনি শীতবস্ত্রহীন মানুষগুলোর শরীরে।

ঠাণ্ডার দাপট বাড়ায় নিম্ন আয়ের মানুষগুলো শীতবস্ত্রের জন্য মহানগরীর ফুটপাথের দোকানগুলোতে হুমড়ি খেয়ে পড়ছেন। সামর্থবানরা ভীড় জমাচ্ছেন বিভিন্ন অভিজাত মার্কেটে।

মহানগরীর শিরোইল পুরাতন বাসস্ট্যান্ড, রেলওয়ে মার্কেট, গণকপাড়া, সাহেব বাজার জিরোপয়েন্টসহ বিভিন্ন এলাকা ঘুরে অভিন্ন চিত্র লক্ষ্য করা গেছে বিজয় দিবসের এই সরকারি ছুটির দিনে।

মহানগরীর গণকপাড়া মোড়ে শীতের তীব্রতা কথা জানিয়ে ছোটবনগ্রাম এলাকার গৃহিনী মুস্তারি বেগম বলেন, ‘আর বলেবেন না ভাই, হঠাৎ করেই কামড়ে বসেছে শীত। গত বছর আলমারীতে তোলা ছেলে- মেয়ের শীতের কাপড় এ বছরই ছোট হয়ে গেছে। কম দামে শীতের কাপড় কিনতে ফুটপাথ ছাড়া দ্বিতীয় জায়গা নেই। তাই এখান থেকেই ছেলে-মেয়ে এবং বৃদ্ধ শ্বশুর-শাশুড়ির জন্য শীতবস্ত্র নিচ্ছি। ’

সুলতানাবাদ এলাকার কলেজছাত্রী মাহফুজা আনজুম ঝরা জানান, প্রতিবছর শীত পড়লেই ফুটপাতে বিদেশি কাপড়ের পসরা বসানো হয়। এখানে কম দামে ভালো কাপড় মেলে। তাই শীতের নিবারণের জন্য নিজের ও ছোট ভাই-বোনের জন্য গণকপাড়ায় থাকা পুরাতন কাপড়ের মার্কেটে এসেছেন তিনি।   
     
অপরদিকে শীতের প্রকোপ বাড়ায় ঠাণ্ডাজনিত রোগও বেড়েছে রাজশাহীতে। সকাল থেকে উত্তরবঙ্গের সবচেয়ে বড় সরকারি চিকিৎসা প্রতিষ্ঠান রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে বাড়ছে নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত নবজাতক শিশুর সংখ্যা। তীব্র শ্বাসকষ্ট নিয়ে ভর্তি হচ্ছেন অ্যাজমায় আক্রান্ত রোগীরাও।  

রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মেডিসিন বিশেষজ্ঞ সহযোগী অধ্যাপক আজিজুল হক বাংলানিউজকে জানান, হঠাৎ করে শীত বেড়ে যাওয়ায় সব বয়সের মানুষ ঠাণ্ডাজনিত বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন। হাসপাতালে ঠাণ্ডাজনিত রোগীর সংখ্যা তাই বাড়ছে। এসব রোগীর মধ্যে শিশু ও বয়স্কদের সংখ্যাই বেশি।

এছাড়া প্রতি বছরই আবহাওয়া পরিবর্তনের সময় সর্দি-জ্বর ও কাশি হয়। এবারও তা-ই হচ্ছে। এতে ভয়ের কিছু নেই। তবে সমস্যা বেশি হলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে বলে জানান তিনি।

বাংলাদেশ সময়: ১৯৩০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৬, ২০১৫
এসএস/এসএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।