ঢাকা, সোমবার, ১৩ মাঘ ১৪৩১, ২৭ জানুয়ারি ২০২৫, ২৬ রজব ১৪৪৬

জাতীয়

বাংলানিউজকে ভুটানের মন্ত্রী

পরের বার সপরিবারে সোজা যাবো কক্সবাজারে

জাহিদুর রহমান, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৮১৮ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৫, ২০১৬
পরের বার সপরিবারে সোজা যাবো কক্সবাজারে লিওনপো ডি এন দুঙ্গায়েল/ছবি: ইমন দেওয়ান

ঢাকা: বাংলাদেশ আসলেই চমৎকার সুন্দর একটি দেশ। যতবারই আসি।

ততবারই চোখ জুড়িয়ে যায়। সত্যিই অসম্ভব সুন্দর দেশটি। তেমনি দেশটির মানুষ ও আতিথেয়তা। এবার কক্সবাজার গেলাম। অপরূপ নৈসর্গিক সৌন্দর্য। বিশ্বের দীর্ঘতম সৈকত। আমি মুগ্ধ। পরের বার যখন আসবো। তখন অবশ্যই গিন্নিকে নিয়ে আসবো। সেই সৌন্দর্য ভাগাভাগি করে নিতে। অবশিষ্ট সৌন্দর্য উপভোগ করতে।

বাংলানিউজকে একান্তে এ কথাই বলছিলেন ভুটানের তথ্য ও যোগাযোগমন্ত্রী লিওনপো ডি এন দুঙ্গায়েল।

দুঙ্গায়েল একইসঙ্গে সংসদ সদস্য ও ভুটানের পিপলস ডেমোক্রেটিক পার্টির প্রভাবশালী সদস্য।

বাংলাদেশের ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের ২০তম জাতীয় সম্মেলনে অতিথি হয়ে দেশটিতে আসেন সাংবিধানিক রাজতন্ত্র ও সংসদীয় গণতন্ত্রের দেশ ভুটানের এই মন্ত্রী।

তবে আওয়ামী লীগের সম্মেলন ছাড়াও চলতি সফরে দুঙ্গায়েল যোগ দেন বেশ কিছু কর্মসূচিতে।

গত ২৩ অক্টোবর বিদেশি অতিথিদের সঙ্গে দুঙ্গায়েল সাভারে যান জাতীয় স্মৃতিসৌধে। সেখানে শ্রদ্ধাঞ্জলি অর্পণের মাধ্যমে বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধে শহীদ, জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করেন তিনি।

সেখানেই একান্তে কথা বলেন বাংলানিউজের সঙ্গে। আলাপচারিতায় উঠে আসে রাজনীতি, অর্থনীতি, তথ্য প্রযুক্তি, যাতায়াতসহ নানা বিষয়।

বাংলাদেশে এটা লিওনপো ডি এন দুঙ্গায়েলের তৃতীয় সফর। তিনি বাংলানিউজকে জানান, প্রথম সফরে যখন যশোরে গিয়েছিলেন, তখন তেমনভাবে এদেশ দেখা হয়নি। দ্বিতীয় সফরে ঢাকা। সেটাও ছিলো রাজধানীকেন্দ্রিক।

সেই সফরের স্মৃতির ঝাঁপি খুলে দুঙ্গায়েল বলেন, চলতি বছরের জুলাই মাসে আমার ওই সফরে ভুটান সরকারের ‘ডিপার্টমেন্ট অব ইনফরমেশন টেকনোলজি অ্যান্ড টেলিকম (ডিআইটিটি)’ এর সঙ্গে এটুআই প্রোগ্রামের সমঝোতা স্মারক (জিটুজি) স্বাক্ষরিত হয়। যার আওতায় বাংলাদেশ সরকার ভুটান সরকারকে মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুম, ডিজিটাল সেন্টার, ই-হেলথ, ই-পেমেন্ট, পোর্টাল, সেবা পদ্ধতি সহজীকরণ, তথ্য-প্রযুক্তি প্রশিক্ষণ ও গভর্নমেন্ট এন্টারপ্রাইজ আর্কিটেকচার বিষয়ে সহযোগিতা প্রদান করছে।

“তবে এবারের সফরকে আমি মনে করছি স্মরণীয়। কারণ সফরের শুরুতে যোগ দিয়েছি ডিজিটাল ওয়ার্ল্ড আইটি এক্সপোতে। সেই অভিজ্ঞতাও ছিলো অসাধারণ। দ্বিতীয় কর্মসূচি ছিলো ঢাকার ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে। যেখানে আওয়ামী লীগের সম্মেলনের আসর বসেছিলো। আমি ব্যক্তিগতভাবে নিজেকে সম্মানিত ও গর্বিত বোধ করছি ওই সম্মেলনে যোগ দিতে পেরে। ”

প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ বিনির্মাণের ভূয়সী প্রশংসাও করেন তিনি।

দুঙ্গায়েল বলতে থাকেন, তৃতীয় কর্মসূচি সাভারে জাতীয় স্মৃতিসৌধে। এখানে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে পেরে আমি গর্বিত।

