ঢাকা, সোমবার, ৬ মাঘ ১৪৩১, ২০ জানুয়ারি ২০২৫, ১৯ রজব ১৪৪৬

জাতীয়

বাংলা ভাষার রাজপথে এ কোন ভাষায় চলচ্চিত্রের প্রচারণা!

সাব্বির আহমেদ, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯২৫ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২১, ২০১৬
বাংলা ভাষার রাজপথে এ কোন ভাষায় চলচ্চিত্রের প্রচারণা! ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

ঢাকা: যে ঢাকার রাজপথ মাতৃভাষার অধিকার আদায়ে ঝরা রক্তের রঙে রাঙা। সেই ঢাকার রাজপথের দেয়ালে এখন ইংরেজি অথবা বাংলা ও ইংরেজির মিশ্রণে সৃষ্ট ‘বাংরেজি’ কিংবা আরও কোনো উদ্ভট ভাষায় চলছে চলচ্চিত্রের প্রচারণা  এরমধ্যে যে চলচ্চিত্রগুলো ‘ভাষার মাস’ উল্লেখ করে সে উপলক্ষে মুক্তির কথা উল্লেখ করছে, সেগুলোর নামও ইংরেজি অথবা বাংরেজিতে।



গত কয়েকদিনে রাজধানীর কাকরাইলের ‘রাজমনি’, মতিঝিলের ‘মধুমিতা, নয়াপল্টনের ‘জোনাকি’সহ বেশ কয়েকটি সিনেমা হল এলাকা ঘুরে দেখা যায়, চলচ্চিত্রের প্রচারণায় সাঁটানো বড় বড় বিজ্ঞাপন চিত্রে কেবল ইংরেজি আর ইংরেজি-বাংলা মেশানো নাম।

রাজমনি ঘেঁষে কাকরাইলের ভিআইপি সড়কের আশেপাশে শোভা পাচ্ছে ‘রাজা ফোরটোয়েন্টি’ নামে একটি চলচ্চিত্রের বিজ্ঞাপন। ছবির পাশে দাঁড়িয়ে একজন বলছেন, ‘শুধু নাম যে বিকৃত তা নয়, পোস্টারে তাকিয়ে দেখেন, কেমন অশ্লীল। ’ মধুমিতা সিনেমা হলের সামনেও একই অবস্থা। এখানে যে চলচ্চিত্রের বিজ্ঞাপন দেখা যাচ্ছে তার নাম ‘আন্ডার কনস্ট্রাকশন’। আর জোনাকি ঘেঁষে নয়াপল্টনের আশেপাশে যে চলচ্চিত্রের বিজ্ঞাপন দেখা যাচ্ছে তার নাম ‘সুইটহার্ট’।

ভাষার মাসে এমন কাণ্ডে বিক্ষুব্ধ ভাষাপ্রেমীরা। তাদের প্রশ্ন, বাংলার শব্দভাণ্ডারে মধুর শব্দের অভাব পড়েছে, যে জন্য চলচ্চিত্র নির্মাতারা ভিনদেশি শব্দ ব্যবহার করে নাম রাখছেন।

আরাফাত খান নামে ঢাকাই চলচ্চিত্রের একজন দর্শক বাংলানিউজকে বলেন, ‘শুধু ভাষার মাসে নয়, পুরো বছর চলচ্চিত্রের নামে ইংরেজির দাপট দেখা যায়। এমনকি পুরস্কারপ্রাপ্ত অনেক ছবির নামও ইংরেজিতে।

এই দর্শক আরও অনতিদূর পেছনের কথা মনে করিয়ে দিয়ে বলেন, ‘রোজ ডে, ভ্যালেন্টাইন ডে উদযাপন করেছি কিছুদিন আগে, এসব পাশ্চাত্যের সংস্কৃতি যত বেশি আয়োজন করবো, ইংরেজির দাপটটা ততই বাড়বে। ’
 
তবে বাঙালি সংস্কৃতির উৎসব-আয়োজনগুলো বাড়িয়ে দিলে দেশজ সংস্কৃতি ও ভাষায় ইংরেজির দাপট কমে যাবে বলে মন্তব্য করেন তিনি।

এ নিয়ে বাংলানিউজের কথা হয় এবারের বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে একুশে পদকপ্রাপ্ত ড. হায়াৎ মামুদের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘এটা আমাদের জন্য একটি জাতীয় লজ্জা ছাড়া আর কিছু নয়। বাংলা ভাষার চল আমরা হারিয়ে ফেলছি। যে কারণে চলচ্চিত্রের নাম দিচ্ছি ইংরেজি ভাষায়। ’

ভাষা ও বানান বিশেষজ্ঞ হায়াৎ মামুদ বলেন, ‘আমাদের অবস্থাটা এখন দাঁড়িয়েছে এমন যে, আগে ইংরেজি শেখো, তারপরে বাংলা। আর ভুল হলেও ইংরেজি বলতে হবে, এ রকম প্রথাও দাঁড়িয়ে গেছে। ’

তবে এজন্য চলচ্চিত্র পরিচালকদের পুরোপুরি দোষ না দিয়ে তিনি বলেন, ‘সমাজ যেটা চায় তারা সেটা দেন। মানুষের মতিগতি বুঝেই চলচ্চিত্রের এমন নাম দিচ্ছেন পরিচালকরা। ’

দেশজ সংস্কৃতিতে ভিনদেশি ভাষার এ দাপট জাতি হিসেবে আমাদের কপটতার পরিচয় দিচ্ছে বলে মনে করেন খ্যাতিমান কথাসাহিত্যিক হাসান আজিজুল হক।

আলাপ করলে তিনি বাংলানিউজকে বলেন, ‘আমরা ৫২-এর ২১ ফেব্রুয়ারি স্মরণে উৎসব করি। কিন্তু সর্বস্তরে বাংলা চালু করা নিয়ে জোর দেই না। এটা আমাদের প্রশাসন করে না, সরকারও করে না। ’

বাংলাদেশ সময়: ১৯১৮ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২১, ২০১৬
এসএ/এইচএ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।