ঢাকা, সোমবার, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

নওয়াপাড়ায় পানিতে ভিজে ৫ হাজার বস্তা সার নষ্ট  

উত্তম ঘোষ, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩১১ ঘণ্টা, আগস্ট ২৯, ২০১৬
নওয়াপাড়ায় পানিতে ভিজে ৫ হাজার বস্তা সার নষ্ট   ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

নওয়াপাড়া (যশোর) থেকে ফিরে: যশোরের নওয়াপাড়া উপজেলায় বিদেশ থেকে আমদানি করা কমপক্ষে পাঁচ হাজার বস্তা ইউরিয়া সার বৃষ্টির পানিতে ভিজে নষ্ট হয়ে গেছে।

২১ ও ২২ আগস্ট পানিতে এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।

এতে নওয়াপাড়া পৌরসভার পাঁচকবর ও আকতার ঘাট এলাকায় পরিবেশ দূষণ হচ্ছে।  

স্থানীয়রা জানান, পানিতে ভিজে সার জমাট বেঁধে গেছে, ওজনে কমে গেছে। এছাড়া নষ্ট হয়েছে এর গুণগত মান। এ অবস্থায় নষ্ট ইউরিয়া সার বাফার গুদামে পাঠাচ্ছেন সংশ্লিষ্টরা। ওই সারের গুদাম থেকে ২৮ ও ২৯ আগস্ট ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ ও যশোর বাফার গুদামে পাঠানো হয়েছে। গুণগত মান যাচাই না করে এ সার বিক্রি করলে ক্ষতিগ্রস্ত হবে কৃষক।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, সরকারি ব্যবস্থাপনায় বেসরকারি আমদানিকারকদের মাধ্যমে সৌদি আরব, কাতার ও চীন থেকে ইউরিয়া সার আমদানি করে বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ কর্পোরেশন (বিসিআইসি)। এ সার পরিবহনের জন্য বিসিআইসি ঠিকাদার ‘সাউথ ডেল্টা শিপিং কমপ্লেক্স’কে নিয়োগ দিয়েছে। তবে নিজেরা এ সার পরিবহন না করে খুলনার খান ট্রান্সপোর্ট নামে একটি প্রতিষ্ঠানকে সাব ঠিকাদার হিসেবে নিয়োগ করেছে সাউথ ডেল্টা শিপিং কমপ্লেক্স। মাস তিনেক আগে এসব সার সমুদ্র থেকে লাইটারেজ জাহাজে করে নওয়াপাড়া নৌ-বন্দর দিয়ে ওই গোডাউনে রাখা হয়।  

সরেজমিন দেখা গেছে, পাঁচকবর গোডাউন এলাকায় বাতাসের সঙ্গে মিশে আছে ইউরিয়া সারের ঝাঁঝালো গন্ধ। গোডাউনের আশপাশের গাছ-পালা মরে যাচ্ছে, অতিরিক্ত নাইট্রোজেনের গন্ধে দু’টি শিশু অসুস্থ হয়ে পড়েছে। নিঃশ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে স্থানীয়দের। ব্যাঙ ও পিঁপড়াসহ মাটিতে থাকা পোকামাকড় মরে যাচ্ছে। সব মিলিয়ে এ দু’টি এলাকার মানুষ অতিষ্ঠ হয়ে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পৌরসভায় লিখিত অভিযোগ করেছেন।

পাঁচকবর গ্রামের জুয়েল হোসেনের ছেলে পাভেল হোসেন আবির (০৪) ইউরিয়ার ঝাঁঝালো গন্ধে অসুস্থ হয়ে পড়ে। তাকে চিকিৎসা দিয়ে নানার বাড়িতে পাঠানো হয়েছে। এছাড়া একই এলাকার আলাউদ্দিন শেখের মেয়ে অর্পিতা (১০) অসুস্থ হয়ে স্থানীয় ক্লিনিকে চিকিৎসাধীন।  

স্থানীয় প্রিন্স বাংলানিউজকে বলেন, পানিতে ভেজা ইউরিয়ার গন্ধে প্রায় এক সপ্তাহ ধরে পাঁচকবর এলাকায় থাকা মুশকিল হয়ে পড়েছে। ওই গোডাউনের আশপাশের গাছ-গাছালিও মরতে শুরু করেছে। স্থানীয়রা পৌরসভায় অভিযোগ করেও সুফল পাচ্ছে না।  

তিনি আরও বলেন, পাঁচকবর এলাকার সেকেন্দার আলীর কাছ থেকে ভাড়া নিয়ে সার গুদামজাত করেছে পরিবহন ঠিকাদার। তবে ইঞ্জিনিয়ারিং প্ল্যান না মেনে কোনো রকমে ইটের গাথুনি দিয়ে ওই গোডাউন তৈরি করা হয়েছে। ফলে একটু বৃষ্টি হলেই পানি ভেতরে প্রবেশ করে।  

সার পরিবহনের দায়িত্বে থাকা সাব ঠিকাদার ‘খান ট্রান্সপোর্ট এজেন্সির’ মালিক মো. ইসমাইল হোসেন খান বাংলানিউজকে বলেন, বাফার গোডাউনগুলোতে জায়গা না থাকায় ওই সার পাঠাতে দেরি হয়েছে। আমরা বেছে বেছে ভালো সার সরবরাহ করছি। নষ্ট সার কিংবা ওজনে ফাঁকি দেওয়ার সুযোগ নেই। সার নষ্ট হওয়ায় আমরা অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছি।

তিনি আরো বলেন, পানিতে ভিজে সার ছড়িয়ে পড়ায় স্থানীয়দের কিছুটা সমস্যা হচ্ছে। যতো দ্রুত সম্ভব আমরা ভালো সার বাফার গুদামে পাঠাবো।

স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলর ওয়াদুদ শেখ বাংলানিউজকে বলেন, স্থানীয়দের আবেদন পেয়ে পৌরসভা থেকে দুইদিন আগে সংশ্লিষ্ট সার বহনকারী ঠিকাদারকে ক্ষতিপূরণ দিতে বলা হয়েছে। আমার বাড়ি পাঁচকবর এলাকায় হওয়ায় খুবই দুর্ভোগে পড়েছি। রাত-দিন ২৪ ঘণ্টা ঝাঁঝালো উৎকট গন্ধ বের হচ্ছে। যা দুপুরের প্রখর রোদে বেড়ে যায়। ফলে সবসময় ঘরের দরজা-জানালা বন্ধ রাখা হচ্ছে।  

আগস্টের শুরুতে নওয়াপাড়ায় ভৈরব নদের জোয়ারের পানিতে তলিয়ে যায় প্রায় তিন হাজার বস্তা ইউরিয়া সার। নবাব অ্যান্ড কোং নামে একটি প্রতিষ্ঠান প্রায় সাত মাস আগে ওই সার নওয়াপাড়া ব্রাদার্স ঘাটে ড্যাম্পিং করে রাখে। এ কয়েক মাসে রোদ-বৃষ্টিতে সারের গুণগত মান নষ্ট হয়ে গেছে।

বাংলাদেশ সময়: ১২৫৪ ঘণ্টা, আগস্ট ২৯, ২০১৬
এসআই 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।