ঢাকা: রাজধানীর বঙ্গবাজার থেকে মহানগর নাট্যমঞ্চ পর্যন্ত সড়কের দূরত্ব বড়জোর এক কিলোমিটার। কিন্তু এই সড়ক যদি পাড়ি দিতে চান তবে আপনাকে ভেবে চিন্তে পা ফেলতে হবে।
বঙ্গবাজার থেকে ফ্লাইওভারের নিচ দিয়ে ফুলবাড়িয়া বিআরটিসি কাউন্টারের সামনের সড়ক হয়ে যতক্ষণে মহানগর নাট্য মঞ্চের সামনের সড়ক পৌঁছানো যাবে, ততক্ষণে যেন জীবন শেষ! মেয়র হানিফ ফ্লাইওভারের নিচে বঙ্গবাজার মোড়ে পৌঁছাতেই চোখে পড়বে চারদিক থেকে আসা বিভিন্ন যানবহনের জটলা। সেখান থেকে ফ্লাইওভারের নিচ দিয়ে যতই সামনে এগুনো যাবে ততই নতুন নতুন প্রতিবন্ধকতা পাড়ি দিতে হবে।
বঙ্গবাজারের গার্মেন্ট সামগ্রীর দোকানিদের মালামাল লোড আনলোড হচ্ছে রাস্তার উপর। ঠেলাঠেলি করে এগুলো পার হতে না হতেই পিছন দিক থেকে গায়ের উপর উঠে যাওয়ার উপক্রম করবে বিভিন্ন রুট থেকে আসা বাসগুলো।
সড়কের ওপর জিনিসপত্র রাখা ও বিক্রির সম্পর্কে ফুটপাতের এক দোকানিকে জিজ্ঞাসা করা হলে জানান, ক্রেতা কিনে পরিবহনে তোলার জন্য রেখেছেন, কিছুক্ষণের মধ্যেই ভ্যানে তুলবেন।
আবার রাস্তার উপরই দাঁড়িয়ে আছে স্কাইলাইন, প্রভাতী বনশ্রী, সু-প্রভাত, ডি-লিংক, আজমেরী গ্লোরিসহ বিভিন্ন পরিবহনের বাস। এর কোন কোনটা আবার সড়কের উপরই মেরামত করা হচ্ছে। মধ্যেই চাপাচাপি করে কোন রকমে একটি বাস হয়তো পার হচ্ছে কিন্তু পথচারীদের পথ চলতে হচ্ছে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে।
ডি-লিংক পরিবহনের শ্রমিক মোঃ নুরু মিয়াকে সড়কে যানবাহন রাখার প্রসঙ্গে জিজ্ঞাসা করা হলে জানান, আশেপাশে বাস টার্মিনাল না থাকায় অল্প সময়ের জন্য দাঁড়িয়েছে কিছুক্ষণ পরে চলে যাবে।
আর একটু এগুতেই মনুষ্য বর্জ্যের গন্ধে দম বন্ধ হওয়ার জোগাড় হবে। খোদ ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের পেছনের দেয়ালকেই মলমূত্র ত্যাগের স্থান বানিয়ে ফেলা হয়েছে। কিন্তু এ বিষয়ে সিটি কর্পোরেশনের কোন বিকার নেই।
নাকে জ্বালাধরা উৎকট গন্ধ পার হয়ে বিআরটিসি কাউন্টারের সামনে পৌঁছাতেই দেখা যাবে বাসগুলোর রাস্তা দখল করে যাত্রী তোলার প্রতিযোগিতা। এ প্রতিযোগিতায় যোগ দিতে পিছন দিক থেকে আসা বাস সামনের বাসটিকে ধাক্কা দিতেও দ্বিধাবোধ করে না। পথচারীরা এর মধ্যেই দু বাসের ফাঁক গলে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে পার হচ্ছে সড়ক।
গুলিস্তান ফুলবাড়িয়া বিআরটিসি কাউন্টারের সামনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী দিদারুল ইসলামের সাথে কথা হয়। তিনি বলেন, দুইটা বাসের মাঝ দিয়ে পার হচ্ছিলাম পিছনের বাসটি এমনভাবে এগিয়ে আসে যে আরেকটু হলে মারা পড়তাম।
তবে সড়কের সবচেয়ে ভয়ানক পরিস্থিতি গুলিস্তান ফ্লাইওভারের নিচের অংশে। রাস্তার একপাশ পুরোপুরি বন্ধ করে বসেছে হকারদের জুতার দোকান। তাই বলে অন্য পাশ দিয়ে যে নির্বিঘ্নে যাতায়াত করা যাবে তা কিন্তু নয়। সড়কে অন্য পাশ দিয়ে বিপরীত দুই থেকে আসা যানবাহনই পার হচ্ছে প্রায়ই মুখোমুখি হয়ে। এর মধ্যে দিয়ে কোন রকম সড়ক পার হয়ে স্টেডিয়াম সড়কে পৌঁছান গেলেও আবার সেই ফুটপাত দখল, সড়কে এলোমেলা দাঁড়িয়ে থাকা বাস।
ফুটপাতের এক দোকানিকে সিটি কর্পোরেশনের উচ্ছেদ অভিযানের প্রসঙ্গে জিজ্ঞাসা করা হলে দক্ষিণের মেয়র সাঈদ খোকনের প্রতি ইঙ্গিত করে বলেন, ‘হ্যায় কী করব, হের বাপেই পারেনি। এমুন কত মেয়র আইলো গ্যালো। ’ তবে ঐ হকারের দম্ভোক্তির ব্যাখ্যা ছিল পরের জনের বক্তব্যে, ‘এইহানে কিছু করলে করবে পুলিশ, নয়ত সুমন ভাই। ’
ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা খান মোহাম্মদ বেলালকে ফুটপাত ও নগর ভবনের সীমানা প্রাচীর রক্ষার বিষয়ে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন, নগর ভবনের চারপাশেই হকারদের আনাগোনা অনেক বেশি, মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে সরিয়ে আসতে না আসতেই আবার বসে যাচ্ছে। মেয়র মহোদয় এদের পুনর্বাসনের মাধ্যমে স্থায়ী একটি সমাধানের চেষ্টা করছেন। দেখা যাক কতদূর পারা যায়।
বাংলাদেশ সময়: ০৬৩৫ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২০, ২০১৫
এইচআর/আরআই