ঢাকা: বাংলাদেশে বিচার ব্যবস্থার প্রধান সমস্যা বিচারে বিলম্ব ও মামলা জট কমাতে বিচারকদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ।
একই সঙ্গে দায়িত্বপালনকালে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় বিচারকদের সর্বোচ্চ আন্তরিক হতে বলেন তিনি।
শনিবার (২৬ ডিসেম্বর) রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আর্ন্তজাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে জাতীয় বিচার বিভাগীয় সম্মেলন-২০১৫ এর উদ্বোধনী বক্তব্যে তিনি এ আহ্বান জানান।
ন্যায়বিচার প্রাপ্তি মানুষের মৌলিক অধিকার উল্লেখ করে বিচারকদের উদ্দেশে রাষ্ট্রপতি বলেন, দায়িত্বপালনে আপনারা নিরপেক্ষ থেকে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় সর্বোচ্চ আন্তরিক হবেন, জনগণ তা প্রত্যাশা করে।
ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার জন্য সব ধরনের ভীতি ও প্রীতির ঊর্ধ্বে থেকে সর্বোচ্চ নিষ্ঠা ও সততা বজায় রেখে বিচারকদের পক্ষপাতহীনভাবে বিচারকার্য পরিচালনা করারও আহ্বান জানান রাষ্ট্রপতি।
তিনি বলেন, বিচারকরা জাতির বিবেক, আপনাদের প্রজ্ঞা, সংবিধান, আইনের প্রতি অবিচল আস্থা, দেশ ও জনগণের প্রতি দায়বদ্ধতা ন্যায়বিচার প্রাপ্তির ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
বিচার বিলম্ব ও মামলা জট কমানোর আহ্বান জানিয়ে রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘জাস্টিস ডিলেইড, জাস্টিস ডিনাইড’ এই প্রবাদটি আমাদের বিচার ব্যবস্থায় প্রচলিত থাকুক, আমরা তা চাই না। ’
রায় বা আদেশ প্রদানের ক্ষেত্রে অহেতুক বিলম্ব কোনোভাবে গ্রহণযোগ্য নয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, মানুষের শেষ ভরসার স্থল আদালত। ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার জন্য যুক্তিসঙ্গত সময়ের মধ্যে মামলার নিষ্পত্তি অপরিহার্য।
একটি আবেদনের শুনানি সমাপ্তের পর বা মোকাদ্দমার যুক্তিতর্ক শুনানির পর আদেশ লাভে যাতে বিলম্ব না হয়, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। এতে বিচার বিভাগের প্রতি যেমন জনগণের আস্থা বৃদ্ধি পাবে, তেমনি আপনারাও বিবেকের নিকট স্বচ্ছ থাকবেন- যোগ করেন রাষ্ট্রপতি।
আবদুল হামিদ বলেন, আমাদের বিচার ব্যবস্থার অন্যতম সমস্যা বিচারের বিলম্ব ও মামলা জট। এই বিলম্বের কারণ বহুবিধ। বিচার কাজে কাঙ্ক্ষিত গতি আনতে পর্যাপ্ত বিচার কক্ষ, বিচারকদের শূন্য পদে নিয়োগ, বিচারক এবং মোকদ্দমার সংখ্যার যুক্তিসঙ্গত ভারসাম্য রক্ষা করা আবশ্যক।
সহজ ও স্বল্প ব্যয়ে বিচার নিশ্চিত করতে বিচারক ও আইনজীবীদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে তিনি বলেন, মামলা পরিচালনায় আইনজীবীদের ভূমিকা সবচেয়ে বেশি। তাই অহেতুক বিলম্ব বা অত্যাধিক আর্থিক চাপের কারণে বিচার কার্যক্রম যাতে বাধাগ্রস্থ না হয় এবং বিচার প্রার্থীরা যাতে ন্যায় বিচার পায় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।
বিচার ব্যবস্থার উন্নয়নে সরকারের পাশাপাশি বিচারক ও আইনজীবীদের অবদান রাখার আহ্বান জানিয়ে রাষ্ট্রপতি বলেন, ন্যায়বিচার প্রাপ্তি মানুষের মৌলিক অধিকার। আমাদের দেশে দরিদ্রতা, অশিক্ষা ও অসচেতনতার কারণে অনেক সময় মানুষ এই মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত হয়।
ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় একটি দক্ষ ও শক্তিশালী আইনি কাঠামো, আদালত ও প্রশাসন ব্যবস্থার গুরুত্ব তুলে ধরে তিনি বলেন, গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থা, আর্থ সামাজিক উন্নতির পূর্ব শর্ত হচ্ছে দেশে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করা।
লর্ড ব্রাইনের উদ্ধৃতি দিয়ে রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘সরকারের উৎকর্ষ পরিমাপের জন্য বিচার ব্যবস্থার দক্ষতা চেয়ে উৎকৃষ্টতর কোনো মাপকাঠি নেই। অধ্যাপক গ্লাসকি বলেন, রাষ্ট্র কীভাবে বিচার কাজ সম্পন্ন করে তা জানতে পারলে রাষ্ট্রের নৈতিক চরিত্রের স্বরূপ অনেকটা সঠিকভাবে অনুধাবন করা যায়। ’
প্রধান বিচারপতির প্রশংসা করে রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ বলেন, বিচার বিভাগকে ডিজিটালাইজ ও বিচার বিভাগের সামগ্রিক উন্নতির লক্ষ্যে প্রধান বিচারপতির গৃহীত সিদ্ধান্তগুলো প্রশংসার দাবি রাখে।
তিনি বলেন, প্রধান বিচারপতির গতিশীল নেতৃত্বে সুপ্রিম কোর্টসহ অধস্তন আদালতে বিচার নিষ্পতির ক্রমাগত বৃদ্ধি পাওয়ার ফলে বিচার বিভাগের প্রতি বিচার প্রার্থী জনগণের আস্থা বৃদ্ধি পাচ্ছে।
অনুষ্ঠানে ২০০৫ সালের ১৪ নভেম্বর বোমা হামলায় নিহত ঝালকাঠি জেলা জজ ও দায়রা আদালতের সিনিয়র সহকারী জজ জগন্নাথ পাঁড়ে এবং মো. সোহেল আহমেদের পরিবারকে সুপ্রিম কোর্টের পক্ষ থেকে দু্ই বিচারকের স্ত্রীর হাতে দুই লাখ টাকার পারিবারিক সঞ্চয়পত্র তুলে দেন রাষ্ট্রপতি।
প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত, আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক, সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল সৈয়দ আমিনুল ইসলাম, প্রশাসনিক আপিল ট্রাইবুনালের সদস্য জ্যেষ্ঠ জেলা জজ মো. গোলাম মর্তুজা মজুমদার।
বাংলাদেশ সময়: ১২৩৫ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৬, ২০১৫/ আপডেট: ১৫০৫ ঘণ্টা
এমইউএম/টিআই
** বিচার বিভাগ জাতীয় উন্নয়নের মাইলফলক