ঢাকা, রবিবার, ৫ মাঘ ১৪৩১, ১৯ জানুয়ারি ২০২৫, ১৮ রজব ১৪৪৬

জাতীয়

রামেকে কাকের মৃত্যু

ভাইরাসের খোঁজে আইইডিসিআর’র কমিটি

শরীফ সুমন, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১৩৬ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৮, ২০১৬
ভাইরাসের খোঁজে আইইডিসিআর’র কমিটি ছবি : বাংলানিউজটোয়েটিফোর.কম

রাজশাহী: কাকের মৃত্যুর ঘটনায় বার্ড-ফ্লু ভাইরাসের উৎসের খোঁজে প্রণিসম্পদ অধিদফতরের রোগতত্ত্ব-রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) ১২ সদস্যের তদন্ত কমিটি এখন রাজশাহীতে।

বৃহস্পতিবার (১৮ ফেব্রুয়ারি) রাজশাহী পৌঁছার পর তারা বিভিন্ন স্থান পরিদর্শন করেন।



এ সময় তারা নমুনা সংগ্রহ করেছেন। এছাড়া রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ, রাজশাহী সিভিল সার্জন ও রাজশাহী সিটি করপোরেশনের মেয়রসহ সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান প্রধানদের সঙ্গে বৈঠক করেন তারা। তারা আরও বেশ কয়েক দিন অবস্থান করবেন বলে জানা গেছে।  

রামেক চত্বরে কাকের গণ মৃত্যুর কারণ বার্ড-ফ্লু বলে সম্প্রতি নিশ্চিত করে ওয়ার্ল্ড অরগানাইজেশন ফর এনিমেল হেলথ (ওআইই) নামের একটি আন্তর্জাতিক সংস্থা। বিষয়টি জানিয়ে ওয়েবসাইটে তথ্যও প্রকাশ করে তারা। এর আগে রাজশাহী প্রাণিসম্পদ অধিদফতর কর্মকর্তারা মৃত কাকের নমুনা সংগ্রহ করে ন্যাশনাল রেফারেন্স ল্যাবরেটরি ফর এভিয়েন ইনফ্লুয়েঞ্জা কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠায়।

তাদের গবেষণাগারে পরীক্ষার পর একই বিষয় ধরা পড়ে। পরে তাদের এই পরীক্ষার প্রতিবেদনের সারমর্ম প্রাণিস্বাস্থ্য বিষয়ক আন্তর্জাতিক ওই প্রতিষ্ঠানটি প্রকাশ করে।

বার্ড-ফ্লু ভাইরাস সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়ার পর এ রোগের উৎস অনুসন্ধানে ১২ সদস্যের উচ্চ পর্যায়ের কমিটি করে স্বাস্থ্য ও প্রাণিসম্পদ অধিদফতর। বৃহস্পতিবার থেকে তারা সরেজমিন কাজ শুরু করেছেন।

তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত কিছুই বলা যাবে না বলে বাংলানিউজকে জানিয়েছেন, আইইডিসিআর’র ওই কমিটিতে থাকা ডা. ওয়ালিদ। তবে শিগগিরই তারা চূড়ান্ত প্রতিবেদন দিবেন। পরে আইইডিসিআর এর পরিচালক এবং স্বাস্থ্য মহাপরিচালক এ ব্যাপারে বিস্তারিত বলবেন বলে জানান তিনি।  

রাজশাহী জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা নিজাম উদ্দিন বাংলানিউজকে জানান, আইইডিসিআর’র তদন্ত কমিটি আজ রাজশাহীতে পৌঁছার পর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল চত্বর পরিদর্শন করেছেন। নমুনা সংগ্রহ করেছেন। কর্তৃপক্ষের সঙ্গে মতবিনিময়ও করেছেন। আগামীকাল শুক্রবার তারা এই কয়েক দিনে হাসপাতালের ইনডোর থাকা এবং আউটডোরে আসা রোগীদের সঙ্গে কথা বলবেন, প্রয়োজনে নমুনা সংগ্রহ করবেন। আরও বেশ কয়েক দিন ধরে বিভিন্ন স্থানে যাবেন তদন্ত কমিটির সদস্যরা।

প্রথম দিনে হাসপাতাল ছাড়াও তারা মহানগরীর বিভিন্ন বাজারে মুরগি জবাই, ড্রেসিং এবং ডাম্পিং স্পট, রাজশাহী সিটিহাট সংলগ্ন ময়লা-আবর্জনা ফেলার ভাগার, পবা উপজেলার বিভিন্ন বাণিজ্যিক পোল্ট্রি খামার পরিদর্শন করেন এবং মুরগির খামারিদের সঙ্গে কথা বলেন।      

