কক্সবাজার: আগামী ২২ মার্চ অনুষ্ঠিতব্য ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে নৌকা প্রতীকে একক প্রার্থীর মনোনয়ন পেতে বিএনপি-জামায়াত সংশ্লিষ্ট নেতাকর্মীদের জোর চেষ্টা চালানোর অভিযোগ পাওয়া গেছে।
প্রথম দফায় ঘোষিত তফসিলে অনুযায়ী ২২ মার্চ কক্সবাজারের ৩টি উপজেলার ১৯ ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।
আর এ কারণেই নৌকার টিকেট পেতে কক্সবাজারে এখন চলছে বিএনপি-জামায়াত সংশ্লিষ্ট নেতাকর্মীদের দৌঁড়ঝাপ। এর ফলে আওয়ামী লীগের ত্যাগী নেতাকর্মীদের মাঝে ক্ষোভের সঞ্চার হয়েছে।
দলীয় সূত্র জানায়, নির্বাচনী বোর্ডের মাধ্যমে একক প্রার্থী নির্ধারণ করে তার নাম ১৭ ফেব্রুয়ারির মধ্যে কেন্দ্রে পাঠানোর নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। জেলা, উপজেলা, পৌরসভা ও ইউনিয়ন পর্যায়ের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক সহ ছয়জনের মনোনয়ন বোর্ড একক প্রার্থী নির্ধারণ করতে কাজ করছেন।
ইতিমধ্যে সংশ্লিষ্ট নির্বাচনী এলাকার সাংগঠনিক ইউনিটের বর্ধিত সভা করে একক প্রার্থীদের নাম জেলা নেতাদের কাছে সুপারিশ করে পাঠানো হয়েছে। কিন্তু এর বাইরেও দলীয় টিকিট (নৌকা প্রতীক) পেতে অনেকে জেলার নেতাদের কাছে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র জমা দিয়েছেন।
বুধবার (১৭ ফেব্রুয়ারি) দুপুর পর্যন্ত দলীয় একক প্রার্থী মনোনয়ন করতে পারেনি নির্বাচনী মনোনয়ন বোর্ড।
এদিকে নির্বাচনী মনোনয়ন বোর্ডে আবেদনকারীদের মধ্যে অনেকের বিরুদ্ধে বিএনপি-জামায়াতের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত থাকার অভিযোগ রয়েছে।
তৃণমূল আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের অভিযোগ, ২০০৮ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মহেশখালী-কুতুবদিয়া আসনের জামায়াত প্রার্থী হামিদুর রহমান আজাদের পক্ষে ঘাম ঝরানো প্রচারণা চালিয়েছেন এমন এক ব্যক্তিও আওয়ামী লীগের প্রার্থী হতে চান।
এদিকে কুতুবদিয়া উপজেলা উত্তর ধুরুং ইউনিয়নে নৌকার টিকেটে নির্বাচনে লড়তে চান বর্তমান চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সিরাজদ্দৌল্লাহ। যার ভাই ও নিকটাত্মীয়স্বজন বিএনপির-জামায়াতের রাজনীতির সঙ্গে সক্রিয়ভাবে জড়িত। বছর দেড়েক আগে থেকে সিরাজদ্দৌল্লাহ পরিকল্পিতভাবে আওয়ামী লীগের মিছিল-মিটিংয়ে যোগ দিতে শুরু করেন। একসময়ের জামায়াতের দূর্ধর্ষ এ ক্যাডার এবারের ইউপি নির্বাচনে নৌকা প্রতীক নিয়ে লড়তে জোর তদবির শুরু করেছেন।
এ ব্যাপারে জামায়াতের সাবেক এ নেতার মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি।