“বাংলাদেশ ও ভুটানের বন্ধুত্ব চিরদিনের। ভুটান সেই দেশ, যে মহান স্বাধীনতা সংগ্রামে বাংলাদেশকে প্রথম স্বীকৃতি দিয়েছিলো। এখানেও আমাদের অনুভূতি জড়িয়ে আছে। অনেক আত্মত্যাগ আর অনেক রক্তের বিনিময়ে এই দেশের স্বাধীনতা। বাংলাদেশ তার পূর্বপুরুষদের জন্যে গর্বিত। যাদের আত্মত্যাগের বিনিময়ে আজ এই দেশ। যারা ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা সংগ্রামে নিজেদের আত্মত্যাগের মাধ্যমে নতুন একটি পতাকা তুলে দিয়েছিলো। তাদের সেই অবদান অসামান্য, বীরোচিত। আমরা সবিনয়ে শ্রদ্ধা জানাই সেইসব বীর শহীদদের। ”

ভুটানের এ তথ্য ও যোগাযোগমন্ত্রী বলেন,বাংলাদেশ তার উদ্ধৃত্ত ইন্টারনেট ব্যান্ডউইথ ভারতে রপ্তানি করছে। আমরাও সেটা কিনতে চাই। আমরা সরকারকে নিজেদের আগ্রহের কথা বলেছি। এর অংশ হিসেবে চলতি সফরেই আমি কক্সবাজার শহরের ঝিলংজায় স্থাপিত সাবমেরিন কেবল ল্যান্ডিং স্টেশন পরিদর্শন করেছি।

এটা এখনো আলাপ-আলাচনার প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে জানিয়ে তিনি আরও বলেন, কোন রুট দিয়ে এটা যাবে তাও নির্ধারিত হয়নি এখনো। তবে সম্ভাব্য রুট হিসেবে আমরা বলছি, কক্সবাজার থেকে আখাউড়া। সেখান থেকে তামাবিল-আগরতলা–মেঘালয়-গৌহাটি হয়ে তা তথ্য প্রযুক্তির মহাসড়ক ভুটানে প্রবেশ করতে পারে।

আলাপচারিতায় উঠে আসে বাংলাদেশ, ভারত, নেপাল ও ভুটান (বিবিআইএন)- এই চার দেশের মধ্যে যান চলাচলের বিষয়টি।

ঢাকঢোল পিটিয়ে চুক্তি স্বাক্ষর ও চার দেশের মধ্যে ফ্রেন্ডশিপ মোটর শোভাযাত্রা হলেও চুক্তি বাস্তবায়নে এখনো বাধা ভুটান। ভুটানের সংসদ অনুমোদন না করায় চলতি বছর যান চলাচল শুরু হবে কিনা তা নিয়ে-ও সংশয় রয়েছে। থমকে রয়েছে সকল আয়োজন।

এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে ভুটানের তথ্য ও যোগাযোগ মন্ত্রী বলেন, নিম্নকক্ষে বিষয়টির অনুমোদন হয়েছে। এখন উচ্চকক্ষে অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে। আগামী নভেম্বরে ভুটানের উচ্চকক্ষের অধিবেশনে চুক্তি অনুমোদন করা হলে ডিসেম্বর নাগাদ যান চলাচল শুরু হবে বলে আশা করছি।

ভুটানি মন্ত্রী বলেন, বিশ্বজুড়ে সন্ত্রাস এখন বড় ইস্যু। বাংলাদেশও বিষয়টির ওপর অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়েছে। একসময় ভারত সীমান্তে ভুটান উলফার মতো বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠনের সন্ত্রাসের কবলে পড়েছিলো। তবে সেসময় মহামান্য রাজার কৌশল আর প্রচেষ্টায় ভুটান এখন শান্তির দেশ।

সড়ক পথে পর্যটকদের ভুটান ভ্রমণে নানা সমস্যার কথাটি তুলতেই লিওনপো ডি এন দুঙ্গায়েল তা স্বীকার করে নেন। বলেন, বাংলাদেশ ও ভুটানের মাঝে ভারতের ভূখণ্ড থাকায় ভারতের ভিসা নিয়ে পর্যটকদের ভুটানে প্রবেশ করতে হয়। বেশ বিড়ম্বনার মুখে পড়তে হয়। বিষয়টা আমাদের জানা আছে। আমরা এ ব্যাপারে ভারতের সঙ্গে কথা বলছি। সমস্যার সমাধানে কাজ চলছে।

“পৃথিবীর দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকতের মুগ্ধতা এখনও আমাকে আচ্ছন্ন করে রেখেছে। ” 

এছাড়াও কক্সবাজারের রামুর জোয়ারিয়ানালা ইউনিয়নের উত্তর মিঠাছড়ি গ্রামে প্রতিষ্ঠিত ভুবন শান্তি একশ’ ফুট সিংহ শয্যা গৌতম বুদ্ধ মূর্তি ও বিমুক্তি বিদর্শন ভাবনা কেন্দ্র পরিদর্শনের স্মৃতি হাতড়ে তিনি বলেন, সেখানে অনেক কিছুই দেখার আছে। প্রকৃতির সৌন্দর্যের মাঝে আকর্ষণীয় রিসোর্টসহ বিভিন্ন পর্যটন কেন্দ্র। সত্যিই সময়টা ছিলো উপভোগ করার মতো। এর অনেক কিছুই এখনও দেখা হয়নি। দুই চোখ দিয়ে সেসব উন্মোচন করতে চাই। তবে অবশ্যই পরের বার। একা কিংবা ঢাকা নয়, সোজা যাবো কক্সবাজারে, সপরিবারে।

বাংলাদেশ সময়: ০৮১১ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৫, ২০১৬
এইচএ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।