ঢাকা: জাতীয় সংসদের সদস্যরা বেতন নেন না, সম্মানী ভাতা নেন। সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নতুন বেতন স্কেল ঘোষণার পর তাদের সম্মানীও বাড়ানো হচ্ছে।
গত ২৪ জানুয়ারি জাতীয় সংসদে দ্য মেম্বারস অব পার্লামেন্ট (স্যালারিস অ্যান্ড অ্যালাওয়েন্স) অর্ডার, ১৯৭৩ নামে রাষ্ট্রপতির আদেশ জারি সংক্রান্ত একটি বিল উত্থাপন করা হয়। সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নতুন বেতন স্কেল ঘোষণার পর এমপিদের সম্মানী বাড়ানোর প্রস্তাব করে ওই বিল আনা হয়।
প্রস্তাবিত বিলে এমপিদের ভাতার তালিকায় যেভাবে বিন্যাস করা আছে সে অনুযায়ী সম্মানী ভাতা ৫৫ হাজার টাকা, এরসঙ্গে কনস্টিটিউন্সি অ্যালাওয়েন্স (আর্টিকেল-৩/এ) ১২ হাজার ৫০০, নিয়ামক ভাতা ৫ হাজার, ট্রান্সপোর্ট অ্যালাওয়েন্স ৭০ হাজার, অফিস ব্যয় বাবদ ৯ হাজার, লন্ড্রি অ্যালাওয়েন্স ১৫০০ টাকা, বিবিধ খরচ ভাতা ৬ হাজার, ভ্রমণ ভাতা প্রতি কিলোমিটার ১০ টাকা করে, দৈনিক ভাতা (স্বাভাবিক) ৭৫০ টাকা, যাতায়াত ভাতা (স্বাভাবিক) ৭৫ টাকা, ডেইলি অ্যালাওয়েন্স (অধিবেশনকালীন) ৮০০ টাকা, যাতায়াত ভাতা (অধিবেশনকালীন) ২০০ টাকা, বিদেশ ভ্রমণ ভাতা (বাৎসরিক) ১ লাখ ২০ হাজার টাকা, চিকিৎসা ভাতা ৭০০ টাকা ও টেলিফোন ভাতা ৭ হাজার ৮০০ টাকা।
সব মিলিয়ে তারা ভাতা পাচ্ছেন ২ লাখ ৮৯ হাজার ৩২৫ টাকা। এর বাইরে ঐচ্ছিক অনুদান ৫ লাখ (এককালীন) এবং বিমা বাবদ পাচ্ছেন ১০ লাখ টাকা (এককালীন)।
তবে, নতুন সম্মানী ভাতা বৃদ্ধির এ প্রস্তাবে এমপিরা নাখোশ। তারা বেঁকে বসেছেন আমলাদের বেতন প্রসঙ্গ তুলে। নতুন বেতন স্কেল অনুযায়ী একজন সচিবের বেতন ধরা হয়েছে ৭৮ হাজার। আর এমপিদের মূল সম্মানী ভাতা মাত্র ৫৫ হাজার। তাই সম্মানী ভাতা নিয়ে অনেকেই দ্বিমত প্রকাশ করছেন।
এমপিদের প্রস্তাবিত ভাতার একটি অনুলিপি বাংলানিউজের কাছে রয়েছে।
এরমধ্যে গত ২৭ জানুয়ারি আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটিতে বিলটি পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য আলোচনা হয়। সেই আলোচনায় অংশ নেওয়া জাসদের কার্যকরী সভাপতি মঈনউদ্দিন খান বাদল সংসদীয় কমিটির সভাপতির কাছে একটি চিঠি দিয়ে বলেন, এমপিদের সম্মানী ভাতা বাড়ানোর প্রস্তাব সাধুবাদযোগ্য। কিন্তু বিষয়টি নিয়ে খুশি হতে পারছি না, এজন্য যে, আমলারা এমপিদের চেয়ে বেশি বেতন পান।
সে আলোচনা শেষে কমিটির সভাপতি সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত মিডিয়া সেন্টারে বলেন, এমপিদের সম্মানী ভাতা বৃদ্ধি নিয়ে একটু জটিলতা দেখা দিয়েছে। বাদল সাহেব প্রস্তাব করেছেন, আমরা এমপিরা বেতন নেই না, সম্মানী নেই, ঠিক আছে। কিন্তু মর্যাদাক্রম অনুযায়ী আমরা তো আমলাদের উপরে। সেই অরেন্ট অব প্রেসিডেন্ট তো মেনে চলতে হবে।
সেদিন কমিটির বৈঠকে বিষয়টি নিষ্পত্তি না হওয়ায় অধিকতর যাচাইয়ের লক্ষ্যে পরবর্তী বৃহস্পতিবারের (১৮ ফেব্রুয়ারি) বৈঠকের জন্য রাখা হয়।
বৃহস্পতিবারের এ বৈঠকে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিতকে উপস্থিত থাকার কথা বলেন সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত। তবে বৃহস্পতিবারের বৈঠকে সভাপতিও উপস্থিত ছিলেন না, আসেননি অর্থমন্ত্রীও।
তাই বিলটি আরও পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও সম্মানী ভাতা নির্ধারণের জন্য উচ্চ পর্যায়ের একটি কমিটিতে অধিকতর আলোচনার সুপারিশ করা হয়েছে।
এ বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন কমিটির সদস্য আবদুল মতিন খসরু, সভাপতির অনুপস্থিতিতে তিনি বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন। এছাড়া অংশ নেন কমিটির সদস্য আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, অ্যাডভোকেট সাহারা খাতুন, মো. শামসুল হক টুকু ও তালুকদার মো. ইউনুস। বৈঠকে বিশেষ আমন্ত্রণে ডেপুটি স্পিকার মো. ফজলে রাব্বী মিয়া ও চিফ হুইপ আ স ম ফিরোজ উপস্থিত ছিলেন ।
বাংলাদেশ সময়: ২১১৫ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি, ১৮, ২০১৬
এসএম/এইচএ/