রাজশাহী জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা নিজাম উদ্দিন জানান, কাকের মৃত্যুর কারণ বার্ড-ফ্লু শনাক্তের পর তারা রাজশাহীর পোল্ট্রি অ্যাসোসিয়েশনের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন। তবে এখন পর্যন্ত কোথাও কোনো মুরগির খামারে এই ভাইরাসের সন্ধান পাওয়া যায়নি। এর পরও তারা সতর্ক আছেন।

রাজশাহীর বোয়ালিয়া থানা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. ইয়ামিন আলী বাংলানিউজকে বলেন, এইচ-৫ এন ওয়ান (অতি ঝুঁকিপূর্ণ) মাত্রার এভিয়েন ইনফ্লুয়েঞ্জায় সংক্রমিত হয়েছিল রাজশাহীর কাকগুলো। তবে এই ভাইরাস কাকের মধ্যে কীভাবে সংক্রমিত হলো তার কারণ খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।  

তিনি বলেন, কাক সাধারণত মুরগির নাড়িভুঁড়ি খেয়ে থাকে। তাই প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, জবাই করা মুরগির উচ্ছিষ্ট থেকে কাকের মধ্যে এই ভাইরাস সংক্রমিত হয়ে থাকতে পারে। তবে আক্রান্ত মুরগিগুলো রাজশাহীর পাশ্ববর্তী কোনো জেলা থেকেও আসতে পারে। বর্তমানে তা খুঁজে বের করার চেষ্টা চলছে। এর আগে সর্বশেষ ২০১১ সালের ২ ফেব্রুয়ারি রাজশাহীর পোল্ট্রি খামারে বার্ড-ফ্লু দেখা দিয়েছিল। কিন্তু কাকের মধ্যে এত ব্যাপকহারে তা কখনো দেখা যায়নি। ওই সময় তাৎক্ষণিক ব্যবস্থাও নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু এর পর আর ভাইরাসজনিত এই রোগের অস্তিত্ব মেলেনি জানান তিনি।  

রাজশাহী সিভিল সার্জন ডা. নিলুফার ইয়াসমিন বাংলানিউজকে বলেন বার্ড-ফ্লু নিয়ে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। এ ব্যাপারে সচেতনতা দরকার। আইইডিসিআর ১২ সদস্যের তদন্ত কমিটি বিষয়টি দেখছেন। কমিটির সদস্যরা আজ তার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাত করলেও এ ব্যাপারে কিছু জানাননি।

তদন্ত করে দেখার পর চূড়ান্তভাবে কমিটি কিছু না জানানো পর্যন্ত তিনি কিছু বলতে পারবেন না। তবে বিষয়টি নিয়ে তারা সতর্ক রয়েছেন বলে জানান রাজশাহীর সিভিল সার্জন।  

এদিকে, রাজশাহী সিটি করপোরেশনের দায়িত্বপ্রাপ্ত মেয়র নিযাম উল আযীম বলেন, তারাও সতর্কতা অবলম্বন করছেন। বৃহস্পতিবার (১৮ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে তিনি প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. এফএএম আঞ্জুমান আরা বেগম ও প্রধান পরিচ্ছন্ন কর্মকর্তা শেখ মো. মামুনের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে মতবিনিময় করেছেন।

পরবর্তী করণীয় নির্ধারণে সিভিল সার্জন, প্রাণী সম্পদ অধিদফতরসহ সংশ্লিষ্ট সকলকে নিয়ে আগামী ২৪ ফেব্রুয়ারি সমন্বয় সভাও ডাকা হয়েছে বলে জানান দায়িত্বপ্রাপ্ত মেয়র।  

প্রসঙ্গত, গত ২ ফেব্রুয়ারি থেকে রামেক হাসপাতাল চত্বরে বিপুলসংখ্যক কাকের মৃত্যু হয়। এ ঘটনায় ঢাকা থেকে রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান (আইইডিসিআর), জয়পুরহাটে অবস্থিত আঞ্চলিক রোগ অনুসন্ধান কেন্দ্রের কর্মকর্তারা মৃত কাকের নমুনা সংগ্রহ করেন।

বাংলাদেশ সময়: ২১৩৬ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৮, ২০১৬
এসএস/আরআই

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।