ঢাকা: দেশের দশ লাখেরও বেশি পথশিশুর জন্য আসছে সরকারের বিশেষ প্রকল্প। এই প্রকল্পের আওতায় শিক্ষা সহায়তাসহ পুনর্বাসন করা হবে সব শিশুকে।
এ বিষয়ে মহিলা ও শিশু বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী মেহের আফরোজ চুমকি বাংলানিউজকে বলেন, সবার আগে জরুরি পথশিশুদের সমাজের মূলস্রোত ধারায় ফিরিয়ে আনা। সে কারণে দেশের সব পথশিশুদের জন্য বিশেষ প্রকল্পের সম্ভাব্যতা যাচাই চলছে। প্রথমে পাইলট প্রকল্প হাতে নেওয়া হবে। সেটি সফল হলে পরবর্তীতে পর্যায়ক্রমে দেশব্যাপী চলবে এ প্রকল্প।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, নারী উন্নয়নের কথা বলতে বলতে দেশের শিশুদের উন্নয়নের দাবি অনেটাই দুর্বল হয়ে পড়েছে। অথচ ৪৪ শতাংশ শিশুর মধ্যে অর্ধেকই কন্যাশিশু। যাদের উন্নয়ন না হলে নারী উন্নয়ন সম্ভব হবে না।
তাই শুধু নারী উন্নয়ন নয়, নারী উন্নয়ন ছাড়াও দেশের সব শিশুদের বিশেষ উন্নয়নে কাজ করতে চাই। শিশুদের অধিকার রক্ষায় বিভিন্ন কাজ সরকারিভাবে চলছে আর নতুন করে বিভিন্ন উদ্যোগও নেওয়া হবে, জানান চুমকি।
জাতিসংঘের শিশু সনদ ও আমাদের দেশের শিশু আইন ২০১৩ অনুযায়ী, ১৮ বছরের কম বয়সীদের শিশু বিবেচনা করা হয়। সরকারি তথ্য মতে, বাংলাদশে ৪৪ শতাংশ শিশু। তবে এর মধ্যে কম-বেশি ৪০ শতাংশ শিশু দারিদ্র্য সীমার নিচে বাস করে।
আন্তর্জাতিক উদারাময় গবেষণা কেন্দ্র বাংলাদেশ (আইসিডিডিআরবি) ও মোস্ট অ্যাট রিস্ক অ্যাডলোসেন্ট (এমএআরএ) এ দু’টি প্রতিষ্ঠানের ২০১২ সালের জরিপ অনুযায়ী, পথশিশুর সংখ্যা ১০ লাখের বেশি।
২০১১ সালের সরকারি জরিপ অনুযায়ী, বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক অবস্থার প্রেক্ষিতে শিশু শ্রমিকদের সংখ্যা প্রতিদিনই বাড়ছে।
দেশে মোট শিশু শ্রমিকের সংখ্যা প্রায় ৭৯ লাখ। এসব শিশু শ্রমিকের মধ্যে মাত্র ১৫ লাখ শিশু শ্রমিক শহরে এবং ৬৪ লাখ রয়েছে গ্রামাঞ্চলে। এই শিশু শ্রমিকদের মধ্যে ৪৫ লাখ শিশু শ্রমিক ঝুঁকিপূর্ণ কাজে যুক্ত। শিশু শ্রমের সঙ্গে জড়িত ৭৯ লাখ শিশু ছাড়াও ১০ লাখ পথশিশু রয়েছে দেশে। আর তারা সবাই শহরের জীবনে নানা প্রতিকূলতার মধ্যে মাদক আসক্তিসহ নানা অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে দিনের পর দিন।
দেশের গ্রামাঞ্চলে এবং শহরের শিশুদের উন্নয়নের জন্য নানা উদ্যোগ নিয়েছে বর্তমান সরকার। এর মধ্যে দেশের দুর্গম এলাকায় শিক্ষা উন্নয়নে ২১০৯টি প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষা কেন্দ্র গড়ে তোলা, শহরের পথশিশুদের জন্য শর্তভিত্তিক অর্থ দিয়ে পুনর্বাসনের চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। যদিও ফলাফল তেমন চোখে পড়ার মতো নয়।
মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, বারবার উদ্যোগ নিয়েও পথশিশুদের পুনর্বাসন করা সম্ভব হয়নি। ফলে দিনের পর দিন পথশিশু বাড়ছে। মাদক আসক্তি ছাড়াও নানা অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে ওরা। শিশুদের অপরাধ থেকে ফিরিয়ে আনা এবং সমাজে তাদের অবদান সৃষ্টিতেই সরকার পথশিশুদের জন্য বিশেষ প্রকল্প হাতে নিয়েছে।
এর আগে ২০১৩ সালের ২২ মে শিশুদের রাজনৈতিকভাবে ব্যবহার না করার জন্য সুপারিশ করে সমাজ কল্যাণ মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি। এরপর ২০১৩ সালের শিশু আইন করা হয়। যদিও আগে থেকেই শিশু নীতিমালায় স্পষ্ট বলা হয়েছে, শিশুদের অধিকার সংরক্ষণ করতে।
এসব বিষয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, আমরা শিশুদের অধিকার বাস্তবায়নে বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়েছি। পর্যায়ক্রমে বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। তারপরেও জনসচেতনতা বাড়াতে হবে। আমরা সেই অনুযায়ী কাজ করছি।
বাংলাদেশ সময়: ২১৪৫ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৯, ২০১৫
এসএমএ/এটি