অন্যদিকে যুদ্ধাপরাধী গোলাম আজমের সাবেক দেহরক্ষী আকতার হামিদের ভগ্নিপতি কুতুবদিয়ার লেমশিখালী ইউনিয়নের আকতার হোসেন। একসময় তিনিও জামায়াত ইসলামীর রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন। তবে গত কয়েক মাস আগে অনুষ্ঠিত উপজেলা আ’লীগের সম্মেলনে তিনি কাউন্সিলর ছিলেন। কিন্তু তাকে বাদ দিতে নির্দেশনা দিয়েছিল কেন্দ্রীয় আ’লীগ। তারপরও উপজেলা আ’লীগ থেকে জেলা নেতাদের কাছে তার নামটি প্রস্তাব করা হয়েছে। তিনিও নির্বাচনে নৌকার টিকেট পেতে জেলার নেতাদের কাছে জোর তদবির শুরু করেছেন।
সিরাজদ্দৌল্লাহ একসময় জামায়াতের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত থাকার বিষয়টি স্বীকার করেছেন কুতুবদিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ নুরুচ্ছাফা। তবে নৌকার মনোনয়ন টিকেটের আরেক প্রার্থী আকতার হোসেনের ব্যাপারে কোনো মন্তব্য করতে রাজী হননি তিনি।
মোহাম্মদ নুরুচ্ছাফা বাংলানিউজকে বলেন, জামায়াত-বিএনপির এসব নেতাদের মনোনয়ন না দিতে জেলার নেতাদের কাছে সুপারিশ করেছি।
এছাড়া মহেশখালী উপজেলার ছোট মহেশখালী ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে এক বিএনপি নেতা নৌকার টিকিট পেতে দৌড়ঝাঁপ শুরু করেছেন বলে স্থানীয়দের অভিযোগ রয়েছে। একই ইউনিয়নে মনোনয়ন চান সদ্য জামায়াত থেকে আওয়ামী লীগে যোগ দেওয়া এক নেতাও। এছাড়া কালারমারছড়া ইউনিয়নে আ’লীগের মনোনয়ন চেয়েছেন এক বিএনপি নেতার স্ত্রী।
স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ছোট মহেশখালী ইউনিয়নে ফরিদুল আলম ও আব্দুস সামাদ আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চেয়েছেন। এদের প্রথমজন জামায়াত নেতা। অপরজন বিএনপি নেতা হলেও তার পিতা ছিলেন রাজাকার।
এ বিষয়ে ছোট মহেশখালী ইউনিয়নের আওয়ামী লীগের সদস্য লিয়াকত আলী বাংলানিউজকে জানান, ফরিদুল ইসলাম কয়েক মাস আগে জামায়াত থেকে আ’লীগে যোগ দিয়েছেন। আর আব্দুস সামাদ ইউনিয়ন বিএনপি নেতা। অথচ তারা নৌকার টিকেট চান।
এ ধরনের ‘সুযোগ সন্ধানীদের’ আ’লীগের মনোনয়ন না দেওয়া দাবি জানান তিনি।
এছাড়া কালারমারছড়া ইউপি নির্বাচনে আ’লীগের মনোনয়ন চেয়েছেন আওয়ামী লীগ নেতা ওসমান, যুবলীগ নেতা মুজিবুল্লাহ বাদলের হত্যা মামলার আসামি নুরুল হকের স্ত্রী শাকিলা বেগম। নুরুল হক ওই ইউনিয়নের বিএনপি নেতা।
মহেশখালী উপজেলা আ’লীগ সভাপতি আনোয়ার পাশা বাংলানিউজকে জানান, বিএনপি-জামায়াত নেতাদের আ’লীগের মনোনয়ন চাওয়ার খবর শুনেছি। এ ব্যাপারে আমরা সর্তক আছি।
কক্সবাজার জেলা আ’লীগ সভাপতি সিরাজুল মোস্তফা বাংলানিউজকে জানান, অনেকে মনোনয়ন প্রত্যাশা করেছেন। এখান থেকে বঙ্গবন্ধুর প্রকৃত সৈনিক বাছাই করে যোগ্য ব্যক্তিকেই মনোনয়ন দেওয়ার জন্য কেন্দ্রকে সুপারিশ করা হবে।
কক্সবাজার জেলা আ’লীগের সাধারণ সম্পাদক মুজিবুর রহমান বাংলানিউজকে জানান, কোনো মনোনয়ন প্রত্যাশীর সঙ্গে জামায়াত-বিএনপি’র সম্পৃক্ততার প্রমাণ পাওয়া গেলে তাদের মনোনয়নের জন্য নির্বাচিত করা হবে না।
বাংলাদেশ সময়: ১৫৫০ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৭, ২০১৬
টিটি/আইএসএ/টিসি