ঢাকা, সোমবার, ৫ মাঘ ১৪৩১, ২০ জানুয়ারি ২০২৫, ১৯ রজব ১৪৪৬

জাতীয়

আলিয়ঁস ফ্রঁসেজে গুরুত্ব নেই একুশে ফেব্রুয়ারির!

বিশেষ সংবাদদাতা | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০০৯ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২০, ২০১৬
আলিয়ঁস ফ্রঁসেজে গুরুত্ব নেই একুশে ফেব্রুয়ারির!

ঢাকা: ঢাকাস্থ ফরাসি সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান আলিয়ঁস ফ্রঁসেজে গুরুত্ব পাচ্ছে না মহান একুশে ফেব্রুয়ারি। দেশের চেতনার সঙ্গে মিশে থাকা এই জাতীয় দিনটিতে সারা দেশে সব সরকারি, বেসরকারি প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকলেও খোলা রাখা হচ্ছে আলিয়ঁস ফ্রঁসেজ।

আর ক্লাশও চলবে দিনটিতে।

ফরাসি ভাষা শিক্ষা নিতে যারা এই প্রতিষ্ঠানে যাচ্ছে তাদের অনুরোধও মানেনি প্রতিষ্ঠানটি। অভিভাবকদের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে আবেদন জানানো হলেও স্রেফ জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, একুশে ফেব্রুয়ারিতে খোলাই থাকবে আলিয়ঁস ফ্রঁসেজ। যারা এতে অংশ নেবে না, তারা পিছিয়ে পড়বে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায় কেবল একুশে ফেব্রুয়ারিই নয়, গত ১৬ ডিসেম্বর মহান বিজয় দিবসেও আলিয়ঁস ফ্রঁসেজ খোলা রাখে তাদের প্রতিষ্ঠান ও শিক্ষার্থীদের ক্লাসে অংশ নিতে বাধ্য করে।

বিষয়টিতে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন অভিভাবকরা। আর শিক্ষার্থীদের মধ্যেও তৈরি হয়েছে ক্ষোভ। উদ্বিগ্ন একজন অভিভাবক বাংলানিউজকে টেলিফোনে জানিয়েছেন, সব ধরনের চেষ্টা করেও তারা আলিয়ঁস ফ্রঁসেজকে এই ক্লাস নেওয়া থেকে বিরত রাখতে ব্যর্থ হয়েছেন।

রাজধানীর মধুবাগ এলাকার ওই অভিভাবক, যার দুটি সন্তান আলিয়ঁস ফ্রঁসেজে ভাষা শিক্ষা নিচ্ছে, জানালেন, তিনি বিষয়টিতে আনুষ্ঠানিকভাবে একটি অভিযোগ দিয়েছেন। তবে প্রতিষ্ঠানটি তাদের সিদ্ধান্তে অটল।

ওই অভিভাবক বলেন, এটা ঠিক যে আমরা ছেলেমেয়েকে একটি আন্তর্জাতিক ভাষা শিখিয়ে আরও যোগ্য করে তুলতে চাই, তাই বলে আমরা তাদের নিজেদের চেতনা, ইতিহাস আর ঐতিহ্য সম্পর্কে জানার সুযোগ নষ্ট করতে পারি না।

আলিয়ঁস ফ্রঁসেজকে বাংলাদেশে তাদের প্রতিষ্ঠান পরিচালনার ক্ষেত্রে এদেশের ইতিহাস ঐতিহ্যের কথা ভুলে গেলেও চলবে না, বলেন অনেকটাই ক্ষুব্ধ এই অভিভাবক।

তিনি আরও জানালেন, গত ১৬ ডিসেম্বর মহান বিজয় দিবসেও আলিয়ঁস ফ্রঁসেজ তাদের প্রতিষ্ঠানটি খোলা রেখে ক্লাস চালিয়েছে। তখন একটি অজুহাত দেখিয়েছিলো সামনে ক্রিসমাসের বড় ছুটি তাই এই ক্লাসটি করলে তাদের সুবিধা হয়। বিষয়টি অনেক অভিভাবক সেবার মেনে নিয়েছিলো। কিন্তু তারই ধারাবাহিকতায় এবার একুশে ফেব্রুয়ারিতেও ক্লাস খোলা রাখছে। যে জন্য কোনও সুনির্দিষ্ট কারণও প্রতিষ্ঠানটি দেখাতে পারছে না। তাদের বক্তব্য, যেহেতু আগামী মার্চে পরীক্ষা তাই এই ফেব্রুয়ারিতে তাদের ক্লাস নিতে হবে।

