ঢাকা, সোমবার, ৬ মাঘ ১৪৩১, ২০ জানুয়ারি ২০২৫, ১৯ রজব ১৪৪৬

জাতীয়

ভাষার ভালোবাসায় মিশেছে দুই বাংলা

আজিজুল হক, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬১০ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২১, ২০১৬
ভাষার ভালোবাসায় মিশেছে দুই বাংলা ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

বেনাপোল (যশোর) : নো-ম্যানস ল্যান্ড। জায়গাটা কারও নয়।

কোনো দেশের ঠিকানা নেই এখানে। শুধুমাত্র ভাষার ভালোবাসার টানে এখানেই মিলন ঘটেছে দুই বাংলার ভাষাপ্রেমী মানুষের।

আজ রোববার(২১ ফেব্রুয়ারি) সীমান্তরক্ষী বিজিবি-বিএসএফের কড়া চোখের নজরদারি নেই। একই সঙ্গে উড়ছে ভারত-বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা। দুই দেশের ভাষাপ্রেমীরা গেয়ে চলেছেন, সবকটা জানালা খুলে দাও না, ওরা আসবে চুপি চুপি। যেন কাঁটাতারের বেড়া ছিঁড়ে ফেলার নিভৃত আর্জি।

একে অপরকে বুকে জড়িয়ে আপন মনে কেঁদে চলেছেন কেউ কেউ। ছড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে ফুল। বিএসএফ এবং বিজিবি জওয়ানদের সামনেই দু’দেশের মানুষ মেতে উঠছেন ভাষার ভালোবাসায়। যেন কাঁটাতারের দূরত্বটাই মুছে দিয়েছে এ দিনটি। বাংলাদেশি যুবক জড়িয়ে ধরছেন হিন্দিভাষী বিএসএফ জওয়ানকে। বুকে ব্যাজ পরিয়ে দিচ্ছেন।

সালাম,বরকত, রফিকদের স্মরণে তৈরি অস্থায়ী শহীদ মিনার বেদি ফুলের ভারে নুয়ে পড়ছে। মাইকে ভাসছে আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি, আমি কি ভুলিতে পারি। সে গানের সঙ্গে সুর মিলাচ্ছেন ভাষা প্রেমীরা। শ্রদ্ধা জানাতে আসা নারী,পুরুষ,শিশুরা ফুল ছড়িয়ে দিচ্ছেন। ঠিক যেন ঢাকার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের রুপ ধারণ করেছে।

যুবকদের অনেকেরই মাথায় কালো ফিতা, একুশের স্মারক। শিশুদের গালে লাল সবুজের  আঁকা পতাকা দেখে ভুল হয়ে যায় কে কোন দেশী। গানের পাশাপাশি চলছে নাটক, কবিতা। আলোচনা ও আবেগে দুই দেশের কয়েক হাজার মানুষের বাঁধনহারা ছেলেমানুষির কাছে যেন হার মানছে নিরাপত্তার চাদর।

কিছুক্ষণের জন্য হলেও মিলেমিশে একাকার হয়ে গিয়েছে যেন দুই বাংলা। আন্তর্জাতিক সীমারেখা মুছে জন্ম হয়েছে অন্য এক বাংলার। যার স্বপ্ন এখনও দেখেন দু’বাংলার বহু ঘর হারানো মানুষ।

দুই বাংলার মানুষের কাছে এই ছবিটা আজ খুবই পরিচিত। এই দিনটির জন্য বহু মানুষ সারা বছর অধীর আগ্রহে অপেক্ষায় থাকেন। ভিন দেশের বন্ধুকে এই একটি দিনই কাছ থেকে ছুঁয়ে দেখবার সুযোগ মেলে।

একদিকে, যশোর, খুলনা, বরিশাল, ঢাকা থেকে বেনাপোল সীমান্তে এ দিনে ছুটে এসেছেন অনেকে, তেমনই ভারতের পেট্রাপোল সীমান্তেও তিল ধারণের ঠাঁই নেই। কলকাতা সহ আশপাশের বিভিন্ন এলাকার মানুষ এসে মিলেছে নোম্যানস ল্যান্ড এলাকায়।

২০০৪ সালে বেনাপোল সরগম সংগীত একাডেমি ও ভারতের বঁনগা ২১ পালন কমিটি দুই বাংলার যৌথ একুশ পালনের এই যাত্রা শুরু করে। প্রথম বছরে যে সাড়া মিলেছিল তা প্রত্যাশাকেও ছাপিয়ে ছিল। সেই আবেগ আজও বনগাঁর পেট্রাপোল-বেনাপোল সীমান্তকে ভাসিয়ে নিয়ে চলেছে।

বেনাপোল পৌর মেয়ের আশরাফুল আলমের সভাপতিত্বে এপারে প্রধান অতিথি রয়েছেন, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহাবুবুল আলম হানিফ। আর ভারতের পক্ষে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের খাদ্য সরবরাহ মন্ত্রী শ্রী জ্যোতি প্রিয় মল্লিক।

অনুষ্ঠানের অনলাইন মিডিয়া পার্টনার দেশের শীর্ষ অনলাইন নিউজপোর্টাল বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম। ইভেন্ট অর্গানাইজার কাঠ পেন্সিল।
   
বাংলাদেশ সময়: ১৬১২ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২১, ২০১৬
পিসি

** একুশ উৎসবে শহীদ মিনারে দুই বাংলার শ্রদ্ধা
** জনতার ঢল নামছে দুই বাংলার একুশে উৎসবে
** মাতৃভাষার টানে দুই বাংলার মিলনমেলা বেনাপোলে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।