গাজীপুর: গাজীপুরের বিভিন্ন এলাকায় হাজার হাজার পরিবারের সংসার চলছে ইজিবাইক চালিয়ে। পরিবেশ বান্ধব, শব্দ নেই, ভাড়া কম, সময় অপচয় হয় না, চালানো সহজ, দ্রুত চলে ও ঝুঁকি নেই।
গত দুই বছর আগেও ইজিবাইকের চলাচল তেমন দেখা যায়নি। বর্তমানে এই ইজিবাইক মানুষের কাছে জনপ্রিয়তা পাওয়ায় গাজীপুরের বিভিন্ন এলাকায় মোড়ে মোড়ে অলিগলি ও সড়কে চলতে দেখা যায়।
ভাড়া কম হওয়ায় রিকশার পরিবর্তে অনেকেই এ যান (ইজিবাইক) কিনছে নগদ এবং কিস্তিতে। ছয়জন যাত্রী নিয়ে দ্রুত চলতে পারে এ যান। জ্বালানি খরচও কম। প্রতিদিন ১৫০ টাকা দিয়ে ব্যাটারি পুরো চার্জ করে নিলে চলে সারাদিন।
প্রতিটি ইজিবাইকে দিনে এক হাজার থেকে দেড় হাজার টাকা আয় করা সম্ভব। সব মিলিয়ে খরচ হয় ২০০ থেকে ৩০০ টাকা। এ আয় দিয়ে স্বাচ্ছন্দে চলতে পারে একটি সংসার। চালানো সহজ হওয়ায় কিশোর, যুবক ও বৃদ্ধরা চালাতে পারে ইজিবাইক। তবে কিশোর ও যুবক বয়সীদের বেশী চালাতে দেখা যায়।
ইজিবাইকের যাত্রী আরিফুল ইসলাম ও আনিস রহমান বাংলানিউজকে জানান, সড়কে অনেক ধরনের যানবাহন থাকলেও ইজিবাইকে) চলাচলের কিছু কারণ আছে। যেমন বাস অথবা লেগুনায় চলাচল করতে গেলে যাত্রী উঠাতে ২০ থেকে ৩০ মিনিট সময় লাগে এবং যাত্রী উঠানো সর্ম্পূণ হলে পরে গাড়ি ছাড়ে। অযথা গাড়িতে বসে সময় নষ্ট করতে হয়। কিন্তু ইজিবাইক মাত্র ৪ থেকে ৫ জন যাত্রী নিয়ে রওনা হয়। এতে সর্বোচ্চ ৫ থেকে ৭ মিনিট সময় ব্যয় হয়। দ্রুত চলে ভাড়াও কম। তাছাড়া শব্দ নেই, ঝুঁকিও কম।
ইজিবাইক চালক মো. বোরহান উদ্দিন বাংলানিউজকে জানান, গাজীপুর সিটি করপোরেশনের কোনাবাড়ী- কাশিমপুর সড়কে নিজের মালিকানায় একটি ইজিবাইক চালিয়ে সংসার চালান তিনি। ৩ বছর আগে স্থানীয় সারদাগঞ্জ এলাকায় ম্যাকসন গ্রুপের কোয়েবাল গার্মেন্টসে চাকরি করতেন এবং পরিবার নিয়ে ওই এলাকায় বসবাস করতেন বোরহান উদ্দিন। হঠাৎ গার্মেন্টস বন্ধ হয়ে যাওয়ায় বেকার হয়ে পড়েন তিনি। পরে অনেক খোঁজাখুঁজির পর চাকরি না পেয়ে নগদ ৪০ হাজার টাকা দিয়ে কিস্তিতে ১ লাখ ৫০ হাজার টাকা দারে একটি ইজিবাইক কিনে সংসারের হাল ধরেন। প্রতিদিন খরচ বাদ দিয়ে ইজিবাইক চালিয়ে প্রায় এক হাজার টাকা আয় করেন তিনি। এ দিয়েই টুকটাক চলছে তার সংসার।
আরেকজন ইজিবাইক চালক মো. আশরাফ আলী জানান, সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর থানার চকপাইখান্দ গ্রামে নিজ বাড়িতে থেকে কৃষি কাজ করতেন তিনি। যমুনা নদী ভাঙ্গনে বিলিন হয়ে যায় তার বাড়ি ও কৃষি জমি। পরে চলে যায় গাজীপুর সিটি করপোরেশনের কোনাবাড়ী জরুন এলাকায়। সেখানে বাড়ি ভাড়া থেকে চাকরি নেন তৈরী পোশাক কারখানায়। চাকরি করে সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হয় তাকে।
এদিকে বয়স ৫০ এর বেশি হওয়ায় চাকরি ছেড়ে দিতে হয় তাকে। এক পর্যায়ে বেকার হয়ে পড়লে সংসারে অভাব অনটন দেখা দেয় এবং ঋণগ্রস্ত হয়ে পড়ে তিনি। পরে প্রায় এক বছর আগে ঋণ করে একটি ইজিবাইক কেনেন তিনি। নিজেই ইজিবাইক চালাতে শুরু করেন গাজীপুরের কাশিমপুর এলাকায়। প্রতিদিন ইজিবাইক চালিয়ে ৮শ’ থেকে এক হাজার টাকা উপার্জন করতে পারেন তিনি। তার সংসার চালাতে ইজিবাইক-ই এখন এক মাত্র সম্বল।
গাজীপুরের কাশিমপুর জিতারমোড় এলাকায় ইজিবাইকের মেক্যানিকেল মিস্ত্রি মোস্তফা আলম বাংলানিউজকে বলেন, প্রতিদিন ইজিবাইক মেরামত করে ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা আয় হয়। এদিয়ে সংসার কোন মতো চলে। একটি ইজিবাইক ভাল ভাবে মেরামত করলে দেড় থেকে দুইশ’ টাকা পাওয়া যায়। প্রতিদিন দুই তিনটি মেরামত করতে পারি। তবে ইজিবাইক তেমন বিকল হয় না।
ইজিবাইক চালক মো. হায়দার আলী বলেন, ইজিবাইক চালাতে স্থানীয় নেতাকর্মী ও পুলিশকে প্রতিদিন সড়কে চাঁদা দিতে হয় প্রায় ১০০ টাকা। তাছাড়া সিটি করপোরেশন এলাকায় হলেও কোনাবাড়ী-কাশিমপুর সড়ক প্রায় ৪ কিলোমিটার ভাঙ্গা। তাছাড়া কাশিমপুর এলাকায় প্রায় সব সড়কের কার্পেটিং উঠে ভাঙ্গাচুড়া ও খানাখন্দ সৃষ্টি হওয়ায় ইজিবাইকসহ সকল ধরনের যানবাহন চলাচলে ভোগান্তি হচ্ছে চালক ও যাত্রীদের।
মো. হায়দার আলী গাজীপুর সিটি করপোরেশনের জরুন এলাকার বাদল খানের বাড়িতে ভাড়া থেকে ইজিবাইক চালান। তার স্ত্রী পোশাক কারখানায় চাকরি করেন। তিনি শেরপুরের বগুড়া থানার বাসিন্দা শামীম শেখের ছেলে।
বাংলাদেশ সময়: ১১৪৭ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৮, ২০১৬
জেডএম