শুক্র-শনি এবং রবি ও বুধ এই দুই সিডিউলে আলিয়ঁস ফ্রঁসেজে ভাষা শিক্ষার ক্লাস চলে। রবিবার একুশে ফেব্রুয়ারি জাতীয় ছুটির দিন হওয়াতে দিনটিতে ক্লাস না হোক এমনটাই প্রত্যাশা অভিভাবক ও শিক্ষার্থীদের।

এনিয়ে বাংলানিউজের কথা হয় আলিয়ঁস ফ্রঁসেজের গুলশান কার্যালয়ের অ্যাক্টিং ইনচার্জ আরাফাত হোসেনের সঙ্গে। তিনি জানালেন, তার সেন্টারের ৬টি কোর্সের সবগুলো ক্লাসই রোববার খোলা থাকবে। সিডিউল ক্লাস কখনোই বন্ধ করা হয় না। হোক সে একুশে ফেব্রুয়ারি বা অন্য কোনও দিন।

ঈদের দিনগুলোতেও কি ক্লাস হয়? এমন প্রশ্নে বলেন না তখন হয় না। তাহলে জাতীয় এমন দিনগুলোকে কেন গুরুত্ব দেওয়া হয় না? সে প্রশ্নে আরাফাত বলেন, ‘এটা ম্যানেজমেন্ট জানে। ’

ম্যানেজমেন্টের পক্ষে কে কথা বলতে পারবেন? সেটা জানতে চাইলে তিনি প্যাডাগুজি কো-অর্ডিনেটর ফয়জুল কবির চৌধুরীর কথা জানান।

তবে বার কয়েক ফয়জুল কবিরের এয়ারটেল নম্বরে ফোন করলেও তিনি ফোন ধরেননি। ফয়জুল কবিরকে এসএমএস-এ এ ব্যাপারে জানিয়ে রাখা হয়েছে। বাংলানিউজ তার বক্তব্য পেলেই তুলে ধরতে পারবে।

যারা ক্লাসগুলো নিচ্ছেন তাদেরও অনেকেই বাংলাদেশি এবং প্রিয়াংকা চৌধুরী নামেও একজন শিক্ষক রয়েছেন, যিনি অভিযোগকারী ওই অভিভাবকের সন্তানদের শিক্ষক হিসেবে রোববার ক্লাস নিচ্ছেন।

শিক্ষকদের টেলিফোন নম্বর দেওয়া বারণ রয়েছে বলে তার নম্বরটি বাংলানিউজকে জানাতে অপারগতা প্রকাশ করেন আরাফাত হোসেন।

বাংলাদেশি শিক্ষকরাই একুশে ফেব্রুয়ারির দিনে ক্লাস নিচ্ছেন, এটা উচিত হচ্ছে কিনা তা জানতে চাইলে আরাফাত বলেন, এটি পুরোপুরি শিক্ষকদের বিষয়। নির্দিষ্ট ১৮ কিংবা ১৯ মাসের মধ্যে তাদের কোর্স শেষ করার চাপ থাকে সে কারণে তারা হয়তো বাধ্য হন, বলেন আরাফাত।

কোর্সের শুরুতেই যখন ক্লাসের সূচি তৈরি হয় তখন কেন দিনগুলো বিবেচনা করা হয় না, সে প্রশ্নে আরাফাত বলেন এটা কখনোই করা হয়নি।

এ বিষয়ে অভিযোগকারী অভিভাবকের বক্তব্য, শুরু থেকেই সূচি নির্ধারণ করে নেওয়া হলে জাতীয় দিবসগুলোতে এমন সিদ্ধান্ত নিতে হয় না। তিনি এই আচরণকে দেশের ঐতিহ্য ও চেতনার প্রতি অালিয়ঁস ফ্রঁসেজের অবজ্ঞা বলেই দেখতে চান।

এ বিষয়ে আরাফাত অবশ্য দাবি করেন, এটা অবজ্ঞা নয়, কারণ তারা ওই দিনগুলো অফিস বন্ধ রাখেন, কেবল ক্লাশগুলোই খোলা থাকে।

শিক্ষার্থীদের জন্য এমন একটি সিদ্ধান্ত ক্ষতিকর কি না জানতে চাইলে তা মেনে নেন এই কর্মকর্তা।

বাংলাদেশ সময় ২০০৬ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২০, ২০১৬
এমএমকে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।