ঢাকা: রাজধানীর শাহ আলী থানার মিরপুর-১ এলাকার একটি ভবনে জেএমবি’র আস্তানায় শ্বাসরুদ্ধকর ১৪ ঘণ্টার অভিযান সমাপ্ত ঘোষণা করেছে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী। অভিযানে জেএমবি’র তিন জঙ্গি ও সন্দেহজনক চারজনসহ মোট সাতজনকে আটক করা হয়েছে।
ধারণা করা হচ্ছে, আস্তানাটি নিষিদ্ধ ঘোষিত জামায়াতুল মুজাহেদিনের (জেএমবি) গ্রেনেড-বোমা তৈরির কারখানা ছিল এবং সাম্প্রতিককালের সবগুলো জঙ্গি হামলায় ব্যবহৃত গ্রেনেড-বোমা এখান থেকেই সরবরাহ করা হয়েছে বলে জানিয়েছে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী।
তবে আটকের আগে ছয়তলা ওই ভবনটি বোমা মেরে উড়িয়ে দেওয়ার হুমকি দেয় জঙ্গিরা। এমনকি দু’টি গ্রেনেডের বিস্ফোরণও ঘটান তারা।
বৃহস্পতিবার (২৪ ডিসেম্বর) ভোররাত থেকে মিরপুর-১ সেকশনে ব্লক এ’র নয় নম্বর বাসায় এ অভিযান চালানো হয়। র্যাব, পুলিশ ও গোয়েন্দা বিভাগের ৫টি দলের কয়েকশ’ সদস্য বিকেল চারটা পর্যন্ত এ অভিযান চালান।
আটককৃতদের মধ্যে তিনজন জেএমবি’র উচ্চ পর্যায়ের নেতা বলে জানিয়ে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী বলেছে, বাকি চারজনকে সন্দেহভাজন হিসেবে আটক করা হয়েছে। তারা হচ্ছেন- বিইউবিএটিএ’র চতুর্থ বর্ষের দুই ছাত্র নাহিদ ও মামুন, নাহিদের ভাগ্নে পিলখানা সদর দফতরের সীমান্ত স্কুল অ্যান্ড কলেজের একাদশ শ্রেণীর ছাত্র রাজ এবং একটি অনলাইনের এইচআর-মার্কেটিংয়ের কর্মী রাসেল।
প্রাথমিকভাবে অভিযান সমাপ্ত ঘোষণা করে ডিবি’র যুগ্ম কমিশনার মনিরুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, এখন আইনি প্রক্রিয়া ও জব্দ তালিকা তৈরির কাজ চলছে। আটককৃতদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।
বাড়িটি ঘুরে এসে মনিরুল ইসলাম জানান, আস্তানাটিতে লেদ মেশিনসহ গ্রেনেড-বোমা তৈরির সকল উপকরণ পাওয়া গেছে। সেখানে যে পরিমাণ বিস্ফোরক উদ্ধার করা হয়েছে, তা দিয়ে ২০০টি গ্রেনেড-বোমা তৈরি করা সম্ভব।
সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে তিনি জানান, হোসনি দালানসহ সাম্প্রতিককালের বোমা-গ্রেনেড হামলার ঘটনায় ব্যবহৃত গ্রেনেড এখান থেকেই সরবরাহ করা হয় বলে ধারণা করা হচ্ছে। সেসব বোমা-গ্রেনেডের উপকরণের সঙ্গে এখানকার বিস্ফোরকের হুবহু মিল রয়েছে।
অভিযানে নেতৃত্ব দেওয়া বোম্ব ডিসপোজাল ইউনিটের প্রধান এডিসি সরোয়ার হোসেন জানান, উদ্ধার করা ১৮টির মধ্যে ১৭টি গ্রেনেড ও একটি পাইপ বোমা। সেগুলো নিষ্ক্রিয় করা হয়েছে।
তিনি জানান, হোসনি দালানের ঘটনায় সম্পৃক্ত সন্দেহে বুধবার (২৩ ডিসেম্বর) একজনকে আটক করা হয়। তার কাছ থেকে তথ্য পেয়ে ভোররাত থেকে আমরা ওই বাসায় অভিযান চালাই।
‘আমরা জানতে পারি, ওই বাসায় গ্রেনেড তৈরি করা হয়। ভোর থেকে অভিযান চললেও প্রথমে আমরা বাসায় ঢুকতে পারিনি। এরপর সকাল ৭টার দিকে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সম্মিলিত চেষ্টায় আমরা প্রথমে তিনজনকে আটক করি। এরপর আটক করা হয় আরও চারজনকে। ’
তিনি বলেন, ওই বাসার ছয়তলায় পাশাপাশি দু’টি ফ্ল্যাট ভাড়া নিয়ে থাকতেন তারা। চারমাস আগে ছাত্র পরিচয়ে তারা ফ্ল্যাট দু’টি ভাড়া নেন। একটি ফ্ল্যাটে তিনজন ও অন্য ফ্ল্যাটে চারজন থাকতেন। এখানেই বোমা বানানোর কার্যক্রম চলতো।
অভিযানে দুই ফ্ল্যাটের বাথরুম, রান্নাঘর, ট্রাঙ্কসহ বিভিন্ন স্থান থেকে ১৬টি গ্রেনেডভর্তি একটি বস্তা, ফেলে রাখা একটি গ্রেনেড, একটি পাইপ বোমা ও বিপুল পরিমাণ বিস্ফোরক উদ্ধার করা হয়েছে। গ্রেনেড-বোমাগুলো নিষ্ক্রিয় করা হয়েছে। অভিযানে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকে ১০ রাউন্ড রাবার বুলেট ও ২টি টিয়ারশেল ব্যবহার করা হয়েছে বলেও তিনি জানান।
ডিবি’র যুগ্ম কমিশনার মনিরুল ইসলাম বলেন, আটককৃদের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডিবি কার্যালয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। বর্তমানে জেএমবি’র দু’টি গ্রুপ কাজ করছে। আটককৃতরা শিবিরের সাবেক ক্যাডার ও সায়েদুর রহমানের দলটি ছাড়া অন্য যেটি কাজ করছে এর সদস্য।
আটককৃতদের কাছ থেকে একাধিক পরিচয়পত্র পাওয়া গেছে বলেও তিনি জানান।
তিনি আরও বলেন, ওই বাসার অন্য ফ্ল্যাটেও কোনো জঙ্গি সম্পৃক্ততা রয়েছে কি-না তা খতিয়ে দেখতে দিনভর অভিযান চালানো হয়। নাশকতার আশঙ্কায় অভিযান চলাকালে বাসাটির আশে-পাশের স্থানীয়দের সরিয়ে নেওয়া হয়। অভিযানের শুরুতে বাসায় আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী ঢোকার চেষ্টা করলে বোমা মেরে বাসা উড়িয়ে দেওয়ার হুমকি দেয় জঙ্গিরা। এক পর্যায়ে দু’টি গ্রেনেডের বিস্ফোরণও ঘটান তারা। তবে এতে হতাহতের কোনো ঘটনা ঘটেনি।
বাংলাদেশ সময়: ১৬৩৩ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৪, ২০১৫
এনএ/এসজেএ/এএসআর
** সাত জঙ্গি আটক, বিপুল গ্রেনেড-বিস্ফোরক উদ্ধার
** বোমা মেরে উড়িয়ে দেওয়ার হুমকি দিচ্ছে জঙ্গিরা
**রাজধানীর শাহ আলীতে জেএমবি সন্দেহে আটক ২